জমি নিয়ে বিরোধে মসজিদে তালা

নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের হযরত ওমর (রাঃ) জামে মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায় দুইদিন যাবত আজান-নামাজ বন্ধ রয়েছে। মসজিদে যাতায়াতের জন্য সরকারী ৪ শতক জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ওই জমির দখলদার আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার মসজিদে তালা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তালা বদ্ধ মসজিদে ইবাদত-বন্দেগীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি এনামুল হক বাদী হয়ে শনিবার রাতে নওগাঁ সদর মডেল থানায় আব্দুর রাজ্জাকসহ ৫ জনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি মসজিদটি উচ্ছেদসহ ভাংচুরের চেষ্টা এবং মূল দরজায় এক এক করে ৩টি তালা লাগানোর অভিযোগ করেন। আব্দুর রাজ্জাকের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশিয় অস্ত্রসহ মসজিদের আশেপাশে পায়তারা করছে এবং মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ধাওয়া করে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ মসজিদে আযান দেয়া এবং নামাজ পড়তে পারেনি বলেও তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন। অভিযোগর অনুলিপি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করা হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, দেবীপুর গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ের কাছে বোয়ালিয়া-দেবীপুর সড়কের পাশে দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তির দান করা ৭ শতক জমির ওপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদের পূর্বে পাশে ৪ শতক সরকারি জমি রয়েছে। ৩৭৩ নম্বর দাগের ওই জমির খতিয়ানে জনগণের যাতায়াতের জন্য সরকারি ডহর (রাস্তা) নামে উল্লেখ রয়েছে। নতুন মসজিদ নির্মাণের পর এলাকার মুসল্লিরা মসজিদে যাতায়াতের জন্য ওই জমিতে মাটি ফেলে উঁচু করে রাস্তা ব্যবহার করতে চাইলে দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক ওই জমি তাঁর ব্যক্তি মালিকানাধীন দাবী করে গ্রামবাসীকে বাধা দেন এবং গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয়ে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দেন। এক পর্যায়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে মসজিদটির চলাচলের রাস্তা তিনি বন্ধ করে দেন এবং সর্বশেষ তিনি মসজিদটিতেই তালা মেরে দিলেন।

নওগাঁ সদর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত (২৪মে) সরকারি জমি দখলমুক্ত করা ও অবৈধভাবে ভোগদখল করার জন্য আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এলাকাবাসীর পক্ষে হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি লিখিতভাবে আবেদন করেন। ওই সময় স্থানীয় এবং সদর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে একাধিক কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে আব্দুর রাজ্জাকের দখলে থাকা সরকারী ৪শতক জমি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল যা এখনো তিনি ছেড়ে দেননি।

এবিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক সরকারী খাস জমির প্রসঙ্গে এড়িয়ে বলেন, মোফাজ্জল হোসেনের মসজিদের নামে দান করা জমির দলিলে অনেক ভুল আছে। নামাজেও অনেক ভুল আছে। ওটা না কি আহলে হাদিসের মসজিদ আবার শুনি হানাফি মাযহাবের মসজিদ। এসব বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। ওই পক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় চেয়ারম্যান নিজে এসে মসজিদে তালা মেরেছে যাতে তারা চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বাধ্য হয়। তিলকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম তার সেলফোন (০১৭১১৪১৪৬৬৬) রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি জমি দখলমুক্তের বিষয়ে সদর সহকারী কমিশনার(ভূমি)কে ইতোমধ্যে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই সেটি দখলমুক্ত করা হবে।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

জমি নিয়ে বিরোধে মসজিদে তালা

জেলা বার্তা পরিবেশক, নওগাঁ

নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের হযরত ওমর (রাঃ) জামে মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায় দুইদিন যাবত আজান-নামাজ বন্ধ রয়েছে। মসজিদে যাতায়াতের জন্য সরকারী ৪ শতক জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ওই জমির দখলদার আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার মসজিদে তালা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তালা বদ্ধ মসজিদে ইবাদত-বন্দেগীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি এনামুল হক বাদী হয়ে শনিবার রাতে নওগাঁ সদর মডেল থানায় আব্দুর রাজ্জাকসহ ৫ জনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি মসজিদটি উচ্ছেদসহ ভাংচুরের চেষ্টা এবং মূল দরজায় এক এক করে ৩টি তালা লাগানোর অভিযোগ করেন। আব্দুর রাজ্জাকের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশিয় অস্ত্রসহ মসজিদের আশেপাশে পায়তারা করছে এবং মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ধাওয়া করে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ মসজিদে আযান দেয়া এবং নামাজ পড়তে পারেনি বলেও তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন। অভিযোগর অনুলিপি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করা হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, দেবীপুর গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ের কাছে বোয়ালিয়া-দেবীপুর সড়কের পাশে দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তির দান করা ৭ শতক জমির ওপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদের পূর্বে পাশে ৪ শতক সরকারি জমি রয়েছে। ৩৭৩ নম্বর দাগের ওই জমির খতিয়ানে জনগণের যাতায়াতের জন্য সরকারি ডহর (রাস্তা) নামে উল্লেখ রয়েছে। নতুন মসজিদ নির্মাণের পর এলাকার মুসল্লিরা মসজিদে যাতায়াতের জন্য ওই জমিতে মাটি ফেলে উঁচু করে রাস্তা ব্যবহার করতে চাইলে দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক ওই জমি তাঁর ব্যক্তি মালিকানাধীন দাবী করে গ্রামবাসীকে বাধা দেন এবং গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয়ে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দেন। এক পর্যায়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে মসজিদটির চলাচলের রাস্তা তিনি বন্ধ করে দেন এবং সর্বশেষ তিনি মসজিদটিতেই তালা মেরে দিলেন।

নওগাঁ সদর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত (২৪মে) সরকারি জমি দখলমুক্ত করা ও অবৈধভাবে ভোগদখল করার জন্য আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এলাকাবাসীর পক্ষে হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি লিখিতভাবে আবেদন করেন। ওই সময় স্থানীয় এবং সদর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে একাধিক কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে আব্দুর রাজ্জাকের দখলে থাকা সরকারী ৪শতক জমি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল যা এখনো তিনি ছেড়ে দেননি।

এবিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক সরকারী খাস জমির প্রসঙ্গে এড়িয়ে বলেন, মোফাজ্জল হোসেনের মসজিদের নামে দান করা জমির দলিলে অনেক ভুল আছে। নামাজেও অনেক ভুল আছে। ওটা না কি আহলে হাদিসের মসজিদ আবার শুনি হানাফি মাযহাবের মসজিদ। এসব বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। ওই পক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় চেয়ারম্যান নিজে এসে মসজিদে তালা মেরেছে যাতে তারা চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বাধ্য হয়। তিলকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম তার সেলফোন (০১৭১১৪১৪৬৬৬) রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি জমি দখলমুক্তের বিষয়ে সদর সহকারী কমিশনার(ভূমি)কে ইতোমধ্যে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই সেটি দখলমুক্ত করা হবে।