জি-৭ সম্মেলন ২০২২

চীনকে টেক্কা দিতে ৬০ হাজার কোটি ডলার তহবিল গঠনের ঘোষণা

বিশ্বজুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারকারী বহুমুখী প্রকল্প ?‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’কে (বিআরআই) টেক্কা দিতে ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ এর নেতারা।

একুশ শতকের ‘সিল্ক রোড’ বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই। স্থলপথে বহু করিডোরের বেষ্টনী আর সমুদ্রপথে সুদীর্ঘ এক শিপিং লেনের যাত্রাপথকে ঘিরেই প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে যার বাস্তব রূপ দিতে চাইছে চীন। মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে অর্থায়ন এবং চীনের মাল্টি ট্রিলিয়ন-ডলারের বিআরআই প্রকল্পের মোকাবিলায় ব্যবহারের জন্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং সরকারিভাবে এ তহবিল সংগ্রহ করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য জি-৭ নেতারা চলতি বছর দক্ষিণ জার্মানির শ্লোস এলমাউতে তাদের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন এবং সেখানে নতুন নামকরণের মাধ্যমে ‘পার্টনারশিপ ফর গোবাল ইনফ্রাসট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’ নামে প্রকল্প পুনরায় চালু করা হয়। বাইডেন বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তার জন্য পাঁচ বছরের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান, ফেডারেল তহবিল এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ থেকে সংগ্রহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি পরিষ্কার করে দিতে চাই। এটি কোনো সাহায্য বা দাতব্য (তহবিল) নয়। এটি এমন একটি বিনিয়োগ যা প্রত্যেকের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুনির্দিষ্ট সুবিধাগুলো দেখতে দেবে দেশগুলো।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলো, বিভিন্ন উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল এবং অন্যান্য খাত থেকে শত শত বিলিয়ন অতিরিক্ত ডলার আসতে পারে।

জি-৭ এর সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের টেকসই বিকল্প গড়ে তোলার জন্য পাঁচ বছরের ওই একই সময়সীমায় ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ইউরো সংগ্রহ করবে ইউরোপ।

সম্মেলনে ইতালি, কানাডা এবং জাপানের নেতারাও তাদের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। যার কয়েকটি ইতোমধ্যে আলাদাভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। চীনের বহুমুখী প্রকল্প ?‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’-এর মাধ্যমে ১০০ টিরও বেশি দেশে উন্নয়ন কর্মকা-সহ নানা কর্মসূচি চালাচ্ছে বেইজিং। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি মূলত এশিয়া থেকে ইউরোপে প্রাচীন সিল্ক রোড বাণিজ্য রুটের একটি আধুনিক সংস্করণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

উচ্চাভিলাষী এই বিআরআই প্রকল্পের আওতায় চীন অনেক দেশের রেলপথ, বন্দর, মহাসড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে সহায়তা করছে। বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশ চীনের এই বৃহৎ প্রকল্পে স্বাক্ষর করেছে। অনেকে একে অবশ্য ঋণের ফাঁদও বলে থাকেন।

অবশ্য সমালোচকদের মতে, জিনপিংয়ের বিআরআই প্রকল্প হলো প্রাচীন বাণিজ্য রুট ‘সিল্ক রোডের’ আধুনিক সংস্করণ। যার মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা ছাড়াও অন্যান্য স্থানে দেশে উৎপাদিত বিপুল পণ্যের সঙ্গে কমিউনিস্ট ভাবধারা ছড়িয়ে দিতে চায় চীন।

এদিকে, ইউক্রেন আগ্রাসনের পর বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জি-৭ নেতাদের এক সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকের শুরুতে, সাতটি ধনী দেশের মধ্যে চারটি দেশ রাশিয়ার সোনা আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

ব্রিটিশ সরকার জানায় যে, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং কানাডা রাশিয়ার স্বর্ণ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। জি-৭ এর বাকি তিন দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি রাশিয়ার স্বর্ণ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দলে যোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গত বছর রাশিয়া দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে স্বর্ণ রপ্তানি করে। জি-৭ এর আয়োজক জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস শীর্ষ সম্মেলনে সেনেগাল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকােেক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জলবায়ু, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গের সমতায়ন ও গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতি বছর জি-৭ নেতাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবার জি-৭ সম্মেলনে গুরুত্ব পাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির সংকট ও বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট কাটিয়ে উঠার উপায়সমূহ।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২ , ১৪ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

জি-৭ সম্মেলন ২০২২

চীনকে টেক্কা দিতে ৬০ হাজার কোটি ডলার তহবিল গঠনের ঘোষণা

image

জার্মানির মিউনিখে আয়োজিত বিশ্বের ধনী ও উন্নয়নশীল দেশের সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ সম্মেলনে শক্তিধর দেশগুলোর নেতারা -বিবিসি

বিশ্বজুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারকারী বহুমুখী প্রকল্প ?‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’কে (বিআরআই) টেক্কা দিতে ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ এর নেতারা।

একুশ শতকের ‘সিল্ক রোড’ বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই। স্থলপথে বহু করিডোরের বেষ্টনী আর সমুদ্রপথে সুদীর্ঘ এক শিপিং লেনের যাত্রাপথকে ঘিরেই প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে যার বাস্তব রূপ দিতে চাইছে চীন। মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে অর্থায়ন এবং চীনের মাল্টি ট্রিলিয়ন-ডলারের বিআরআই প্রকল্পের মোকাবিলায় ব্যবহারের জন্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং সরকারিভাবে এ তহবিল সংগ্রহ করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য জি-৭ নেতারা চলতি বছর দক্ষিণ জার্মানির শ্লোস এলমাউতে তাদের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন এবং সেখানে নতুন নামকরণের মাধ্যমে ‘পার্টনারশিপ ফর গোবাল ইনফ্রাসট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’ নামে প্রকল্প পুনরায় চালু করা হয়। বাইডেন বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তার জন্য পাঁচ বছরের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান, ফেডারেল তহবিল এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ থেকে সংগ্রহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি পরিষ্কার করে দিতে চাই। এটি কোনো সাহায্য বা দাতব্য (তহবিল) নয়। এটি এমন একটি বিনিয়োগ যা প্রত্যেকের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুনির্দিষ্ট সুবিধাগুলো দেখতে দেবে দেশগুলো।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলো, বিভিন্ন উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল এবং অন্যান্য খাত থেকে শত শত বিলিয়ন অতিরিক্ত ডলার আসতে পারে।

জি-৭ এর সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের টেকসই বিকল্প গড়ে তোলার জন্য পাঁচ বছরের ওই একই সময়সীমায় ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ইউরো সংগ্রহ করবে ইউরোপ।

সম্মেলনে ইতালি, কানাডা এবং জাপানের নেতারাও তাদের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। যার কয়েকটি ইতোমধ্যে আলাদাভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। চীনের বহুমুখী প্রকল্প ?‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’-এর মাধ্যমে ১০০ টিরও বেশি দেশে উন্নয়ন কর্মকা-সহ নানা কর্মসূচি চালাচ্ছে বেইজিং। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি মূলত এশিয়া থেকে ইউরোপে প্রাচীন সিল্ক রোড বাণিজ্য রুটের একটি আধুনিক সংস্করণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

উচ্চাভিলাষী এই বিআরআই প্রকল্পের আওতায় চীন অনেক দেশের রেলপথ, বন্দর, মহাসড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে সহায়তা করছে। বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশ চীনের এই বৃহৎ প্রকল্পে স্বাক্ষর করেছে। অনেকে একে অবশ্য ঋণের ফাঁদও বলে থাকেন।

অবশ্য সমালোচকদের মতে, জিনপিংয়ের বিআরআই প্রকল্প হলো প্রাচীন বাণিজ্য রুট ‘সিল্ক রোডের’ আধুনিক সংস্করণ। যার মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা ছাড়াও অন্যান্য স্থানে দেশে উৎপাদিত বিপুল পণ্যের সঙ্গে কমিউনিস্ট ভাবধারা ছড়িয়ে দিতে চায় চীন।

এদিকে, ইউক্রেন আগ্রাসনের পর বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জি-৭ নেতাদের এক সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকের শুরুতে, সাতটি ধনী দেশের মধ্যে চারটি দেশ রাশিয়ার সোনা আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

ব্রিটিশ সরকার জানায় যে, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং কানাডা রাশিয়ার স্বর্ণ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। জি-৭ এর বাকি তিন দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি রাশিয়ার স্বর্ণ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দলে যোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গত বছর রাশিয়া দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে স্বর্ণ রপ্তানি করে। জি-৭ এর আয়োজক জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস শীর্ষ সম্মেলনে সেনেগাল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকােেক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জলবায়ু, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গের সমতায়ন ও গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতি বছর জি-৭ নেতাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবার জি-৭ সম্মেলনে গুরুত্ব পাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির সংকট ও বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট কাটিয়ে উঠার উপায়সমূহ।