সুনামগঞ্জে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা

বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় বেসরকারি ২৫ হাজার পুকুর, সরকারি পুকুর মৎস্য অধিদপ্তরাধীন ২০টি, এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৫৩টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫০০ জন মৎস্যচাষি। মাছ ভেসে গেছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন, পোনা মাছ ভেসে গেছে ১০ কোটি পিস। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকার। মোট ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার। এমতাবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে মাছচাষিদের। তাদের মধ্যে অনেকেই ঋণ নিয়ে ফিশারিতে মাছ চাষ করেন। বন্যার পানিতে ফিশারির মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। ঋণ পরিশোধ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক মৎস্যচাষি।

ঋণ নিয়ে অনেকেই ফিশারি ও পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। বন্যার পানিতে এসব মাছের পোনা ভেসে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করা নিয়েও এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তাছাড়া সরকারিভাবে মৎস্য খামারের পুনর্বাসন না থাকায় অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চরম এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদের কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানান মৎস্যচাষিরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌড়ারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের মৎস্য খামারি সোহেল রানা জানান, তিনি মোট ১০টি পুকুরে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু গত ভয়াবহ বন্যার সময় তার সব মাছ ভেসে গেছে। এতে তার কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সোহেল রানা এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। ব্যাংক ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন আবার সংসার কিভাবে চালাবেন সেই চিন্তায় এখন দিশেহারা। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, সরকার যেন অনুদান দেয় এবং মাছের খাদ্যের মূল্য কমায়। একই এলাকার মৎস্য খামারি দারু মিয়া জানান, তিনিও আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন। সব বানের জলে ভেসে গেছে। তার সকল স্বপ্ন সাধ চুরমার হয়ে গেছে। সরকার যদি মৎস্য খামারিদের অনুদান বা প্রণোদনা প্রদান না করে তাহলে তাদের পথে বসা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা নেই। সহজ শর্তে এবং কম সুদে ব্যাংক ঋণ দেয়ারও দাবি জানান দুই মৎস্য খামারি।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল ম-ল বলেন, ‘বন্যাকবলিত হয়ে জেলায় ১৬ হাজার ৫০০ জন মৎস্যচাষির শতভাগ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সব মৎস্য খামারির ক্ষতির তালিকা তৈরি করে মৎস্য অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে । ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে খামারিদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে বন্যাকবলিত সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পনর্বাসনের বিষয়ে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নগদ অর্থ ও মাছের খাদ্যসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে তারা আবার ও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন।

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২ , ১৫ আষাড় ১৪২৮ ২৭ জিলকদ ১৪৪৩

সুনামগঞ্জে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় বেসরকারি ২৫ হাজার পুকুর, সরকারি পুকুর মৎস্য অধিদপ্তরাধীন ২০টি, এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৫৩টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫০০ জন মৎস্যচাষি। মাছ ভেসে গেছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন, পোনা মাছ ভেসে গেছে ১০ কোটি পিস। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকার। মোট ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার। এমতাবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে মাছচাষিদের। তাদের মধ্যে অনেকেই ঋণ নিয়ে ফিশারিতে মাছ চাষ করেন। বন্যার পানিতে ফিশারির মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। ঋণ পরিশোধ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক মৎস্যচাষি।

ঋণ নিয়ে অনেকেই ফিশারি ও পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। বন্যার পানিতে এসব মাছের পোনা ভেসে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করা নিয়েও এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তাছাড়া সরকারিভাবে মৎস্য খামারের পুনর্বাসন না থাকায় অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চরম এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদের কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানান মৎস্যচাষিরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌড়ারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের মৎস্য খামারি সোহেল রানা জানান, তিনি মোট ১০টি পুকুরে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু গত ভয়াবহ বন্যার সময় তার সব মাছ ভেসে গেছে। এতে তার কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সোহেল রানা এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। ব্যাংক ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন আবার সংসার কিভাবে চালাবেন সেই চিন্তায় এখন দিশেহারা। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, সরকার যেন অনুদান দেয় এবং মাছের খাদ্যের মূল্য কমায়। একই এলাকার মৎস্য খামারি দারু মিয়া জানান, তিনিও আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন। সব বানের জলে ভেসে গেছে। তার সকল স্বপ্ন সাধ চুরমার হয়ে গেছে। সরকার যদি মৎস্য খামারিদের অনুদান বা প্রণোদনা প্রদান না করে তাহলে তাদের পথে বসা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা নেই। সহজ শর্তে এবং কম সুদে ব্যাংক ঋণ দেয়ারও দাবি জানান দুই মৎস্য খামারি।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল ম-ল বলেন, ‘বন্যাকবলিত হয়ে জেলায় ১৬ হাজার ৫০০ জন মৎস্যচাষির শতভাগ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সব মৎস্য খামারির ক্ষতির তালিকা তৈরি করে মৎস্য অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে । ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে খামারিদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে বন্যাকবলিত সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পনর্বাসনের বিষয়ে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নগদ অর্থ ও মাছের খাদ্যসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে তারা আবার ও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন।