ঘুঙুর
নর্তকীর পায়ের ঘুঙুরগুলো খসে গেলো
মধ্যরাতে অন্ধকার সমুদ্রের পাশে;
বেদমন্ত্র উচ্চারিত হলো যেন
মেঘমন্দ্র আকাশে আকাশে।
ছুটলো নক্ষত্রপুঞ্জ জ্যোৎস্নার তরঙ্গিত রথে
একটি হৃদয় একা পড়ে থাকে
ব্যর্থ ভিখিরির মতো শূন্য পথে পথে;
এই পথে তোমার যাত্রা শুরু হাজার বছর-
আকাশ ফেরাবে কেন নক্ষত্রের নীলিমার ঘোর!
হৃদয় কি পুঞ্জপুঞ্জ নৈঃশব্দ্যের চেয়ে আরো দূর?
এই প্রশ্নে একটি আকাশ কাঁপে
কেঁপে ওঠে নর্তকীর পায়ের ঘুঙুর।
এই রাতে অন্ধকারে
অন্ধকারে একটি প্রদীপ জ্বলে আমার এই জীর্ণ কুঁড়েঘরে।
বাইরে গভীর রাতে আর্তনাদ করে ওঠে মৌসুমী হাওয়া;
আমি তার প্রতিধ্বনি টের পাই কম্পমান আলোর শিখায়।
সংকীর্ণ সময়ের সুতোর ওপর দিয়ে যে রকম হেঁটে যায়
ক্ষুদ্র পিপিলিকা-আমিও তেমন করে লঘু পায়ে হেঁটে যাই
উপকূলে, গভীর অরণ্যপথে ভীত আর সন্তস্ত হরিণ;
অকস্মাৎ চরাচর ডুবে যায় অন্তহীন জমাট আঁধারে।
এই রাতে অন্ধকারে তুমিও কি জেগে আছো একা?
দৃশ্যপট
স্মৃতিরা মেঘের মতো উড়ে যায় আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে,
নীলিমা-নিমগ্ন প্রেমে পাখিগুলো ডুবে যায় দু’হাত বাড়িয়ে;
তোমার হৃদয় ডোবে অস্পষ্ট ধূসর রোদে। চৈত্রের স্তব্ধ দুপুরে;
একটি শালিক একা মুদ্রিত ছবির মতো শূন্যতায় মুছে যায়-দূরে।
অতল সমুদ্র থেকে তরঙ্গশীর্ষে জাগে চঞ্চল মৎস্যকুমারী,
ক্রমশ ঝাপ্সা হয় জলকণা, পাড়ের ব্যথিত ভূমি, বৃক্ষ ও বাড়ি।
অকস্মাৎ কল্লোলিত দুই তীর পান করে নদী আর সমুদ্রের জল,
এই দৃশ্য দেখে দেখে নক্ষত্র, পৃথিবী, চাঁদ হতবিহ্বল।
ধূসর সমুদ্রতীরে
মেঘের ডানায় ভেসে উড়ে যায় একটি হৃদয়;
যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো রথ
ছুটে চলেছে শূন্য আকাশ বেয়ে-ভূমধ্যসাগরলীন এক বন্দরের দিকে;
সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটার ভেতর থেকে জেগে উঠছে
একটি অস্পষ্ট ছায়ামূর্তির মতো তোমার খণ্ডিত মুখ;
তোমার স্তনাগ্র-চূড়ায় উপ্চে পড়ছে তির্যক আলো।
এই দৃশ্য দেখে দেখে আমার চোখের জলে
নেমে আসে অশরীরী ঢেউ
আর তৃষ্ণার্ত একটি হৃদয়ে কেবলি দুলতে থাকে
ধূসর সমুদ্রতীরে ভেসে থাকা ছোট্ট এক ডিঙির মতো
কম্পমান তোমার দু’ঠোঁট।
পলাতক
দূরে বাতাসের কানে কানে কথা বলে অশ্বারোহীদল।
জ্যোৎস্নার ছায়ায় কাঁপতে থাকে পুকুরপাড়ের ভীরু গাছগুলি।
অন্ধকারে বিদায়ের প্রস্তুতিতে বিষণ্ণ
কারো মুখে কোনো কথা নেই;
সকালের আলো ফুটবার আগেই
কাউকে কিছু না জানিয়ে পাড়ি দেবে অজানার উদ্দেশ্যে।
যাবেই যখন, তখন ফিরে তাকালো
উঠোনের প্রিয় বকুলফুলের গাছটির দিকে
অন্ধকরে না না করে উঠলো পাতা;
হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখলো ছোট তুলসীগাছটিকে;
প্রতি সন্ধ্যায় আর প্রদীপ জ্বালানো হবে না তার পায়ে,
প্রতিদিন জলস্নানের বদলে কুকুরের প্রস্রাবে ভরে উঠবে
তার শানবাঁধানো মাটি;
তারপর একদিন কেউ এসে উপ্ড়ে ফেলবে তাকে।
ভাবতেই কেঁপে উঠলো বুক, চোখের জলে ভরে উঠলো নদী
মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ছাপিয়ে জেগে উঠলো অশ্বক্ষুরের শব্দ
পেছনে ধুলো উড়িয়ে জানিয়ে গেলো সতর্ক-সংকেত।
সেই রাতেই তারা চলে গেলো কোথায়-কেউ তা জানে না।
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২ , ১৬ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলকদ ১৪৪৩
ঘুঙুর
নর্তকীর পায়ের ঘুঙুরগুলো খসে গেলো
মধ্যরাতে অন্ধকার সমুদ্রের পাশে;
বেদমন্ত্র উচ্চারিত হলো যেন
মেঘমন্দ্র আকাশে আকাশে।
ছুটলো নক্ষত্রপুঞ্জ জ্যোৎস্নার তরঙ্গিত রথে
একটি হৃদয় একা পড়ে থাকে
ব্যর্থ ভিখিরির মতো শূন্য পথে পথে;
এই পথে তোমার যাত্রা শুরু হাজার বছর-
আকাশ ফেরাবে কেন নক্ষত্রের নীলিমার ঘোর!
