ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সরকারি হাসপাতালে

ডাক্তার দেখাতে আরও অসুস্থ হচ্ছেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রবীণদের (সিনিয়র সিটিজেন) জন্য আলাদা লাইনের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অনেক বৃদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এরপরও সিরিয়াল পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, একজন বৃদ্ধ মহিলা রোগী টিকেট কিনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রক্ত পরীক্ষার আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এভাবে অনেকের কষ্ট হচ্ছে।

প্রবীণদের মতে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রবীণরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈকালিক বহির্বিভাগে যাওয়া একজন ৭০ বছরের সিনিয়র সিটিজেন গতকাল সংবাদকে জানান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ বেশি হওয়ায় সেখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়ছে। রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে আগত শহ শত রোগী সকালে ও বিকেলে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য যান। এসব রোগীদের মধ্যে কিছু রোগীর বয়স ৭০ বছর থেকে ৮৫ বছর। এসব প্রবীণ রোগী কোনমতে টিকেট সংগ্রহ করলেও বহির্বিভাগে গিয়ে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে কষ্ট হয়। অনেকেই কষ্টে কান্নাকাটি করছেন। এত কষ্ট থেকে মৃত্যুও ভালো বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

এই প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, ১০০ জন রোগীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবীণ। তাদের জন্য আলাদা লাইন বা বসার ব্যবস্থা থাকলে তারা কোনমতে ডাক্তার দেখিয়ে শান্তিতে বাসায় ফিরতে পারেন। গতকাল ওই রোগী দুপুর আড়াইটার দিকে টিকেট সংগ্রহ করতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার টিকেট নেন, অবশেষে বিকেলে তিনি ডাক্তার দেখাতে সক্ষম হন, তারপর পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে দীর্ঘ লাইন।

কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবীণদের আলাদা লাইন আছে। তাদের আলাদাভাবে ডাক্তার দেখানো থেকে সবকিছু দ্রুত করে দেয়া হয়। এতে প্রবীণরা খুশি। বাংলাদেশের জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সিনিয়র সিটিজেন নাগরিকদের দ্রুত আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য প্রবীণরা জোর দাবি জানিয়েছেন।

মহাখালী রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, লাইনে দাঁড়াবে কেন। বহির্বিভাগে রোগীদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। ঠাঁসাঠাঁসি করে লাইনে দাঁড়ানোর কারণে ইনফেকশন হতে পারে। এখন দেশে নানা ধরনের সংক্রমণ রোগী রয়েছে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা, প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকার দরকার। ঢাকার বাইরে কোন কোন স্থানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতাল, স্পেলাইজড হাসপাতালগুলোতে আরও আগেই এ পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল বলে তিনি মনে করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকে জানান, তিনি সিনিয়র সিটিজেনদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। যাতে সিনিয়র সিটিজেনেেদর আর কষ্ট করতে না হয়। তবে এর আগে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এতে বহু মুক্তিযোদ্ধা উপকৃত হয়েছেন। এ কাজ এখনো চলমান আছে। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথিসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক (আইসিইউ বিশেষজ্ঞ) ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, সিনিয়র সিটিজেনদের চিকিৎসার জন্য সরকারি নির্দেশনা আছে। তা বাস্তবায়ন করলে সিনিয়র সিটিজেনরা উপকৃত হবেন। লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না। তার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বয়স ৬৫ বছর হলে তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় প্রবীণরা কষ্ট পাচ্ছেন। যাদের দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর, তারা কিভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আর চিকিৎসা করবে তা কেউ চিন্তাও করে না। তাই এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চিকিৎসা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রবীণদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা সর্বত্র থাকা ভালো।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

সিনিয়র সিটিজেনদের চিকিৎসা কষ্ট

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সরকারি হাসপাতালে

ডাক্তার দেখাতে আরও অসুস্থ হচ্ছেন

বাকী বিল্লাহ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রবীণদের (সিনিয়র সিটিজেন) জন্য আলাদা লাইনের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অনেক বৃদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এরপরও সিরিয়াল পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, একজন বৃদ্ধ মহিলা রোগী টিকেট কিনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রক্ত পরীক্ষার আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এভাবে অনেকের কষ্ট হচ্ছে।

প্রবীণদের মতে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রবীণরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈকালিক বহির্বিভাগে যাওয়া একজন ৭০ বছরের সিনিয়র সিটিজেন গতকাল সংবাদকে জানান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ বেশি হওয়ায় সেখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়ছে। রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে আগত শহ শত রোগী সকালে ও বিকেলে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য যান। এসব রোগীদের মধ্যে কিছু রোগীর বয়স ৭০ বছর থেকে ৮৫ বছর। এসব প্রবীণ রোগী কোনমতে টিকেট সংগ্রহ করলেও বহির্বিভাগে গিয়ে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে কষ্ট হয়। অনেকেই কষ্টে কান্নাকাটি করছেন। এত কষ্ট থেকে মৃত্যুও ভালো বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

এই প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, ১০০ জন রোগীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবীণ। তাদের জন্য আলাদা লাইন বা বসার ব্যবস্থা থাকলে তারা কোনমতে ডাক্তার দেখিয়ে শান্তিতে বাসায় ফিরতে পারেন। গতকাল ওই রোগী দুপুর আড়াইটার দিকে টিকেট সংগ্রহ করতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার টিকেট নেন, অবশেষে বিকেলে তিনি ডাক্তার দেখাতে সক্ষম হন, তারপর পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে দীর্ঘ লাইন।

কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবীণদের আলাদা লাইন আছে। তাদের আলাদাভাবে ডাক্তার দেখানো থেকে সবকিছু দ্রুত করে দেয়া হয়। এতে প্রবীণরা খুশি। বাংলাদেশের জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সিনিয়র সিটিজেন নাগরিকদের দ্রুত আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য প্রবীণরা জোর দাবি জানিয়েছেন।

মহাখালী রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, লাইনে দাঁড়াবে কেন। বহির্বিভাগে রোগীদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। ঠাঁসাঠাঁসি করে লাইনে দাঁড়ানোর কারণে ইনফেকশন হতে পারে। এখন দেশে নানা ধরনের সংক্রমণ রোগী রয়েছে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা, প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকার দরকার। ঢাকার বাইরে কোন কোন স্থানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতাল, স্পেলাইজড হাসপাতালগুলোতে আরও আগেই এ পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল বলে তিনি মনে করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকে জানান, তিনি সিনিয়র সিটিজেনদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। যাতে সিনিয়র সিটিজেনেেদর আর কষ্ট করতে না হয়। তবে এর আগে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এতে বহু মুক্তিযোদ্ধা উপকৃত হয়েছেন। এ কাজ এখনো চলমান আছে। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথিসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক (আইসিইউ বিশেষজ্ঞ) ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, সিনিয়র সিটিজেনদের চিকিৎসার জন্য সরকারি নির্দেশনা আছে। তা বাস্তবায়ন করলে সিনিয়র সিটিজেনরা উপকৃত হবেন। লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না। তার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বয়স ৬৫ বছর হলে তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় প্রবীণরা কষ্ট পাচ্ছেন। যাদের দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর, তারা কিভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আর চিকিৎসা করবে তা কেউ চিন্তাও করে না। তাই এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চিকিৎসা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রবীণদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা সর্বত্র থাকা ভালো।