সুনামগঞ্জে ত্রাণের জন্য বানভাসি মানুষের হাহাকার

দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষেরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। কিন্ত আশানুরূপ ত্রাণ পাচ্ছেন না। ফলে দিন যতই যাচ্ছে খাদ্যের জন্য হাহাকার বেড়েই চলেছে। সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহায়তা বিতরণ অব্যাহত আছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এছাড়াও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে রয়েছে চরম সমন্বয়হীনতা। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেকেই শহরের আশ্রয় কেন্দ্র, পাড়া মহল্লার বানভাসির মধ্যেই ত্রাণ বিতরণ সীমাবদ্ধ, রেখেছেন এবং উপজেলার আশপাশের তুলনামূলক ভাল জায়গাতেই। হাওরাঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোতে খুব একটা কেউ ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন না। ফলে হাওরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামের মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। গত ১০ দিন যাবত অনাহারে অর্ধাহারে খেয়ে মানুষের জীবন চলছে। দিন যতই যাচ্ছে খাদ্যের চিন্তা ততই প্রকট হচ্ছে।

কারণ বানভাসিদের অনেকের ঘর থেকে পানি নামলেও আশপাশে আছে। আবার অনেক নিচু এলাকার সড়ক বসতঘরে এখনও পানি রয়েছে। হাওরাঞ্চলের মানুষ ত্রাণবাহী নৌকা দেখলেই শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুরা পানির মধ্যেই ছুটে আসে, নানা কাকুতি মিনতি জানায় চাল, ডালসহ খাদ্যের জন্য। এটি হাওরাঞ্চলের এখন নিত্য নৈমিত্তিক চিত্র। সেখানে খাদ্যের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট আরও প্রকট। অনেকেই বাধ্য হয়ে হাওর জলাশয়ের পানি পান করছেন ফলে বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর সর্দি, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা করছেন। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকের গরু ছাগল পানি আসার পর মরে গেছে আবার যে গুলো অবশিষ্ট আছে খাদ্যের অভাবে সেগুলোও কঙ্কাল সার অবস্থা। কাঁচা ঘর বাড়ির চরম সর্বনাশ ঘটেছে সেই সঙ্গে আসবাপত্র নষ্ট হয়েছে প্রচুর। সড়কগুলোর অবস্থা খুব খারাপ যার ফলে অনেক সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু জাহান জানান এখনও শ্রীপুর বাজারসহ অনেক সড়ক ও ঘরবাড়িতে কিছু পানি রয়েছে এসব এলাকার শতভাগ মানুষের ক্ষতি হয়েছে। কিছু চাল ও শুকনো খাবার সরকারি বেসরকারি ভাবে দেয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুব অপ্রতুল। একই উপজেলার বাদাঘাট এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর দক্ষিণ শ্রীপুর উত্তর বড়দল দক্ষিণ বড়দল, বালিজুড়ি ইউনিয়নের অনেক জায়গাতেই পানি রয়েছে এখনও। সাহায্য সহায়তা খুব একটা পাচ্ছেন না মানুষ।

দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানান, পানির প্রচ- তোড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, বেড়া পড়ে গেছে। ঘর থেকে পানি নামলেও কাদা থাকায় বসবাসের অনুপযোগী। মানুষ এখন চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। এসব অনেক জায়গাতেই বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী দিলেও সরকারি ত্রাণ অনেকেই পাননি। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লা পাড়া ইউনিয়নের দড়িয়াবাজ গ্রামের জইন উদ্দিন ও মঙ্গল মিয়া জানান, বন্যার পর কিছু মুড়ি, চিঁড়া পেলেও আর কিছুই পাননি তাদের অনেকেই। বন্যার পর শহর কিংবা গ্রামের মানুষ কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায় তারা চরম ঝুঁকির মধ্যেই আছে পরিবার-পরিজন নিয়ে। সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

সুনামগঞ্জে ত্রাণের জন্য বানভাসি মানুষের হাহাকার

দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

image

সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষেরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। কিন্ত আশানুরূপ ত্রাণ পাচ্ছেন না। ফলে দিন যতই যাচ্ছে খাদ্যের জন্য হাহাকার বেড়েই চলেছে। সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহায়তা বিতরণ অব্যাহত আছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এছাড়াও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে রয়েছে চরম সমন্বয়হীনতা। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেকেই শহরের আশ্রয় কেন্দ্র, পাড়া মহল্লার বানভাসির মধ্যেই ত্রাণ বিতরণ সীমাবদ্ধ, রেখেছেন এবং উপজেলার আশপাশের তুলনামূলক ভাল জায়গাতেই। হাওরাঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোতে খুব একটা কেউ ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন না। ফলে হাওরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামের মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। গত ১০ দিন যাবত অনাহারে অর্ধাহারে খেয়ে মানুষের জীবন চলছে। দিন যতই যাচ্ছে খাদ্যের চিন্তা ততই প্রকট হচ্ছে।

কারণ বানভাসিদের অনেকের ঘর থেকে পানি নামলেও আশপাশে আছে। আবার অনেক নিচু এলাকার সড়ক বসতঘরে এখনও পানি রয়েছে। হাওরাঞ্চলের মানুষ ত্রাণবাহী নৌকা দেখলেই শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুরা পানির মধ্যেই ছুটে আসে, নানা কাকুতি মিনতি জানায় চাল, ডালসহ খাদ্যের জন্য। এটি হাওরাঞ্চলের এখন নিত্য নৈমিত্তিক চিত্র। সেখানে খাদ্যের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট আরও প্রকট। অনেকেই বাধ্য হয়ে হাওর জলাশয়ের পানি পান করছেন ফলে বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর সর্দি, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা করছেন। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকের গরু ছাগল পানি আসার পর মরে গেছে আবার যে গুলো অবশিষ্ট আছে খাদ্যের অভাবে সেগুলোও কঙ্কাল সার অবস্থা। কাঁচা ঘর বাড়ির চরম সর্বনাশ ঘটেছে সেই সঙ্গে আসবাপত্র নষ্ট হয়েছে প্রচুর। সড়কগুলোর অবস্থা খুব খারাপ যার ফলে অনেক সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু জাহান জানান এখনও শ্রীপুর বাজারসহ অনেক সড়ক ও ঘরবাড়িতে কিছু পানি রয়েছে এসব এলাকার শতভাগ মানুষের ক্ষতি হয়েছে। কিছু চাল ও শুকনো খাবার সরকারি বেসরকারি ভাবে দেয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুব অপ্রতুল। একই উপজেলার বাদাঘাট এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর দক্ষিণ শ্রীপুর উত্তর বড়দল দক্ষিণ বড়দল, বালিজুড়ি ইউনিয়নের অনেক জায়গাতেই পানি রয়েছে এখনও। সাহায্য সহায়তা খুব একটা পাচ্ছেন না মানুষ।

দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানান, পানির প্রচ- তোড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, বেড়া পড়ে গেছে। ঘর থেকে পানি নামলেও কাদা থাকায় বসবাসের অনুপযোগী। মানুষ এখন চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। এসব অনেক জায়গাতেই বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী দিলেও সরকারি ত্রাণ অনেকেই পাননি। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লা পাড়া ইউনিয়নের দড়িয়াবাজ গ্রামের জইন উদ্দিন ও মঙ্গল মিয়া জানান, বন্যার পর কিছু মুড়ি, চিঁড়া পেলেও আর কিছুই পাননি তাদের অনেকেই। বন্যার পর শহর কিংবা গ্রামের মানুষ কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায় তারা চরম ঝুঁকির মধ্যেই আছে পরিবার-পরিজন নিয়ে। সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার।