‘খুবই কষ্টে আছি ভাতের ক্ষিদা পাইছে, আপনেরা ভাত দিবার পাইবেন’

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র ও ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলে কমছে না বানভাসিদের দুর্ভোগ। এখনো ব্রহ্মপূত্র নদের বিভিন্ন চরে বানভাসিরা চরম দুর্ভোগ সহ্য করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। গতকাল দুপুরে সরজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপূত্র নদের পোড়ার চরে গিয়ে দেখা গেছে এখানকার প্রায় ৮৫টি পরিবার এখনও পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রতিটি বাড়িতে কোমড় সমান পানি হওয়ায় ছোট ছোট নৌকায় সন্তানদেরকে নিয়ে সেখানেই বসত গড়েছেন তারা। দিনরাত পার করছেন গত ১৪/১৫ দিন ধরে। পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন পানিবন্দী পরিবারগুলো।

বাড়ি-ঘরে অথৈ পানি থাকায় রান্না-বান্না করতে না পেরে শুকনো খাবার খেয়ে কোন রকমে দিন পার করছেন বলে জানালেন এই চরের অধিবাসী বিলকিস বেগম। স্বামীসহ দুই সন্তান আর শাশুরিকে নিয়ে গত ১২ দিন ধরে নৌকায় অবস্থান করছেন। ঠিকমত একবেলা আহার জুটছে না। ফলে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন পরিবারটি। বিলকিস বেগম আরও জানান, রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় ভাতের নাগাল পাচ্ছি না। ছেলে-মেয়েরা এক মুঠ ভাতের জন্য কান্নাকাটি করছে। তাদের আবদার পুরণ করতে পারছি না। এদিকে পানিও কমছে না। জানি না আর কতদিন এভাবে কষ্টের মধ্যে থাকতে হবে।

বিলকিসের মেয়ে আঁখি জানায়, ‘খুবই কষ্টে আছি আংকেল। ভাতের ক্ষিদা পাইছে।’ আপনেরা ভাত দিবার পাইবেন। সবাই চিড়া নিয়া আসে। আমাগো ভাত দরকার। একই চরের মাজেদা বেগম, মমেনা বেগমসহ অনেকেই তাদের দুর্ভোগের বর্ণনা দেন। পোড়ারচরের জামে মসজিদের ইমাম মনসুর আলী জানান, গত ১৪/১৫ দিন ধরে আমরা এই চরের প্রায় ৮৫টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করছি। এখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাধ্য হয়ে বানের পানি সবাই খাচ্ছি। পায়খানা তলিয়ে গেছে। বাড়ীর বয়ষ্ক মানুষ আর বউ-ঝিদের খুব সমস্যা হইছে। তিনি আরও জানান, পানি বেশি থাকায় গত শুক্রবার মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারিনি। গতকাল শুক্রবার পানি কিছুটা কমলেও মানুষের নৌকা নিয়ে কোন রকমেই শুক্রবারের নামাজটা আদায় করলাম! তিনি নামাজ শেষে বানভাসিদের অসহনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগ কমাতে বিশেষ মোনাজাত করেন ইমাম মনসুর আলী।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৩১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পরে এক লাখ ৫২ হাজার ৩৩৮ জন মানুষ। এতে বন্যায় তলিয়ে যায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমিন। মাছের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার। বন্যায় পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় মোট ১২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। বন্যায় ৯৪৪টি নলকুপ ও ৩০২টি লেট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রবিবার, ২৬ জুন ২০২২ , ১২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

‘খুবই কষ্টে আছি ভাতের ক্ষিদা পাইছে, আপনেরা ভাত দিবার পাইবেন’

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুড়িগ্রাম

image

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র ও ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলে কমছে না বানভাসিদের দুর্ভোগ। এখনো ব্রহ্মপূত্র নদের বিভিন্ন চরে বানভাসিরা চরম দুর্ভোগ সহ্য করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। গতকাল দুপুরে সরজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপূত্র নদের পোড়ার চরে গিয়ে দেখা গেছে এখানকার প্রায় ৮৫টি পরিবার এখনও পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রতিটি বাড়িতে কোমড় সমান পানি হওয়ায় ছোট ছোট নৌকায় সন্তানদেরকে নিয়ে সেখানেই বসত গড়েছেন তারা। দিনরাত পার করছেন গত ১৪/১৫ দিন ধরে। পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন পানিবন্দী পরিবারগুলো।

বাড়ি-ঘরে অথৈ পানি থাকায় রান্না-বান্না করতে না পেরে শুকনো খাবার খেয়ে কোন রকমে দিন পার করছেন বলে জানালেন এই চরের অধিবাসী বিলকিস বেগম। স্বামীসহ দুই সন্তান আর শাশুরিকে নিয়ে গত ১২ দিন ধরে নৌকায় অবস্থান করছেন। ঠিকমত একবেলা আহার জুটছে না। ফলে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন পরিবারটি। বিলকিস বেগম আরও জানান, রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় ভাতের নাগাল পাচ্ছি না। ছেলে-মেয়েরা এক মুঠ ভাতের জন্য কান্নাকাটি করছে। তাদের আবদার পুরণ করতে পারছি না। এদিকে পানিও কমছে না। জানি না আর কতদিন এভাবে কষ্টের মধ্যে থাকতে হবে।

বিলকিসের মেয়ে আঁখি জানায়, ‘খুবই কষ্টে আছি আংকেল। ভাতের ক্ষিদা পাইছে।’ আপনেরা ভাত দিবার পাইবেন। সবাই চিড়া নিয়া আসে। আমাগো ভাত দরকার। একই চরের মাজেদা বেগম, মমেনা বেগমসহ অনেকেই তাদের দুর্ভোগের বর্ণনা দেন। পোড়ারচরের জামে মসজিদের ইমাম মনসুর আলী জানান, গত ১৪/১৫ দিন ধরে আমরা এই চরের প্রায় ৮৫টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করছি। এখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাধ্য হয়ে বানের পানি সবাই খাচ্ছি। পায়খানা তলিয়ে গেছে। বাড়ীর বয়ষ্ক মানুষ আর বউ-ঝিদের খুব সমস্যা হইছে। তিনি আরও জানান, পানি বেশি থাকায় গত শুক্রবার মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারিনি। গতকাল শুক্রবার পানি কিছুটা কমলেও মানুষের নৌকা নিয়ে কোন রকমেই শুক্রবারের নামাজটা আদায় করলাম! তিনি নামাজ শেষে বানভাসিদের অসহনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগ কমাতে বিশেষ মোনাজাত করেন ইমাম মনসুর আলী।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৩১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পরে এক লাখ ৫২ হাজার ৩৩৮ জন মানুষ। এতে বন্যায় তলিয়ে যায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমিন। মাছের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার। বন্যায় পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় মোট ১২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। বন্যায় ৯৪৪টি নলকুপ ও ৩০২টি লেট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।