পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়ার ভিড়, রাজধানীতে যানজট

প্রায় ৪০ মিনিট মৎস্যভবন সিগন্যালে বাসে বসা অনেকের মধ্যে একজন শরীফা বানু। দাঁড়িয়ে থাকা বাসে শরীফা বানুর ৩ বছরের বাচ্চা সিয়াম আর থাকতে চাইছে না। একদিকে গরম অন্যদিকে তীব্র জানজট, সব মিলিয়ে অস্থির হয়ে বাস থেকে নেমে পড়েন শরীফা। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করেন। গুলিস্তান থেকে বাস ধরবেন নারায়ণগঞ্জের। এভাবে অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকা বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন।

বাবুল মিয়া নামের এক বাসযাত্রী বলেন, ‘ফার্মগেট থেকে বাসে চড়েছি দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে, এখনও মৎস্য ভবন পার করতে পারিনি। মতিঝিলে কখন পৌঁছাবে সেটাই ভাবতেছি।’ তার কথা শুনে বাসে চালক বলেন, ‘ভিআইপি যাইতেছে এজন্য জ্যাম লাগছে।’

মৎস্যভবনে ব্যস্ত একজন ট্রাফিক সদস্যকে জ্যামের কারণ জানতে চাইলে বলেন, আজকে অনেকেই পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছে। প্রচুর চাপ, বিশেষ করে মতিঝিল, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী, চানখারপুল, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মগবাজার ও মগবাজার ফ্লাইওভারে যানবাহনের বাড়তি চাপ।

উদ্বোধন শেষে গতকাল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে পদ্মা সেতু। সকাল ৬টা থেকে সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়। সকাল থেকেই যানবাহনের চাপ ছিল সেতুর দুই প্রান্তে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের প্রথম দিন কেউ যাচ্ছেন ঘুরতে, উচ্ছ্বাস নিয়ে কেউ রওনা হয়েছেন বাড়িতে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। রাজধানীর কাকরাইল, চানখারপুল, ওয়ারী ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থানে জানজটের কারণে দাঁড়িয়ে ছিল যানবাহন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। গতকাল সকাল থেকেই মাওয়া-পদ্মা সেতুগামী যানবাহনের চাপ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে ও নিচে।

অন্য দিনের তুলনায় এসব এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া জাহেরী তানিন বলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার সময় বাড়তি চাপ ছিল। দুপুরে এখানে দীর্ঘ সময় যানচলাচল প্রায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এর প্রভাবে রাজধানীর মতিঝিল, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী, চানখারপুল, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মগবাজার ও মগবাজার ফ্লাইওভারে যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিল স্পষ্ট। তানিন বলেন, ‘মোটর বাইক দিয়েও দ্রুত রাস্তা পার হতে পারিনি। এ রাস্তা সে রাস্তায় গেছি কিন্তু আমার মতো অনেকেই অতি আগ্রহে স্থবির হয়ে আছি।’

স্ত্রী সন্তান নিয়ে বরিশালের ইউসুফ রানা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি এতটাই এক্সসাইটেড বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন। বাড়ি যাওয়ার ঝক্কির কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনকে সময় যেতে পারতাম না। আমাদের কষ্টের যাত্রায় যেন প্রাণ ফিরেছে। এবার ঈদে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাব, এ কথা ভাবতে পারিনি। ঈদের আগেই একবার ঘুরতে যাচ্ছি। আর যাবই যদি তবে দেরিতে কেন। কেন প্রথম দিন নয়। তাই এই যাত্রা। তিনি বলেন, কিন্তু এতটা চাপ থাকবে বুঝতে পারিনি। যানবাহনের চাপ বোঝা যাচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া, সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়া, উৎসুক মানুষ ও যানবাহন বেড়ে যাওয়ার চাপ পড়েছে রাজধানীতে।

যোগাযোগ করা হলে লালবাগ ট্রাফিক বিভাগের ফুলবাড়িয়া জোনের সহকারী কমিশনার সালাহউদ্দিন জানান, সকাল থেকেই বাড়তি চাপ। ফুলবাড়িয়ায় ফ্লাইওভারের নিচে ওপরে উভয় অংশে মানুষ ও যানবাহনের চাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। চাপ সামলাতে আমাদের মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের চেষ্টার কারণে এখনও ঘুরছে গাড়ির চাকা।

মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম বজলুর রশিদ বলেন, প্রচুর প্রেশার সড়কে ও ফ্লাইওভারে। কিন্তু হাঁটা মানুষের চাপই বেশি। তাছাড়া প্রচুর মানুষ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে বাড়ি যাচ্ছেন, কেউ ঘুরতে যাচ্ছেন পদ্মা সেতুতে। যে কারণে অনেক বেশি চাপ ফ্লাইওভারে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি।

গতকাল বেলা ১১টা থেকেই রাজধানীর বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কে যানবাহনের চাপ।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়ার ভিড়, রাজধানীতে যানজট

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

image

পদ্মা সেতু অভিমুখে হাজার হাজার মোটরসাইকেল, যাত্রাপথে রাজধানীতে যানজট -সংবাদ

প্রায় ৪০ মিনিট মৎস্যভবন সিগন্যালে বাসে বসা অনেকের মধ্যে একজন শরীফা বানু। দাঁড়িয়ে থাকা বাসে শরীফা বানুর ৩ বছরের বাচ্চা সিয়াম আর থাকতে চাইছে না। একদিকে গরম অন্যদিকে তীব্র জানজট, সব মিলিয়ে অস্থির হয়ে বাস থেকে নেমে পড়েন শরীফা। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করেন। গুলিস্তান থেকে বাস ধরবেন নারায়ণগঞ্জের। এভাবে অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকা বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন।

বাবুল মিয়া নামের এক বাসযাত্রী বলেন, ‘ফার্মগেট থেকে বাসে চড়েছি দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে, এখনও মৎস্য ভবন পার করতে পারিনি। মতিঝিলে কখন পৌঁছাবে সেটাই ভাবতেছি।’ তার কথা শুনে বাসে চালক বলেন, ‘ভিআইপি যাইতেছে এজন্য জ্যাম লাগছে।’

মৎস্যভবনে ব্যস্ত একজন ট্রাফিক সদস্যকে জ্যামের কারণ জানতে চাইলে বলেন, আজকে অনেকেই পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছে। প্রচুর চাপ, বিশেষ করে মতিঝিল, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী, চানখারপুল, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মগবাজার ও মগবাজার ফ্লাইওভারে যানবাহনের বাড়তি চাপ।

উদ্বোধন শেষে গতকাল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে পদ্মা সেতু। সকাল ৬টা থেকে সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়। সকাল থেকেই যানবাহনের চাপ ছিল সেতুর দুই প্রান্তে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের প্রথম দিন কেউ যাচ্ছেন ঘুরতে, উচ্ছ্বাস নিয়ে কেউ রওনা হয়েছেন বাড়িতে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। রাজধানীর কাকরাইল, চানখারপুল, ওয়ারী ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থানে জানজটের কারণে দাঁড়িয়ে ছিল যানবাহন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। গতকাল সকাল থেকেই মাওয়া-পদ্মা সেতুগামী যানবাহনের চাপ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে ও নিচে।

অন্য দিনের তুলনায় এসব এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া জাহেরী তানিন বলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার সময় বাড়তি চাপ ছিল। দুপুরে এখানে দীর্ঘ সময় যানচলাচল প্রায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এর প্রভাবে রাজধানীর মতিঝিল, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী, চানখারপুল, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মগবাজার ও মগবাজার ফ্লাইওভারে যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিল স্পষ্ট। তানিন বলেন, ‘মোটর বাইক দিয়েও দ্রুত রাস্তা পার হতে পারিনি। এ রাস্তা সে রাস্তায় গেছি কিন্তু আমার মতো অনেকেই অতি আগ্রহে স্থবির হয়ে আছি।’

স্ত্রী সন্তান নিয়ে বরিশালের ইউসুফ রানা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি এতটাই এক্সসাইটেড বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন। বাড়ি যাওয়ার ঝক্কির কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনকে সময় যেতে পারতাম না। আমাদের কষ্টের যাত্রায় যেন প্রাণ ফিরেছে। এবার ঈদে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাব, এ কথা ভাবতে পারিনি। ঈদের আগেই একবার ঘুরতে যাচ্ছি। আর যাবই যদি তবে দেরিতে কেন। কেন প্রথম দিন নয়। তাই এই যাত্রা। তিনি বলেন, কিন্তু এতটা চাপ থাকবে বুঝতে পারিনি। যানবাহনের চাপ বোঝা যাচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া, সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়া, উৎসুক মানুষ ও যানবাহন বেড়ে যাওয়ার চাপ পড়েছে রাজধানীতে।

যোগাযোগ করা হলে লালবাগ ট্রাফিক বিভাগের ফুলবাড়িয়া জোনের সহকারী কমিশনার সালাহউদ্দিন জানান, সকাল থেকেই বাড়তি চাপ। ফুলবাড়িয়ায় ফ্লাইওভারের নিচে ওপরে উভয় অংশে মানুষ ও যানবাহনের চাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। চাপ সামলাতে আমাদের মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের চেষ্টার কারণে এখনও ঘুরছে গাড়ির চাকা।

মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম বজলুর রশিদ বলেন, প্রচুর প্রেশার সড়কে ও ফ্লাইওভারে। কিন্তু হাঁটা মানুষের চাপই বেশি। তাছাড়া প্রচুর মানুষ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে বাড়ি যাচ্ছেন, কেউ ঘুরতে যাচ্ছেন পদ্মা সেতুতে। যে কারণে অনেক বেশি চাপ ফ্লাইওভারে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি।

গতকাল বেলা ১১টা থেকেই রাজধানীর বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কে যানবাহনের চাপ।