রংপুর সদরসহ ছয় এলএসডি গুদামে কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি

রংপুর বিভাগের আওতাধীন এলএসডি রংপুর সদরসহ ৬টি খাদ্যগুদামে অনিয়মিতভাবে ডিওতে গ্রহীতার স্বাক্ষর ছাড়াই ৪৫ লাখ টাকার ১০৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণসহ কোটি টাকার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে নিরীক্ষা কমিটি। তথ্য অধিকার আইনে সম্পন্ন অডিট রিপোর্ট নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনিয়মিতভাবে গ্রহীতার স্বাক্ষর ছাড়াই ৪৫ লাখ ৪১ হাজার ২০৭ টাকা মূল্যের ১০৭ দশমিক ৭৩৩ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। মালামাল গ্রহণের সময় ডিওতে গ্রহীতা স্বাক্ষর করে খাদ্যশস্য গ্রহণ করার কথা থাকলেও নিরীক্ষাকালে দেখা যায়, এলএসডি রংপুর সদরে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৮১১ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য এলএসডি শঠিবাড়ি রংপুরে ২০১৭ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০১ টাকা, এলএসডি ঠাকুরগায়ে ২০১৭-১৮ সালে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭ টাকা, এলএসডি ডোমার নীলফামারী ২০১৭-১৮ সালে ৭০ হাজার ৫২১ টাকা, সিএসডি দিনাজপুরে একই বছরে ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকা এবং এলএসডি কামদিয়া গাইবান্ধা একই বছরে ৪ লাখ এক হাজার ৯১ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য ­গ্রহীতার স্বাক্ষর ছাড়াই সরবরাহ দেখানো হয়েছে।

কাবিখা, ভিজিডি, ওএমএস জিআর ও ইপি এবং ফেয়ার প্রাইসে খাতে ডিওর মাধ্যমে দেয়ার কথা বলা থাকলেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিওতে গ্রহীতার স্বাক্ষর না থাকায় মালামাল প্রকৃত গ্রহীতা পেয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে আবুল কালাম আজাদ নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর রাজশাহী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে এলএসডি কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রামসহ ১০টি খাদ্য গুদামে ২০১২ থেকে ২০১৮ এবং ২৮.১.১৯ থেকে ২৯.১.১৯ ইং পর্যন্ত এলএসডি গুলোতে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬০ টাকা মূল্যের মালামাল নিলামে বিক্রয় না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় উপরিউক্ত পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রংপুর বিভাগের আওতাধীন এলএসডি রংপুর সদর রংপুরের ২০১৬-১৮ সালের হিসাব ২৬.০২১৯ থেকে ২.৩.১৯ইং পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিরীক্ষাকালে দেখা যায় শঠিবাড়ি এলএসডি থেকে আমন চাল এনে এক মাসের ব্যবধানে অন্য এলএসডিতে প্রেরণ করায় পরিবহন ও হ্যান্ডলিং খরচ বাবদ ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৯০৬ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

নিরীক্ষাকালে দেখা গেছে, শঠিবাড়ি এলএসডি থেকে রংপুর সদর এলএসডিতে চালের সূচি জারি করার কোন প্রয়োজন ছিল না। এর ফলে ওই অর্থ ব্যয় হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৮ অর্থবছরের সাধারণ হিসাবের রেকর্ডপত্র যথা খামার, কার্ড, গুদাম লেজার, সেন্ট্রাল লেজার, প্রাপ্তি ইনভয়েস ও প্রেরণ ইনভয়েস বাৎসরিক বাস্তব প্রতিবেদন ইত্যাদি যাচাইকালে দেখা যায় ওই সালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ৩০৭৯ মেট্রিক টন চাল ও ৬৬৯৯ মেট্রিক টন গম অত্র গুদামে প্রাপ্তি এবং অত্র গুদাম থেকে ৪০০ মেট্রিক টন চাল অনত্র প্রেরণের স্বপক্ষে প্রোগ্রামের কপি অত্র দপ্তরে সংরক্ষণ করা হয়নি যা গুরুতর অনিয়ম।

অডিট প্রতিবেদনে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে গুণগত মান, আর্দ্রতা যাচাই না করেই পণ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। রংপুর সদর খাদ্য গুদামে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বমোট ৪৪৫৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন চাল ও ৯৬৮ মেট্রিক টন ধান, ৬৮ মেট্রিক টন গম, এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭০২২ দশমিক ৬৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত সকল পণ্যের আর্দ্রতা ছিল শতকরা ১৪ ভাগ যা অবিশ্বাস্য। তাছাড়া গুদামে ঘাটতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখার সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা তোয়াক্কা না করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪১ মেট্রিক টন চাল ১৪ মেট্রিক টন ধান ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৬ মেট্রিক টন চালের ঘাটতি হয়েছে।

এদিকে গত তিন বছর ধরে রংপুর সদর খাদ্য গুদামে চালকল মালিকদের কাছে উপরি নিয়ে আর্দ্রতা যাচাই না করে চাল কেনা হয়েছে, এতে একদিকে চালের ঘাটতি হয়েছে অন্যদিকে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া নি¤œমানের চাল কেনারও অভিযোগ রয়েছে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সার্বিক বিষয়ে অডিট প্রতিবেদন সম্পর্কে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও রংপুর সদর খাদ্য কর্মকর্তা কেউই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২ , ১৫ আষাড় ১৪২৮ ২৭ জিলকদ ১৪৪৩

রংপুর সদরসহ ছয় এলএসডি গুদামে কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর বিভাগের আওতাধীন এলএসডি রংপুর সদরসহ ৬টি খাদ্যগুদামে অনিয়মিতভাবে ডিওতে গ্রহীতার স্বাক্ষর ছাড়াই ৪৫ লাখ টাকার ১০৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণসহ কোটি টাকার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে নিরীক্ষা কমিটি। তথ্য অধিকার আইনে সম্পন্ন অডিট রিপোর্ট নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনিয়মিতভাবে গ্রহীতার স্বাক্ষর ছাড়াই ৪৫ লাখ ৪১ হাজার ২০৭ টাকা মূল্যের ১০৭ দশমিক ৭৩৩ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। মালামাল গ্রহণের সময় ডিওতে গ্রহীতা স্বাক্ষর করে খাদ্যশস্য গ্রহণ করার কথা থাকলেও নিরীক্ষাকালে দেখা যায়, এলএসডি রংপুর সদরে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৮১১ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য এলএসডি শঠিবাড়ি রংপুরে ২০১৭ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০১ টাকা, এলএসডি ঠাকুরগায়ে ২০১৭-১৮ সালে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭ টাকা, এলএসডি ডোমার নীলফামারী ২০১৭-১৮ সালে ৭০ হাজার ৫২১ টাকা, সিএসডি দিনাজপুরে একই বছরে ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকা এবং এলএসডি কামদিয়া গাইবান্ধা একই বছরে ৪ লাখ এক হাজার ৯১ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য ­গ্রহীতার স্বাক্ষর ছাড়াই সরবরাহ দেখানো হয়েছে।

কাবিখা, ভিজিডি, ওএমএস জিআর ও ইপি এবং ফেয়ার প্রাইসে খাতে ডিওর মাধ্যমে দেয়ার কথা বলা থাকলেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিওতে গ্রহীতার স্বাক্ষর না থাকায় মালামাল প্রকৃত গ্রহীতা পেয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে আবুল কালাম আজাদ নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর রাজশাহী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে এলএসডি কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রামসহ ১০টি খাদ্য গুদামে ২০১২ থেকে ২০১৮ এবং ২৮.১.১৯ থেকে ২৯.১.১৯ ইং পর্যন্ত এলএসডি গুলোতে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬০ টাকা মূল্যের মালামাল নিলামে বিক্রয় না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় উপরিউক্ত পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রংপুর বিভাগের আওতাধীন এলএসডি রংপুর সদর রংপুরের ২০১৬-১৮ সালের হিসাব ২৬.০২১৯ থেকে ২.৩.১৯ইং পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিরীক্ষাকালে দেখা যায় শঠিবাড়ি এলএসডি থেকে আমন চাল এনে এক মাসের ব্যবধানে অন্য এলএসডিতে প্রেরণ করায় পরিবহন ও হ্যান্ডলিং খরচ বাবদ ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৯০৬ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

নিরীক্ষাকালে দেখা গেছে, শঠিবাড়ি এলএসডি থেকে রংপুর সদর এলএসডিতে চালের সূচি জারি করার কোন প্রয়োজন ছিল না। এর ফলে ওই অর্থ ব্যয় হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৮ অর্থবছরের সাধারণ হিসাবের রেকর্ডপত্র যথা খামার, কার্ড, গুদাম লেজার, সেন্ট্রাল লেজার, প্রাপ্তি ইনভয়েস ও প্রেরণ ইনভয়েস বাৎসরিক বাস্তব প্রতিবেদন ইত্যাদি যাচাইকালে দেখা যায় ওই সালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ৩০৭৯ মেট্রিক টন চাল ও ৬৬৯৯ মেট্রিক টন গম অত্র গুদামে প্রাপ্তি এবং অত্র গুদাম থেকে ৪০০ মেট্রিক টন চাল অনত্র প্রেরণের স্বপক্ষে প্রোগ্রামের কপি অত্র দপ্তরে সংরক্ষণ করা হয়নি যা গুরুতর অনিয়ম।

অডিট প্রতিবেদনে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে গুণগত মান, আর্দ্রতা যাচাই না করেই পণ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। রংপুর সদর খাদ্য গুদামে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বমোট ৪৪৫৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন চাল ও ৯৬৮ মেট্রিক টন ধান, ৬৮ মেট্রিক টন গম, এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭০২২ দশমিক ৬৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত সকল পণ্যের আর্দ্রতা ছিল শতকরা ১৪ ভাগ যা অবিশ্বাস্য। তাছাড়া গুদামে ঘাটতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখার সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা তোয়াক্কা না করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪১ মেট্রিক টন চাল ১৪ মেট্রিক টন ধান ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৬ মেট্রিক টন চালের ঘাটতি হয়েছে।

এদিকে গত তিন বছর ধরে রংপুর সদর খাদ্য গুদামে চালকল মালিকদের কাছে উপরি নিয়ে আর্দ্রতা যাচাই না করে চাল কেনা হয়েছে, এতে একদিকে চালের ঘাটতি হয়েছে অন্যদিকে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া নি¤œমানের চাল কেনারও অভিযোগ রয়েছে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সার্বিক বিষয়ে অডিট প্রতিবেদন সম্পর্কে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও রংপুর সদর খাদ্য কর্মকর্তা কেউই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।