মহাকালে ভয়
হাসান কল্লোল
আমি আমার শৈশবকে পান করি
কৈশোরে কাটি সাঁতার
যৌবনের ভেতর আমি খেলা করি
প্রায়-প্রৌঢ় জীবনকে করি উদযাপন
আমার আগত অবসর জীবনকে আমি
প্রস্তুত হচ্ছি আলিঙ্গন করতে।
এই যে মানব জীবন
আমার এক পৃষ্ঠা জীবন বৃত্তান্তে তার
খুব অল্প কিছু আছে জমা!
যা কিছু অনূক্ত গোপন
যেসব টলমল জল রয়েছে স্রোতের ভেতর,
পাড়ে বসে যে প্রেমের দহনে জ্বলেছে বিকেল-
তোমরা সন্ধ্যার ট্রেনে বিনা টিকেটের যাত্রী হয়ে
এত তাড়াতাড়ি কী করে
এই রকম উদ্ভট ভোরে
পৌঁছে যাবে ঈশ্বরদী স্টেশনে?
আলোর জেগে ওঠা দেখে এখনো অন্ধকার অন্ধকার
বলে চিৎকার করছে যে মহাকাল
আমি তার ভয়ে সব সত্য কথা বলতে পারিনি।
না ভাসাইয়ো জলে
শান্তা মারিয়া
লখিন্দর দিয়েছিল প্রথম চুম্বন
আদিম কুমারী নাগিনীর ওষ্ঠপুটে।
কথা ছিল পাড়ি দিব দূর রেলপথ
পাহাড় চূড়ায় গড়ে নেবো নিজস্ব নগর
তাহিতির নীল জলে ঝিনুক প্রাসাদ
আফ্রিকার উপকূলে অরণ্য বসতি
কথা ছিল হাতের মুঠোয় পুরে নেবো
নৈনিতাল, বারানসী, আগ্রার মহল।
মৃত মাছ হয়ে ভেসে ওঠে সব গোপন বাসনা
বারো হাত কাকুঁড়ের জীবন খাঁচায়
শ্বাসরুদ্ধ আমাদের বিস্মৃত কামনা।
আগামি জন্মের জন্য তুলে রাখি এসো
যৌথ বৃষ্টি স্নান, কালো ড্রাগনের ঘর
মেঘমগ্ন নিবিড় দুপুর, সীতাহার,
আশ্বিনের ভোরবেলা, সেতার সংলাপ।
এক জীবনের যাবতীয় ঋণ শোধ করে
মৃত্যু অভিমুখে হেঁটে চলে নিষাদ কাফেলা।
মৃত্যু নয় চূড়ান্ত কখনো
মৃত্যু নয় বিচ্ছেদ নগর
দেখা হবে অন্য কোনো গ্রহে
অন্য কোনো সময়ের বাঁকে।
না হয় আরেক বার ধরা যাবে হাত
শোনা যাবে নাবিকের জাহাজী সংগীত
দেখা হবে রেশমপথের ধারে
দীপজ্বলা সরাইখানায়, ভক্তপুরে, সিয়ান নগরে।
এ জন্মের মতো শেষ হোক রাসলীলা
শেষ হোক পূর্ণিমার মোহন উৎসব
ক্লান্ত চোখে নেমে এসো ঘুম, এসো প্রেম,
এসো মৃত্যু, মৃন্ময় আবাস, আচ্ছাদন
সর্বশেষ আলিঙ্গনে বিদায় সুপ্রিয়।
অচেনা ঢেউ
পারভেজ আহসান
নদী ঠিক জানে বর্ষায় জলের ভাষা
স্রোতের প্রবহমানতা
বৃক্ষশাখায় ফাগুন বোধ জাগে
অথচ তার জানা নেই নৈঃশব্দ্যের ভাষা
চোখের জ্যামিতি
একদিন দীর্ঘ ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখে
আঙিনায় ফুটেছে হাসনাহেনা
নীল অপরাজিতা
চারিদিকে অচেনা পাখির কলস্বর।
প্রয়োজন ও সম্পর্ক
ফারুখ সিদ্ধার্থ
গড়ায়ু পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত যে
প্রস্থানের সঙ্গে তার গাঁটছড়া বাঁধে কেউ?
প্রয়োজন নির্ধারণ করে সম্পর্ক;
নির্ধারণ করে তার মেয়াদও।
সে-ই তো লিখিয়ে নেয় নতুন কবিতা...
যার সাথে জন্মের গাঁটছড়া-
হৃদয়ের হাত-ধরাধরি
প্রয়োজনে হাত ছেড়ে দেয় সে-ও!
প্রয়োজনই লিখিয়ে নিয়েছে এই কবিতা।
স্বপ্ন চুরি করা চিল
রাজীব আহমেদ
অশুভ ধোয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়েছে আকাশ
জমকালো আলোর সাজসজ্জায় নির্বাসনে সোনালি আলোর কণিকা
মেকি আলোর ঝলকানিতে মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে
রক্ত পিপাসু দন্তপাটি
প্রেত সঙ্কুল ভুতুড়ে পরিবেশে আতঙ্কিত যাপিত জীবন
কলযজ্ঞের ডামাডোলে কুকিয়ে ওঠে নিষ্পাপ পৃথিবী
সংকটময় শতাব্দীর কদর্য উত্থানে সুবিধে নেয় কতিপয় পিশাচের দল
পৃথিবীকে আপেল ভেবে বিঁধিয়ে দেয় দুর্গন্ধ মুখের বিষাক্ত দাঁত
সন্তান হারানোর গভীর ক্ষতে গোঙানি ছাড়ে জগত জননী
তার ওপর জড়ো হয় ঈশ্বরে মাথা ঠোকা অসহায় মানুষের সারি
দিন যায়, দুঃস্বপ্নের চাকায় পিষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে অনাথের দল
যারা কোটরে যাওয়া চোখ দিয়ে চেয়ে দেখে স্বপ্ন চুরি করা চিল
অতঃপর দানবাক্স নির্ভর ঈশ্বরের হট্টহাসির সঙ্গে হেসে ওঠে খিলখিল
প্রেমিক
অদিতি খান
দুঃখ গড়িয়ে চিবুক ছুঁলে
ভালোবাসার আলিঙ্গন ঘটায় যে সেই তো প্রেমিক।
জরাজীর্ণ মানিব্যগে
সাদা কালো ছবি যে সাজিয়ে রাখে সেই তো প্রেমিক।
কৃষ্ণচূড়া ঝরতে দেখলে
যে উপন্যাস লিখে ফেলার মতন শব্দ জানে সেই তো প্রেমিক।
নীল জোছনা রাতে
যে গোটা শহর উৎসর্গ করে দেয় সেই তো প্রেমিক।
সমুদ্র পাড়ে বসে
একটার পর একটা কবিতা যে পড়ে যায়
সেই তো প্রেমিক।
সিক্ত হাতে পুরা পৃথিবীর বিপরীতে
যে শক্ত করে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে
সেই তো প্রেমিক।
বেলীর মালা হাতে জড়াতে জড়াতে
ভালোবাসি বলতে যে ভোলে না সেই তো প্রেমিক।
প্রেম
রামু সাহা
রাধা যতবার কেঁদেছিলো শ্রীকৃষ্ণ বিরহে
যমুনা তা জানে
বরুনা কী কেঁদেছে সেই যুবকের জন্য
নদীই তা বলতে পারে
ওগো প্রেম সোনার দিনার চাই
নাকি সোনার নোলক
প্রেম কি উড়ালপাখি
কর্পূরের মতো উড়ে যাবে
হাওয়ায় হাওয়ায়
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২ , ১৬ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলকদ ১৪৪৩
মহাকালে ভয়
হাসান কল্লোল
আমি আমার শৈশবকে পান করি
কৈশোরে কাটি সাঁতার
যৌবনের ভেতর আমি খেলা করি
প্রায়-প্রৌঢ় জীবনকে করি উদযাপন
আমার আগত অবসর জীবনকে আমি
প্রস্তুত হচ্ছি আলিঙ্গন করতে।
এই যে মানব জীবন
আমার এক পৃষ্ঠা জীবন বৃত্তান্তে তার
খুব অল্প কিছু আছে জমা!
