৫ দফা দাবিতে গতকাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে যশোরের ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। এ সময় স্মারকিলিপ গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রফিকুল হাসান। সংগঠনের আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে ভবদহ জনপদের ২০০ গ্রামের প্রায় প্রত্যক্ষ ও অ-প্রত্যক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে পানির তলে তলিয়ে যেতে বসেছে। উদ্ভব হয়েছে মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ঘের মালিকেরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতি বছর জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা লুটের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছে। তাদের কাছে ভবদহ হলো ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। এই চক্র এতই ক্ষমতাবান যে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখানোর ধৃষ্টতা দেখিয়ে ভবদহ স্লুইস গেট থেকে মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট করে ফেলেছে। পানি বেরোবার পথ রুদ্ধ। এই পরিণতির কথা বারবার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাতে কর্ণপাত না করে জনপদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকার আয়োজিত এক কনভেনশনে নীতিগতভাবে পর্যায়ক্রমের বিলগুলোতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে বিল কেদারিয়ায় এবং পরবর্তী বিল হিসাবে ২০০৬ সালে বিল খুকশিয়ায় টিআরএম এর সফলতায় স্রোতের ভরবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত নদীগর্ভের পলি কেটে কাট পয়েন্ট থেকে নদী ২৫-৩০ ফুট গভীর ও মোহনা সচল হয়েছিল। পরবর্তী নির্ধারিত বিল কপালিয়ায় টিআরএম কার্যকর করতে গেলে প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র আক্রমণে ২০১২ সালে হুইপ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আহত হন এবং সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে দেয়।
ফলে ওই চক্র ও সিন্ডিকেট স্থায়ী লুটপাটের সরকারি মদদ পেয়ে বসে। এর সঙ্গে যারা জড়িত সবাই তাদের চেনেন।
পুনরায় নিরঙ্কুশ জনমতের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পানিসম্পদমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এবং ওডগ কর্র্তৃক ব্যাপক জরিপ ও জনমত যাচাই করে প্রস্তাবিত বিল কপালিয়া ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সে প্রকল্প ওই চক্রের প্রভাবেই বাস্তবায়নে তালবাহানা শুরু হয়।
২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে পর্যালোচনার পর পানিসম্পদমন্ত্রী টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা ষড়যন্ত্রের রোষালনে পড়ে।
২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাতিল করে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেয়। এরপর হঠাৎ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ভবদহ গেটে এসে টিআরএম হবে না এবং বিলগুলোকে জলাভূমি হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর অজুহাত উত্থাপন করেন। উপস্থিত জনগণের মধ্যে আপত্তি উঠলে তিনি তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। প্রকৃত সত্য হলো ভবদহ এলাকা কখনই জলাভূমি বা জলাশয় ছিল না। এমন তথ্য রাষ্ট্রীয় নথিপত্রেও দেখা যায় না বরং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এ ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করছেন এবং জনমতকে উপেক্ষা করে পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জলাবদ্ধতামুক্ত করার অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প দিয়ে অর্থ অপচয় করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বলেছে, এবার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেয়ার ফলে এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন এবং এলাকা জলাবদ্ধ হয়নি, মানুষের বাড়িঘর-রাস্তা এবং কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেনি।
আবারো পানি উন্নয়ন বোর্ড জনমত উপেক্ষা করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে যে অর্থ সম্পূর্ণ অপচয় হবে এবং বরাবরের মতো জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
স্মারকলিপি দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিৎ বাওয়ালি, জিল্লুর রহমান ভিটু, অধ্যক্ষ চৈতন্য কুমার পাল, শিবপদ বিশ্বাস, শেখর বিশ্বাস, রাজু আহমেদ, অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস, জুয়েল মোল্লা, হাসিনুর রহমান।
সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩
যশোর অফিস
৫ দফা দাবিতে গতকাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে যশোরের ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। এ সময় স্মারকিলিপ গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রফিকুল হাসান। সংগঠনের আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে ভবদহ জনপদের ২০০ গ্রামের প্রায় প্রত্যক্ষ ও অ-প্রত্যক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে পানির তলে তলিয়ে যেতে বসেছে। উদ্ভব হয়েছে মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ঘের মালিকেরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতি বছর জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা লুটের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছে। তাদের কাছে ভবদহ হলো ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। এই চক্র এতই ক্ষমতাবান যে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখানোর ধৃষ্টতা দেখিয়ে ভবদহ স্লুইস গেট থেকে মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট করে ফেলেছে। পানি বেরোবার পথ রুদ্ধ। এই পরিণতির কথা বারবার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাতে কর্ণপাত না করে জনপদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকার আয়োজিত এক কনভেনশনে নীতিগতভাবে পর্যায়ক্রমের বিলগুলোতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে বিল কেদারিয়ায় এবং পরবর্তী বিল হিসাবে ২০০৬ সালে বিল খুকশিয়ায় টিআরএম এর সফলতায় স্রোতের ভরবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত নদীগর্ভের পলি কেটে কাট পয়েন্ট থেকে নদী ২৫-৩০ ফুট গভীর ও মোহনা সচল হয়েছিল। পরবর্তী নির্ধারিত বিল কপালিয়ায় টিআরএম কার্যকর করতে গেলে প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র আক্রমণে ২০১২ সালে হুইপ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আহত হন এবং সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে দেয়।
ফলে ওই চক্র ও সিন্ডিকেট স্থায়ী লুটপাটের সরকারি মদদ পেয়ে বসে। এর সঙ্গে যারা জড়িত সবাই তাদের চেনেন।
পুনরায় নিরঙ্কুশ জনমতের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পানিসম্পদমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এবং ওডগ কর্র্তৃক ব্যাপক জরিপ ও জনমত যাচাই করে প্রস্তাবিত বিল কপালিয়া ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সে প্রকল্প ওই চক্রের প্রভাবেই বাস্তবায়নে তালবাহানা শুরু হয়।
২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে পর্যালোচনার পর পানিসম্পদমন্ত্রী টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা ষড়যন্ত্রের রোষালনে পড়ে।
২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাতিল করে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেয়। এরপর হঠাৎ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ভবদহ গেটে এসে টিআরএম হবে না এবং বিলগুলোকে জলাভূমি হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর অজুহাত উত্থাপন করেন। উপস্থিত জনগণের মধ্যে আপত্তি উঠলে তিনি তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। প্রকৃত সত্য হলো ভবদহ এলাকা কখনই জলাভূমি বা জলাশয় ছিল না। এমন তথ্য রাষ্ট্রীয় নথিপত্রেও দেখা যায় না বরং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এ ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করছেন এবং জনমতকে উপেক্ষা করে পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জলাবদ্ধতামুক্ত করার অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প দিয়ে অর্থ অপচয় করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বলেছে, এবার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেয়ার ফলে এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন এবং এলাকা জলাবদ্ধ হয়নি, মানুষের বাড়িঘর-রাস্তা এবং কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেনি।
আবারো পানি উন্নয়ন বোর্ড জনমত উপেক্ষা করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে যে অর্থ সম্পূর্ণ অপচয় হবে এবং বরাবরের মতো জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
স্মারকলিপি দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিৎ বাওয়ালি, জিল্লুর রহমান ভিটু, অধ্যক্ষ চৈতন্য কুমার পাল, শিবপদ বিশ্বাস, শেখর বিশ্বাস, রাজু আহমেদ, অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস, জুয়েল মোল্লা, হাসিনুর রহমান।