পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে, অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় বন্যা দুর্গতরা
সংকটে পড়েছে সিলেটবাসী। প্রথম দফার বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ১৭ জুন থেকে দ্বিতীয় দফার বন্যার ভয়াবহতা এতটাই যে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার ও তাদের ত্রাণ দিয়ে কুল-কিনারা পাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। এখনও নানাস্থানে পানিবন্দী মানুষ। বাড়ি-ঘর, সহায়সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। করোনার সংক্রমণও ঊর্ধ্বগতি। পবিত্র ঈদুল আজহাও সামনে। ফলে বানভাসিরা রয়েছেন চরম অর্থনৈতিক সংকটে। ধীরগতিতে পানি নামার ফলে দুর্গতদের সহায়তায় গতকাল নতুন করে আরও তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বণ্টনসহ রাস্তাঘাট মেরামতে সিলেট অঞ্চলে এখন সেনাবাহিনীই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরইমাঝে বৃষ্টি হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে।
সিলেটের উপজেলাগুলোতে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামলেও মানুষের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। ত্রাণের জন্য এখনও ছুটছেন মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় জিনিসপত্রের দাম স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাড়ালেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। অর্থনৈতিক সংকটে পানিতে প্লাবিত বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনরায় সংস্কার করতে সিলেট প্রশাসনের দুশ্চিন্তা কাটছে না।
সরকারি হিসাব বলছে, সিলেট জেলায় বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫৪টি। গতকাল পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ও জেলার ১৩টি উপজেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৯ হাজার ৭৭২ জন আশ্রিত মানুষ ছিলেন। আশ্রিত লোকদের অধিকাংশেরই বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে বরাদ্দও অপ্রতুল বলছেন স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সে সবই সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা শতভাগ বিতরণ করতে পারেননি। ত্রাণ যেন দ্রুততার সঙ্গে মানুষের হাতে পৌঁছায়, সেটা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুনর্বাসনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এখনও ত্রাণের জন্য মানুষ বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হচ্ছে, ছুটছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ত্রাণের আশায় শত শত মানুষ ফটকে ভিড় করে প্রতিদিন। অনেকে ত্রাণ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যায়।
সেনাবাহিনীর নতুন তিন ক্যাম্প স্থাপন
বানভাসিদের সহায়তার জন্য গতকাল সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় নতুন করে তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী। এ নিয়ে দুই জেলায় মোট ২৫টি ক্যাম্প থেকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার অংশ হিসেবে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার এবং তাদের মাঝে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা।
গতকাল সিলেট সেনানিবাসের এক প্রেস নোটে জানানো হয়, সেনাপ্রধানের নির্দেশে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ২০টি উপজেলায় সেনা মোতায়েন রয়েছে। গতকাল নতুন করে তিনটি ক্যাম্প স্থাপনসহ মোট ২৫টি উপজেলায় কাজ করছে সেনাবাহিনী। উদ্ধার কার্যক্রম ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও তারা মেডিকেল টিমের সহায়তার পাশাপাশি দুর্গম এলাকা থেকে জরুরি ভিত্তিতে বিপন্ন রোগীদের হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করছে।
বৃষ্টিতে নতুন আতঙ্ক
বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামলেও এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই গতকাল সকালে সিলেটে থেকে থেমে বৃষ্টি হয়। এ কারণে আবার বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে এ জেলায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী কয়েক দিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে। ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটের দিকে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে আবারও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। তবে গতকাল সকাল থেকে হওয়া বৃষ্টিতে জেলার নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বাড়েনি বরং কিছুটা কমেছে।
বৃষ্টির কারণে সকালের দিকে নগরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল।
বুধবার, ২৯ জুন ২০২২ , ১৫ আষাড় ১৪২৮ ২৭ জিলকদ ১৪৪৩
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে, অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় বন্যা দুর্গতরা
আকাশ চৌধুরী, সিলেট
সংকটে পড়েছে সিলেটবাসী। প্রথম দফার বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ১৭ জুন থেকে দ্বিতীয় দফার বন্যার ভয়াবহতা এতটাই যে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার ও তাদের ত্রাণ দিয়ে কুল-কিনারা পাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। এখনও নানাস্থানে পানিবন্দী মানুষ। বাড়ি-ঘর, সহায়সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। করোনার সংক্রমণও ঊর্ধ্বগতি। পবিত্র ঈদুল আজহাও সামনে। ফলে বানভাসিরা রয়েছেন চরম অর্থনৈতিক সংকটে। ধীরগতিতে পানি নামার ফলে দুর্গতদের সহায়তায় গতকাল নতুন করে আরও তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বণ্টনসহ রাস্তাঘাট মেরামতে সিলেট অঞ্চলে এখন সেনাবাহিনীই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরইমাঝে বৃষ্টি হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে।
সিলেটের উপজেলাগুলোতে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামলেও মানুষের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। ত্রাণের জন্য এখনও ছুটছেন মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় জিনিসপত্রের দাম স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাড়ালেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। অর্থনৈতিক সংকটে পানিতে প্লাবিত বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনরায় সংস্কার করতে সিলেট প্রশাসনের দুশ্চিন্তা কাটছে না।
সরকারি হিসাব বলছে, সিলেট জেলায় বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫৪টি। গতকাল পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ও জেলার ১৩টি উপজেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৯ হাজার ৭৭২ জন আশ্রিত মানুষ ছিলেন। আশ্রিত লোকদের অধিকাংশেরই বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে বরাদ্দও অপ্রতুল বলছেন স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সে সবই সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা শতভাগ বিতরণ করতে পারেননি। ত্রাণ যেন দ্রুততার সঙ্গে মানুষের হাতে পৌঁছায়, সেটা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুনর্বাসনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এখনও ত্রাণের জন্য মানুষ বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হচ্ছে, ছুটছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ত্রাণের আশায় শত শত মানুষ ফটকে ভিড় করে প্রতিদিন। অনেকে ত্রাণ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যায়।
সেনাবাহিনীর নতুন তিন ক্যাম্প স্থাপন
বানভাসিদের সহায়তার জন্য গতকাল সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় নতুন করে তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী। এ নিয়ে দুই জেলায় মোট ২৫টি ক্যাম্প থেকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার অংশ হিসেবে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার এবং তাদের মাঝে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা।
গতকাল সিলেট সেনানিবাসের এক প্রেস নোটে জানানো হয়, সেনাপ্রধানের নির্দেশে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ২০টি উপজেলায় সেনা মোতায়েন রয়েছে। গতকাল নতুন করে তিনটি ক্যাম্প স্থাপনসহ মোট ২৫টি উপজেলায় কাজ করছে সেনাবাহিনী। উদ্ধার কার্যক্রম ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও তারা মেডিকেল টিমের সহায়তার পাশাপাশি দুর্গম এলাকা থেকে জরুরি ভিত্তিতে বিপন্ন রোগীদের হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করছে।
বৃষ্টিতে নতুন আতঙ্ক
বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামলেও এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই গতকাল সকালে সিলেটে থেকে থেমে বৃষ্টি হয়। এ কারণে আবার বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে এ জেলায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী কয়েক দিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে। ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটের দিকে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে আবারও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। তবে গতকাল সকাল থেকে হওয়া বৃষ্টিতে জেলার নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বাড়েনি বরং কিছুটা কমেছে।
বৃষ্টির কারণে সকালের দিকে নগরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল।