জি-৭ সম্মেলন কেন্দ্র করে মিউনিখে বিক্ষোভ

জার্মানির মিউনিখে আয়োজিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের ধনী ও উন্নয়নশীল দেশের সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ সম্মেলন। এ বৈঠকে যোগ দেবেন শক্তিধর দেশগুলোর নেতারা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জার্মানি পৌঁছেছেন। বৈঠকে উপস্থিত হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখো, কানাডার জাস্টিন ট্রুডো।

এবারের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের উদ্দেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে হয়েছে আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশকে। সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই মিউনিখের রাস্তায় নেমে এসেছেন হাজারো বিক্ষোভকারী। রোববার জি-৭ জোটের নেতারা যখন বাভারিয়ান আল্পসে তাদের বার্ষিক সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, মিউনিখের রাস্তায় প্রায় ৪ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

বিক্ষেভকারীরা বলছেন, তারা বাভারিয়ান শহরে ২০ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আশা করেছিলেন। বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক উয়ে হিকস বলেছেন, অংশগ্রহণকারীরা ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন চলাকালীন বিশ্বের ধনী গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করা অনুচিত বলে মনে করেন। আমরা জানি ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ অস্থির হয়ে আছেন। বিক্ষোভ থেকে যেন কোনো সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে, তাই মিউনিখে কর্মকর্তাসহ ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোয়েতন করা হয়েছে। তারা জি-৭ সম্মেলন ও বিক্ষোভ অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করবেন।

অ্যাটাক থেকে শুরু করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড পর্যন্ত বিশ্বায়নের সমালোচনাকারী ১৫টি গোষ্ঠী জনগণকে এ বিক্ষোভে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। বিক্ষোভ থেকে তারা যে দাবি তুলছেন, তার মধ্যে রয়েছে- জীবাশ্ম জ্বালানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ক্ষুধা মোকাবিলায় বৃহত্তর প্রচেষ্টা।

টোবিয়াস হাউসচাইল্ড নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, সময়ের একাধিক সংকট মোকাবিলায় আমাদের দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন। এর অর্থ হলো জি-৭-কে দেরি না করে কাজ শুরু করতে হবে। যে দাবি গুলো তোলা হয়েছে, তাদের সেগুলো বিবেচনা করতে হবে। ক্ষুধা, বৈষম্য ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করতে হবে।

জি-৭ জোটের এবারের বৈঠকের এজেন্ডাÑ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের মতো বিষয়। মুদি, গ্যাস ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম উল্লেখ করে এক ভিডিও বার্তায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সুলজ বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নৃশংস যুদ্ধ তার দেশের প্রভাব ফেলছে। জি-৭ সম্মেলনে আমরা ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা একই সঙ্গে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করবো।

জি-৭ এর প্রধান বার্তা হবে ঐক্য এবং কর্মের সমন্বয়। বৈঠকে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের বিকল্প উৎস নিয়ে আলোচনা হবে। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে করণীয় নিয়েও বৈঠকে প্রাধান্য পাবে। ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর একের পর এক কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যে রয়েছে মস্কো থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি না করা। তবে বিকল্প যোগান না পাওয়া পর্যন্ত গ্যাস নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি কয়েকটি দেশ। এছাড়াও রাশিয়ার সোনা আমদানি নিষিদ্ধে সম্মত হতে চলছে জি-৭ নেতারা।

রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাভারিয়ার এলমাউতে জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলন শেষে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন নেটো জোটভুক্ত ৩০ দেশের নেতারা। এ সম্মেলনটি স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হবে। জি-৭ এর সাত দেশ হলো- ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

জি-৭ সম্মেলন কেন্দ্র করে মিউনিখে বিক্ষোভ

image

জো বাইডেন এবং ইমানুয়েল ম্যাখোর মুখোশ পরা বিক্ষোভকারীরা মিউনিখে একটি সমাবেশে অংশ নেয় -আল জাজিরা

জার্মানির মিউনিখে আয়োজিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের ধনী ও উন্নয়নশীল দেশের সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ সম্মেলন। এ বৈঠকে যোগ দেবেন শক্তিধর দেশগুলোর নেতারা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জার্মানি পৌঁছেছেন। বৈঠকে উপস্থিত হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখো, কানাডার জাস্টিন ট্রুডো।

এবারের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের উদ্দেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে হয়েছে আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশকে। সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই মিউনিখের রাস্তায় নেমে এসেছেন হাজারো বিক্ষোভকারী। রোববার জি-৭ জোটের নেতারা যখন বাভারিয়ান আল্পসে তাদের বার্ষিক সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, মিউনিখের রাস্তায় প্রায় ৪ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

বিক্ষেভকারীরা বলছেন, তারা বাভারিয়ান শহরে ২০ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আশা করেছিলেন। বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক উয়ে হিকস বলেছেন, অংশগ্রহণকারীরা ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন চলাকালীন বিশ্বের ধনী গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করা অনুচিত বলে মনে করেন। আমরা জানি ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ অস্থির হয়ে আছেন। বিক্ষোভ থেকে যেন কোনো সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে, তাই মিউনিখে কর্মকর্তাসহ ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোয়েতন করা হয়েছে। তারা জি-৭ সম্মেলন ও বিক্ষোভ অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করবেন।

অ্যাটাক থেকে শুরু করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড পর্যন্ত বিশ্বায়নের সমালোচনাকারী ১৫টি গোষ্ঠী জনগণকে এ বিক্ষোভে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। বিক্ষোভ থেকে তারা যে দাবি তুলছেন, তার মধ্যে রয়েছে- জীবাশ্ম জ্বালানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ক্ষুধা মোকাবিলায় বৃহত্তর প্রচেষ্টা।

টোবিয়াস হাউসচাইল্ড নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, সময়ের একাধিক সংকট মোকাবিলায় আমাদের দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন। এর অর্থ হলো জি-৭-কে দেরি না করে কাজ শুরু করতে হবে। যে দাবি গুলো তোলা হয়েছে, তাদের সেগুলো বিবেচনা করতে হবে। ক্ষুধা, বৈষম্য ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করতে হবে।

জি-৭ জোটের এবারের বৈঠকের এজেন্ডাÑ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের মতো বিষয়। মুদি, গ্যাস ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম উল্লেখ করে এক ভিডিও বার্তায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সুলজ বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নৃশংস যুদ্ধ তার দেশের প্রভাব ফেলছে। জি-৭ সম্মেলনে আমরা ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা একই সঙ্গে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করবো।

জি-৭ এর প্রধান বার্তা হবে ঐক্য এবং কর্মের সমন্বয়। বৈঠকে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের বিকল্প উৎস নিয়ে আলোচনা হবে। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে করণীয় নিয়েও বৈঠকে প্রাধান্য পাবে। ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর একের পর এক কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যে রয়েছে মস্কো থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি না করা। তবে বিকল্প যোগান না পাওয়া পর্যন্ত গ্যাস নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি কয়েকটি দেশ। এছাড়াও রাশিয়ার সোনা আমদানি নিষিদ্ধে সম্মত হতে চলছে জি-৭ নেতারা।

রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাভারিয়ার এলমাউতে জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলন শেষে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন নেটো জোটভুক্ত ৩০ দেশের নেতারা। এ সম্মেলনটি স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হবে। জি-৭ এর সাত দেশ হলো- ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।