হৃদয় কি পুঞ্জপুঞ্জ নৈঃশব্দ্যের চেয়ে আরো দূর?
এই প্রশ্নে একটি আকাশ কাঁপে
কেঁপে ওঠে নর্তকীর পায়ের ঘুঙুর।
এই রাতে অন্ধকারে
অন্ধকারে একটি প্রদীপ জ্বলে আমার এই জীর্ণ কুঁড়েঘরে।
বাইরে গভীর রাতে আর্তনাদ করে ওঠে মৌসুমী হাওয়া;
আমি তার প্রতিধ্বনি টের পাই কম্পমান আলোর শিখায়।
সংকীর্ণ সময়ের সুতোর ওপর দিয়ে যে রকম হেঁটে যায়
ক্ষুদ্র পিপিলিকা-আমিও তেমন করে লঘু পায়ে হেঁটে যাই
উপকূলে, গভীর অরণ্যপথে ভীত আর সন্তস্ত হরিণ;
অকস্মাৎ চরাচর ডুবে যায় অন্তহীন জমাট আঁধারে।
এই রাতে অন্ধকারে তুমিও কি জেগে আছো একা?
দৃশ্যপট
স্মৃতিরা মেঘের মতো উড়ে যায় আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে,
নীলিমা-নিমগ্ন প্রেমে পাখিগুলো ডুবে যায় দু’হাত বাড়িয়ে;
তোমার হৃদয় ডোবে অস্পষ্ট ধূসর রোদে। চৈত্রের স্তব্ধ দুপুরে;
একটি শালিক একা মুদ্রিত ছবির মতো শূন্যতায় মুছে যায়-দূরে।
অতল সমুদ্র থেকে তরঙ্গশীর্ষে জাগে চঞ্চল মৎস্যকুমারী,
ক্রমশ ঝাপ্সা হয় জলকণা, পাড়ের ব্যথিত ভূমি, বৃক্ষ ও বাড়ি।
অকস্মাৎ কল্লোলিত দুই তীর পান করে নদী আর সমুদ্রের জল,
এই দৃশ্য দেখে দেখে নক্ষত্র, পৃথিবী, চাঁদ হতবিহ্বল।
ধূসর সমুদ্রতীরে
মেঘের ডানায় ভেসে উড়ে যায় একটি হৃদয়;
যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো রথ
ছুটে চলেছে শূন্য আকাশ বেয়ে-ভূমধ্যসাগরলীন এক বন্দরের দিকে;
সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটার ভেতর থেকে জেগে উঠছে
একটি অস্পষ্ট ছায়ামূর্তির মতো তোমার খণ্ডিত মুখ;
তোমার স্তনাগ্র-চূড়ায় উপ্চে পড়ছে তির্যক আলো।
এই দৃশ্য দেখে দেখে আমার চোখের জলে
নেমে আসে অশরীরী ঢেউ
আর তৃষ্ণার্ত একটি হৃদয়ে কেবলি দুলতে থাকে
ধূসর সমুদ্রতীরে ভেসে থাকা ছোট্ট এক ডিঙির মতো
কম্পমান তোমার দু’ঠোঁট।
পলাতক
দূরে বাতাসের কানে কানে কথা বলে অশ্বারোহীদল।
জ্যোৎস্নার ছায়ায় কাঁপতে থাকে পুকুরপাড়ের ভীরু গাছগুলি।
অন্ধকারে বিদায়ের প্রস্তুতিতে বিষণ্ণ
কারো মুখে কোনো কথা নেই;
সকালের আলো ফুটবার আগেই
কাউকে কিছু না জানিয়ে পাড়ি দেবে অজানার উদ্দেশ্যে।
যাবেই যখন, তখন ফিরে তাকালো
উঠোনের প্রিয় বকুলফুলের গাছটির দিকে
অন্ধকরে না না করে উঠলো পাতা;
হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখলো ছোট তুলসীগাছটিকে;
প্রতি সন্ধ্যায় আর প্রদীপ জ্বালানো হবে না তার পায়ে,
প্রতিদিন জলস্নানের বদলে কুকুরের প্রস্রাবে ভরে উঠবে
তার শানবাঁধানো মাটি;
তারপর একদিন কেউ এসে উপ্ড়ে ফেলবে তাকে।
ভাবতেই কেঁপে উঠলো বুক, চোখের জলে ভরে উঠলো নদী
মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ছাপিয়ে জেগে উঠলো অশ্বক্ষুরের শব্দ
পেছনে ধুলো উড়িয়ে জানিয়ে গেলো সতর্ক-সংকেত।
সেই রাতেই তারা চলে গেলো কোথায়-কেউ তা জানে না।