ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কায় দুই সপ্তাহের জন্য জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ সময়ে শুধু জরুরি পরিষেবায় যুক্ত গাড়িগুলোতে পেট্রোল ও ডিজেল সরবরাহ করা হবে। নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহ দেশটিতে কেবল বাস, ট্রেন এবং ওষুধ ও খাদ্যপণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের জন্য জ্বালানি কেনা যাবে।
এর আগে, দেশটির রাজধানী কলম্বো এবং এর আশপাশের এলাকায় স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশটির কর্মকর্তাদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। জ্বালানি সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি তেলের পাম্পগুলোতে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে। যারা জ্বালানি কিনতে আসছেন, সেনা সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে পাম্পের সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। পাম্পে তেলের সরবরাহ এলে তবেই পেট্রোল, ডিজেল কিনতে পারছেন তারা।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বেলআউটের আবেদন করেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লঙ্কান সরকারের আলাচনা শুরু হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সরকার জানায়, আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত দেশে ব্যক্তিগত যানবাহনের পেট্রল এবং ডিজেল কেনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র বানডুলা গুনেওয়ার্দেনা বলেছেন, শ্রীলঙ্কা তার ইতিহাসে কখনই এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়নি।
নগদ অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা এই দেশটি ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রধান জ্বালানি উৎপাদনকারী রাশিয়া এবং কাতারে সরকারি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। সস্তা তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লঙ্কান প্রতিনিধিরা দেশ দু’টি সফরে গেছেন।
শ্রীলঙ্কার সরকারের মজুদে ৯ হাজার টনের মতো ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রল আছে বলে জানিয়েছিলেন দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী। নতুন চালান কবে আসবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ভারতীয় অয়েল কর্পোরেশনের (আইওসি) শাখা লঙ্কা আইওসি রয়টার্সকে বলেছে, তাদের কাছে এখন ২২ হাজার টন ডিজেল ও সাড়ে ৭ হাজার টন পেট্রল আছে। ১৩ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে পেট্রল ও ডিজেল মিলিয়ে ৩০ হাজার টনের আরেকটি চালান পাওয়ারও প্রত্যাশা করছে তারা।
কেবল পরিবহন সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই দেশটির প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন ডিজেল ও তিন হাজার টন পেট্রল লাগে বলে জানিয়েছেন লঙ্কা আইওসির প্রধান মনোজ গুপ্ত। এরপর জ্বালানির বড় ভোক্তা হল পোশাক ও টেক্সটাইলের মতো খাতগুলো; মে-তে শ্রীলঙ্কার পোশাক ও টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর রপ্তানি ৩০ শতাংশ বেড়ে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারে পৌঁছেছিল বলে সোমবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
“আমাদের হাতে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের জ্বালানি আছে, আমরা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মজুদে নতুন জ্বালানি আসে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করছি, দেখি সামনের দিনগুলোতে কী দাঁড়ায়,” বলেছেন শ্রীলঙ্কা জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের মহাসচিব ইয়োহান লরেন্স।
শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে এবং লোডশেডিং সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখতে দ্বীপদেশটিকে এখন মজুদে থাকা শেষ দিককার ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। সোমবার থেকে দেশটিতে পূর্বঘোষিত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আড়াই ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে তিন ঘণ্টা করা হয়েছে।
“আগামী দুই মাস লোডশেডিং তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে রাখার আশা করছি আমরা। দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এটা বদলেও যেতে পারে,” বলেছেন শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটিস কমিশনের চেয়ারম্যান জানাকা রতœায়েকে।
৩০০ কোটি ডলারের বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতে আইএমএফের একটি দল এখন শ্রীলঙ্কা সফর করছে। বৃহস্পতিবার ওই সফর শেষ হওয়ার আগে কর্মকর্তা পর্যায়ে এক ধরনের সমঝোতা হবে বলে দ্বীপদেশটি আশা করলেও তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশটি এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রও রাজি হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বুধবার, ২৯ জুন ২০২২ , ১৫ আষাড় ১৪২৮ ২৭ জিলকদ ১৪৪৩
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কায় দুই সপ্তাহের জন্য জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ সময়ে শুধু জরুরি পরিষেবায় যুক্ত গাড়িগুলোতে পেট্রোল ও ডিজেল সরবরাহ করা হবে। নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহ দেশটিতে কেবল বাস, ট্রেন এবং ওষুধ ও খাদ্যপণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের জন্য জ্বালানি কেনা যাবে।
এর আগে, দেশটির রাজধানী কলম্বো এবং এর আশপাশের এলাকায় স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশটির কর্মকর্তাদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। জ্বালানি সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি তেলের পাম্পগুলোতে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে। যারা জ্বালানি কিনতে আসছেন, সেনা সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে পাম্পের সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। পাম্পে তেলের সরবরাহ এলে তবেই পেট্রোল, ডিজেল কিনতে পারছেন তারা।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বেলআউটের আবেদন করেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লঙ্কান সরকারের আলাচনা শুরু হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সরকার জানায়, আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত দেশে ব্যক্তিগত যানবাহনের পেট্রল এবং ডিজেল কেনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র বানডুলা গুনেওয়ার্দেনা বলেছেন, শ্রীলঙ্কা তার ইতিহাসে কখনই এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়নি।
নগদ অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা এই দেশটি ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রধান জ্বালানি উৎপাদনকারী রাশিয়া এবং কাতারে সরকারি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। সস্তা তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লঙ্কান প্রতিনিধিরা দেশ দু’টি সফরে গেছেন।
শ্রীলঙ্কার সরকারের মজুদে ৯ হাজার টনের মতো ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রল আছে বলে জানিয়েছিলেন দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী। নতুন চালান কবে আসবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ভারতীয় অয়েল কর্পোরেশনের (আইওসি) শাখা লঙ্কা আইওসি রয়টার্সকে বলেছে, তাদের কাছে এখন ২২ হাজার টন ডিজেল ও সাড়ে ৭ হাজার টন পেট্রল আছে। ১৩ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে পেট্রল ও ডিজেল মিলিয়ে ৩০ হাজার টনের আরেকটি চালান পাওয়ারও প্রত্যাশা করছে তারা।
কেবল পরিবহন সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই দেশটির প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন ডিজেল ও তিন হাজার টন পেট্রল লাগে বলে জানিয়েছেন লঙ্কা আইওসির প্রধান মনোজ গুপ্ত। এরপর জ্বালানির বড় ভোক্তা হল পোশাক ও টেক্সটাইলের মতো খাতগুলো; মে-তে শ্রীলঙ্কার পোশাক ও টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর রপ্তানি ৩০ শতাংশ বেড়ে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারে পৌঁছেছিল বলে সোমবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
“আমাদের হাতে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের জ্বালানি আছে, আমরা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মজুদে নতুন জ্বালানি আসে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করছি, দেখি সামনের দিনগুলোতে কী দাঁড়ায়,” বলেছেন শ্রীলঙ্কা জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের মহাসচিব ইয়োহান লরেন্স।
শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে এবং লোডশেডিং সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখতে দ্বীপদেশটিকে এখন মজুদে থাকা শেষ দিককার ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। সোমবার থেকে দেশটিতে পূর্বঘোষিত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আড়াই ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে তিন ঘণ্টা করা হয়েছে।
“আগামী দুই মাস লোডশেডিং তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে রাখার আশা করছি আমরা। দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এটা বদলেও যেতে পারে,” বলেছেন শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটিস কমিশনের চেয়ারম্যান জানাকা রতœায়েকে।
৩০০ কোটি ডলারের বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতে আইএমএফের একটি দল এখন শ্রীলঙ্কা সফর করছে। বৃহস্পতিবার ওই সফর শেষ হওয়ার আগে কর্মকর্তা পর্যায়ে এক ধরনের সমঝোতা হবে বলে দ্বীপদেশটি আশা করলেও তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশটি এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রও রাজি হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।