শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত ৩০ হাজার খামারি

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া হৃষ্ট-পুষ্টকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের খামারীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত পশু পরিচর্যায়।

কৃত্রিম উপায়ে গরু হৃষ্ট-পুষ্টকরণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করছেন তাঁরা। তবে ভারত থেকে গরু আমদানীর আশংকায় চিন্তিত খামারিরা। এদিকে ক্রেতাদেরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পশু ক্রয় ও কোরবানি করার পরামর্শ প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেব মতে, তিন উপজেলাতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে ২৯ হাজার ৯৫২টি খামারে ৫৮ হাজার ৩৬৩টি গরু, ৫৮২টি মহিষ, ১,২৬,০৬৯ ছাগল এবং ২ হাজার ৭৭২টি ভেড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বছর জুড়ে গরুর দাম বেশি থাকায় কোরবানির সময় কাক্সিক্ষত মুল্য পাবেন বলে আশা খামারিদের। ধানের বিচালী, কাঁচা ঘাস, খৈল, গমের ভুষি, ছোলা, ভাত, চালের কুঁড়া ইত্যাদি খাইয়ে গরু হৃষ্ট-পুষ্ট করেছেন এসব খামারিরা। কতিপয় অসাধু খামারির কারণে প্রকৃত খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে এবং অসাধু খামারিকে চিহ্নিতের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এছাড়াও খামারিদের দাবি, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোন ক্রমেই যাতে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতীয় গরু আমদানি না করা হয়। তাহলে কাক্সিক্ষত মূল্য পাবেন না খামারিরা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও পশু পালনকারীরা গরু পালনে উৎসাহ হারাবে। গাংনীর বালিয়াঘাট মা এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আবু নাঈম জানান, তার খামারে ৬০টি গরু মোটা হৃষ্ট-পুষ্টকরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪০টি হরিয়ান ও ২০টি নেপালী জাতের গরু। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি। খরচও কম। অন্যান্যবার অনেক খামারি হরমণ জাতিয় ওষুধ ব্যবহার করে মোটাতাজাকরণ করায় বেশ কয়েকটি গরু মারা যায়। আবার বিক্রি করতে না পারায় গরুগুলো ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছেন। এজন্য দেশীয় প্রযুক্তিতে গরু পালন করা হচ্ছে। তবে ভারত থেকে পশু আমদানি না করা হলে কাক্সিক্ষত মূল্য পাবেন বলেও আশাবাদ তিনি। গাংনী উপজেলার মালসাদহ গ্রামের গরুর খামারি ইনামুল হক জানান, তাঁর খামারে ১৮টি নেপালী ও ১২টি হরিয়ান জাতের গরু আছে। ক্ষতিকারক ইঞ্জেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করলে ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় গরু মারাও যায়।

ফলে ঝুঁকি না নিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। তবে শহর কেন্দ্রিক মানুষের মাঝে গরু মোটাতাজাকরণে স্টরয়েড ও হরমন ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অপপ্রচারে চিন্তিত তারা।

পারিবারিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন সহড়াবাড়িয়ার কালু। তিনি বাড়িতে ৫টি হরিয়ান জাতের গরু পালছেন। এবারও ঢাকায় নিবেন গরু। তিনি জানান, গরুর খাবার ও ওষুধসহ পালন খরচ প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় গরুর দাম বৃদ্ধি পায়নি। বাড়িতে ব্যাপারীরা আসছেন কিন্তু দাম বলছেন অনেক কম। ব্যাপারীরা যে দাম হাকছেন তাতে খরচের অর্ধেকটাও উঠবে না। তারপরও লাভের আশা করছেন তিনি। তবে ভারত থেকে পশু আমদানি না করার পরামর্শও দেন তিনি।

কুঞ্জনগরের গরুর বেপারী শফিউদ্দীন জানান, তিনি গতবার ২১০টি গরু ঢাকায় নিয়েছিলেন। এবার অন্তত ৩০০ গরু ঢাকার হাটে তুলবেন। ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু পছন্দ করছেন। সকল খামারি ও পারিবারিকভাবে পশু পালন করছেন করছেন প্রাকৃতিক উপায়ে ও দেশীয় খাবার দিয়ে। ফলে এবার কোন ঝুঁকি নেই খামারি ও ব্যবসায়ীদের।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দীন জানান, ঈদকে সামনে রেখে কোন ক্রমেই যাতে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু না আসতে পারে সেই লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও হাটে স্টরয়েড ও হরমন ব্যবহারে মোটাতাজাকরণ গরু না তুলতে পারে সেজন্য হাটগুলোতে মোবাইল কোর্টসহ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের একাধিক টিম থাকবে।

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পশু ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলছেন কারণ তাদের কোরবানির পশু ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিতে আর ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। পশুর মৃত্যুও ঝুঁকিও থাকবে না। পদ্মা সেতুর কারণে তারা তাদের পশুর উপযুক্ত মূল্য পাবেন বলে আশাবাদী।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২ , ১৪ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত ৩০ হাজার খামারি

প্রতিনিধি, মেহেরপুর

image

মেহেরপুর : প্রাকৃতিক খাদ্যে গরু মোটাতাজা করণ চলছে একটি খামারে -সংবাদ

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া হৃষ্ট-পুষ্টকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের খামারীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত পশু পরিচর্যায়।

কৃত্রিম উপায়ে গরু হৃষ্ট-পুষ্টকরণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করছেন তাঁরা। তবে ভারত থেকে গরু আমদানীর আশংকায় চিন্তিত খামারিরা। এদিকে ক্রেতাদেরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পশু ক্রয় ও কোরবানি করার পরামর্শ প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেব মতে, তিন উপজেলাতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে ২৯ হাজার ৯৫২টি খামারে ৫৮ হাজার ৩৬৩টি গরু, ৫৮২টি মহিষ, ১,২৬,০৬৯ ছাগল এবং ২ হাজার ৭৭২টি ভেড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বছর জুড়ে গরুর দাম বেশি থাকায় কোরবানির সময় কাক্সিক্ষত মুল্য পাবেন বলে আশা খামারিদের। ধানের বিচালী, কাঁচা ঘাস, খৈল, গমের ভুষি, ছোলা, ভাত, চালের কুঁড়া ইত্যাদি খাইয়ে গরু হৃষ্ট-পুষ্ট করেছেন এসব খামারিরা। কতিপয় অসাধু খামারির কারণে প্রকৃত খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে এবং অসাধু খামারিকে চিহ্নিতের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এছাড়াও খামারিদের দাবি, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোন ক্রমেই যাতে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতীয় গরু আমদানি না করা হয়। তাহলে কাক্সিক্ষত মূল্য পাবেন না খামারিরা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও পশু পালনকারীরা গরু পালনে উৎসাহ হারাবে। গাংনীর বালিয়াঘাট মা এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আবু নাঈম জানান, তার খামারে ৬০টি গরু মোটা হৃষ্ট-পুষ্টকরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪০টি হরিয়ান ও ২০টি নেপালী জাতের গরু। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি। খরচও কম। অন্যান্যবার অনেক খামারি হরমণ জাতিয় ওষুধ ব্যবহার করে মোটাতাজাকরণ করায় বেশ কয়েকটি গরু মারা যায়। আবার বিক্রি করতে না পারায় গরুগুলো ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছেন। এজন্য দেশীয় প্রযুক্তিতে গরু পালন করা হচ্ছে। তবে ভারত থেকে পশু আমদানি না করা হলে কাক্সিক্ষত মূল্য পাবেন বলেও আশাবাদ তিনি। গাংনী উপজেলার মালসাদহ গ্রামের গরুর খামারি ইনামুল হক জানান, তাঁর খামারে ১৮টি নেপালী ও ১২টি হরিয়ান জাতের গরু আছে। ক্ষতিকারক ইঞ্জেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করলে ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় গরু মারাও যায়।

ফলে ঝুঁকি না নিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। তবে শহর কেন্দ্রিক মানুষের মাঝে গরু মোটাতাজাকরণে স্টরয়েড ও হরমন ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অপপ্রচারে চিন্তিত তারা।

পারিবারিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন সহড়াবাড়িয়ার কালু। তিনি বাড়িতে ৫টি হরিয়ান জাতের গরু পালছেন। এবারও ঢাকায় নিবেন গরু। তিনি জানান, গরুর খাবার ও ওষুধসহ পালন খরচ প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় গরুর দাম বৃদ্ধি পায়নি। বাড়িতে ব্যাপারীরা আসছেন কিন্তু দাম বলছেন অনেক কম। ব্যাপারীরা যে দাম হাকছেন তাতে খরচের অর্ধেকটাও উঠবে না। তারপরও লাভের আশা করছেন তিনি। তবে ভারত থেকে পশু আমদানি না করার পরামর্শও দেন তিনি।

কুঞ্জনগরের গরুর বেপারী শফিউদ্দীন জানান, তিনি গতবার ২১০টি গরু ঢাকায় নিয়েছিলেন। এবার অন্তত ৩০০ গরু ঢাকার হাটে তুলবেন। ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু পছন্দ করছেন। সকল খামারি ও পারিবারিকভাবে পশু পালন করছেন করছেন প্রাকৃতিক উপায়ে ও দেশীয় খাবার দিয়ে। ফলে এবার কোন ঝুঁকি নেই খামারি ও ব্যবসায়ীদের।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দীন জানান, ঈদকে সামনে রেখে কোন ক্রমেই যাতে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু না আসতে পারে সেই লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও হাটে স্টরয়েড ও হরমন ব্যবহারে মোটাতাজাকরণ গরু না তুলতে পারে সেজন্য হাটগুলোতে মোবাইল কোর্টসহ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের একাধিক টিম থাকবে।

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পশু ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলছেন কারণ তাদের কোরবানির পশু ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিতে আর ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। পশুর মৃত্যুও ঝুঁকিও থাকবে না। পদ্মা সেতুর কারণে তারা তাদের পশুর উপযুক্ত মূল্য পাবেন বলে আশাবাদী।