বন্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

প্রতিনিয়ত মানুষকে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। অনৈতিকতার সঙ্গে নৈতিকতার যুদ্ধ। মন্দের সঙ্গে ভালোর যুদ্ধ। মিথ্যের সঙ্গে সত্যের যুদ্ধ। অমানবতার সঙ্গে মানবতার যুদ্ধ। এসব যুদ্ধের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আবার যোগ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত যুদ্ধ। খরা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেশটিতে নেমে আসে প্রায় প্রায়ই। তন্মধ্যে বন্যা যেন এক চিরচেনা বিপর্যয়। বলতে গেলে প্রতি বছরই এটি আসে আমাদের মাঝে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

বর্ষার শুরুতেই কিছুদিন আগে সিলেট অঞ্চলে একবার বন্যা হয়ে যায়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো বন্যায় ভাসে ওখানকার মানুষ। এবারের বন্যা আগের তুলনায় তো বটেই, স্মরণ কালের তুলনায় ভয়াবহ। প্রায় ৯০ ভাগ অঞ্চলই পানিতে ডুবে গেছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম। মানুষের ঘরবাড়ি, ধানচাল, গবাদিপশু ভেসে গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। নেই তাদের আশ্রয়স্থল। পশু-মানুষ একসঙ্গে বাস করছে। ঘরের ভেতরের পানিতে সাপ সাঁতরাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ইন্টারনেট নেই। এক বিপর্যস্ত জনজীবন। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর জন্য চাই সরকারের সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা, সরকারি নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা সর্বোপরি দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সর্ব ক্ষেত্রে মানবিক হয়ে ওঠা।

দুই দিন আগে দৈনিক সংবাদের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর দেখলাম। ‘বাঁচার জন্য লড়াই, ত্রাণের জন হাহাকার’। সত্যি খবরটি পড়ে আমার বুকটাও হাহাকার করে উঠল। আর কতোকাল বাঙালিদের এভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করতে হবে? ত্রানের জন্য হাহাকার করতে হবে? প্রধানমন্ত্রী সেদিন বন্যাদুর্গতদের দেখতে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ হয়ে সিলেটে যান। দেশের অভিভাবক হিসেবে তিনি যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যি প্রশংসনীয়। তার এ শুভাগমনে সেখানকার অসহায় লোকজনের মাঝে আশার আলো ফুটে উঠেছিল। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দুর্গতদের মাঝে হাজির হয়েছেন এবং কাছে থেকে স্বচক্ষে ক্ষয়ক্ষতি দেখেছেন সেহেতু সাহায্য সহযোগিতার পরিমাণ অনক গুণে বেড়ে যাবে বলেই স্থানীয়রা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু পত্রিকায় দেখলাম, ‘ত্রাণের আশায় ছুটছে মানুষ’ কিংবা ‘ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেদিন ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সাহায্যার্থে তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবেই স্থানীয় নেতা কর্মী ও দায়িত্বশীলদের আদেশ দেন, যা দুর্গতদের মনে সাহস সঞ্চারিত ও বিশ্বাসের ভিতকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতাকর্মীদের আদেশ দিয়েছেন। তালিকা তৈরি করতে বলেছেন। আমি তার দায়িত্বশীলতা ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনার নির্দেশকে শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এক শ্রেণীর তথাকথিত নেতা আছেন, যারা সারা বছর এমন একটি দুর্যোগের জন্য মুখিয়ে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই তাদের কাছে উৎসব। কেউ কেউ আছেন প্রকৃত সেবার পরিবর্তে ফটোশেসানের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ কেউ গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের ত্রাণ লুটেপুটে খেয়ে নিজের পকেট ভারী করেন। কেউবা আবার দুর্গতদের তালিকা করার ক্ষেত্রেও হীনমন্যতার পরিচয় দেন। অসচ্ছতা ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেন। এবার ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে অতীতের মতো এসব অসঙ্গতি উঠে আসবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। সংশ্লিষ্ট মহলসহ প্রধানমন্ত্রী নিজে যেন বিষয়গুলোর ওপর নজরদারি রাখেন সে দাবি রইল।

বন্য শুধু সিলেট, সুনামগঞ্জ নয়, নেত্রকোনাতেও প্রচ-ভাবে আঘাত হেনেছে। শত শত পরিবার নিজের বাড়িঘর ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশে বন্যা একটি জাতীয় সমস্যা। এটি শুধু০ সিলেট, সুনামগঞ্জ বা নেত্রকোনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর নিষ্ঠুর তা-ব সারা দেশেই ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়বে। তাই গোটা দেশে বন্যা মোকাবিলায় আমাদের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এত বিশাল জনগোষ্ঠী সম্পন্ন একটি দেশে যে কোন দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে শুধু সরকারের একক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য সমাজের বিত্তশালীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের দুটো বড়ো দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রবাসীদের অনুদান অনস্বীকার্য। তারা দেশের যে কোন বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে তহবিল গঠনের চেষ্টা চলছে। আমাদের আয়ারল্যান্ডেও এ চেষ্টা অব্যাহত। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তহবিল গঠনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রবাসীদের অনুদান ও বহির্বিশ্ব থেকে প্রাপ্ত সাহায্য যেন হরিলুট না হয় অর্থাৎ প্রকৃত অভাবী বা দুর্গতদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায় সে দিকে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারককে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। বেড়ায় যেন ক্ষেত না খেয়ে বসে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবেই শুধু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সুফল পেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

বন্যা একটি জাতীয় সমস্যা। বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। অতিবৃষ্টি, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল আবার কখনো কখনো পাশের দেশে নদীর সøুইসগেট খুলে দেয়া প্রভৃতি কারণে বস্তুত আমাদের দেশে বন্যা হানা দেয়। বন্যাকবলিত মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে শুধু সাময়িক শ্বাস ফেলানো যায়, কিন্তু এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। তা করতে হলে নদ-নদী, খাল-বিল বা জলাশয়ের ভরাট রোধ করতে হবে। নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। নদী ও খাল খনন কর্মসূচিকে জোরদার করতে হবে। শহরের ড্রেন বা নর্দমাগুলোকে যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও খনন করে রাখতে হবে, যাতে করে বৃষ্টির পানি জমে শহরে অনাকাক্সিক্ষত বন্যার সৃষ্টি করতে না পারে। বন্যার মতো একটি ভয়ানক দুর্যোগকে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বিষয়গুলোর ওপর কঠোর দৃষ্টি আরোপ করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

[লেখক : প্রাবন্ধিক, লিমরিক, আয়ারল্যান্ড]

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২ , ১৪ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

বন্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

image

প্রতিনিয়ত মানুষকে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। অনৈতিকতার সঙ্গে নৈতিকতার যুদ্ধ। মন্দের সঙ্গে ভালোর যুদ্ধ। মিথ্যের সঙ্গে সত্যের যুদ্ধ। অমানবতার সঙ্গে মানবতার যুদ্ধ। এসব যুদ্ধের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আবার যোগ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত যুদ্ধ। খরা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেশটিতে নেমে আসে প্রায় প্রায়ই। তন্মধ্যে বন্যা যেন এক চিরচেনা বিপর্যয়। বলতে গেলে প্রতি বছরই এটি আসে আমাদের মাঝে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

বর্ষার শুরুতেই কিছুদিন আগে সিলেট অঞ্চলে একবার বন্যা হয়ে যায়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো বন্যায় ভাসে ওখানকার মানুষ। এবারের বন্যা আগের তুলনায় তো বটেই, স্মরণ কালের তুলনায় ভয়াবহ। প্রায় ৯০ ভাগ অঞ্চলই পানিতে ডুবে গেছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম। মানুষের ঘরবাড়ি, ধানচাল, গবাদিপশু ভেসে গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। নেই তাদের আশ্রয়স্থল। পশু-মানুষ একসঙ্গে বাস করছে। ঘরের ভেতরের পানিতে সাপ সাঁতরাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ইন্টারনেট নেই। এক বিপর্যস্ত জনজীবন। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর জন্য চাই সরকারের সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা, সরকারি নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা সর্বোপরি দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সর্ব ক্ষেত্রে মানবিক হয়ে ওঠা।

দুই দিন আগে দৈনিক সংবাদের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর দেখলাম। ‘বাঁচার জন্য লড়াই, ত্রাণের জন হাহাকার’। সত্যি খবরটি পড়ে আমার বুকটাও হাহাকার করে উঠল। আর কতোকাল বাঙালিদের এভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করতে হবে? ত্রানের জন্য হাহাকার করতে হবে? প্রধানমন্ত্রী সেদিন বন্যাদুর্গতদের দেখতে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ হয়ে সিলেটে যান। দেশের অভিভাবক হিসেবে তিনি যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যি প্রশংসনীয়। তার এ শুভাগমনে সেখানকার অসহায় লোকজনের মাঝে আশার আলো ফুটে উঠেছিল। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দুর্গতদের মাঝে হাজির হয়েছেন এবং কাছে থেকে স্বচক্ষে ক্ষয়ক্ষতি দেখেছেন সেহেতু সাহায্য সহযোগিতার পরিমাণ অনক গুণে বেড়ে যাবে বলেই স্থানীয়রা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু পত্রিকায় দেখলাম, ‘ত্রাণের আশায় ছুটছে মানুষ’ কিংবা ‘ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেদিন ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সাহায্যার্থে তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবেই স্থানীয় নেতা কর্মী ও দায়িত্বশীলদের আদেশ দেন, যা দুর্গতদের মনে সাহস সঞ্চারিত ও বিশ্বাসের ভিতকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতাকর্মীদের আদেশ দিয়েছেন। তালিকা তৈরি করতে বলেছেন। আমি তার দায়িত্বশীলতা ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনার নির্দেশকে শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এক শ্রেণীর তথাকথিত নেতা আছেন, যারা সারা বছর এমন একটি দুর্যোগের জন্য মুখিয়ে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই তাদের কাছে উৎসব। কেউ কেউ আছেন প্রকৃত সেবার পরিবর্তে ফটোশেসানের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ কেউ গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের ত্রাণ লুটেপুটে খেয়ে নিজের পকেট ভারী করেন। কেউবা আবার দুর্গতদের তালিকা করার ক্ষেত্রেও হীনমন্যতার পরিচয় দেন। অসচ্ছতা ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেন। এবার ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে অতীতের মতো এসব অসঙ্গতি উঠে আসবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। সংশ্লিষ্ট মহলসহ প্রধানমন্ত্রী নিজে যেন বিষয়গুলোর ওপর নজরদারি রাখেন সে দাবি রইল।

বন্য শুধু সিলেট, সুনামগঞ্জ নয়, নেত্রকোনাতেও প্রচ-ভাবে আঘাত হেনেছে। শত শত পরিবার নিজের বাড়িঘর ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশে বন্যা একটি জাতীয় সমস্যা। এটি শুধু০ সিলেট, সুনামগঞ্জ বা নেত্রকোনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর নিষ্ঠুর তা-ব সারা দেশেই ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়বে। তাই গোটা দেশে বন্যা মোকাবিলায় আমাদের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এত বিশাল জনগোষ্ঠী সম্পন্ন একটি দেশে যে কোন দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে শুধু সরকারের একক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য সমাজের বিত্তশালীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের দুটো বড়ো দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রবাসীদের অনুদান অনস্বীকার্য। তারা দেশের যে কোন বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে তহবিল গঠনের চেষ্টা চলছে। আমাদের আয়ারল্যান্ডেও এ চেষ্টা অব্যাহত। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তহবিল গঠনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রবাসীদের অনুদান ও বহির্বিশ্ব থেকে প্রাপ্ত সাহায্য যেন হরিলুট না হয় অর্থাৎ প্রকৃত অভাবী বা দুর্গতদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায় সে দিকে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারককে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। বেড়ায় যেন ক্ষেত না খেয়ে বসে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবেই শুধু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সুফল পেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

বন্যা একটি জাতীয় সমস্যা। বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। অতিবৃষ্টি, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল আবার কখনো কখনো পাশের দেশে নদীর সøুইসগেট খুলে দেয়া প্রভৃতি কারণে বস্তুত আমাদের দেশে বন্যা হানা দেয়। বন্যাকবলিত মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে শুধু সাময়িক শ্বাস ফেলানো যায়, কিন্তু এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। তা করতে হলে নদ-নদী, খাল-বিল বা জলাশয়ের ভরাট রোধ করতে হবে। নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। নদী ও খাল খনন কর্মসূচিকে জোরদার করতে হবে। শহরের ড্রেন বা নর্দমাগুলোকে যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও খনন করে রাখতে হবে, যাতে করে বৃষ্টির পানি জমে শহরে অনাকাক্সিক্ষত বন্যার সৃষ্টি করতে না পারে। বন্যার মতো একটি ভয়ানক দুর্যোগকে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বিষয়গুলোর ওপর কঠোর দৃষ্টি আরোপ করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

[লেখক : প্রাবন্ধিক, লিমরিক, আয়ারল্যান্ড]