যা কিছু অনূক্ত গোপন
যেসব টলমল জল রয়েছে স্রোতের ভেতর,
পাড়ে বসে যে প্রেমের দহনে জ্বলেছে বিকেল-
তোমরা সন্ধ্যার ট্রেনে বিনা টিকেটের যাত্রী হয়ে
এত তাড়াতাড়ি কী করে
এই রকম উদ্ভট ভোরে
পৌঁছে যাবে ঈশ্বরদী স্টেশনে?
আলোর জেগে ওঠা দেখে এখনো অন্ধকার অন্ধকার
বলে চিৎকার করছে যে মহাকাল
আমি তার ভয়ে সব সত্য কথা বলতে পারিনি।
না ভাসাইয়ো জলে
শান্তা মারিয়া
লখিন্দর দিয়েছিল প্রথম চুম্বন
আদিম কুমারী নাগিনীর ওষ্ঠপুটে।
কথা ছিল পাড়ি দিব দূর রেলপথ
পাহাড় চূড়ায় গড়ে নেবো নিজস্ব নগর
তাহিতির নীল জলে ঝিনুক প্রাসাদ
আফ্রিকার উপকূলে অরণ্য বসতি
কথা ছিল হাতের মুঠোয় পুরে নেবো
নৈনিতাল, বারানসী, আগ্রার মহল।
মৃত মাছ হয়ে ভেসে ওঠে সব গোপন বাসনা
বারো হাত কাকুঁড়ের জীবন খাঁচায়
শ্বাসরুদ্ধ আমাদের বিস্মৃত কামনা।
আগামি জন্মের জন্য তুলে রাখি এসো
যৌথ বৃষ্টি স্নান, কালো ড্রাগনের ঘর
মেঘমগ্ন নিবিড় দুপুর, সীতাহার,
আশ্বিনের ভোরবেলা, সেতার সংলাপ।
এক জীবনের যাবতীয় ঋণ শোধ করে
মৃত্যু অভিমুখে হেঁটে চলে নিষাদ কাফেলা।
মৃত্যু নয় চূড়ান্ত কখনো
মৃত্যু নয় বিচ্ছেদ নগর
দেখা হবে অন্য কোনো গ্রহে
অন্য কোনো সময়ের বাঁকে।
না হয় আরেক বার ধরা যাবে হাত
শোনা যাবে নাবিকের জাহাজী সংগীত
দেখা হবে রেশমপথের ধারে
দীপজ্বলা সরাইখানায়, ভক্তপুরে, সিয়ান নগরে।
এ জন্মের মতো শেষ হোক রাসলীলা
শেষ হোক পূর্ণিমার মোহন উৎসব
ক্লান্ত চোখে নেমে এসো ঘুম, এসো প্রেম,
এসো মৃত্যু, মৃন্ময় আবাস, আচ্ছাদন
সর্বশেষ আলিঙ্গনে বিদায় সুপ্রিয়।
অচেনা ঢেউ
পারভেজ আহসান
নদী ঠিক জানে বর্ষায় জলের ভাষা
স্রোতের প্রবহমানতা
বৃক্ষশাখায় ফাগুন বোধ জাগে
অথচ তার জানা নেই নৈঃশব্দ্যের ভাষা
চোখের জ্যামিতি
একদিন দীর্ঘ ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখে
আঙিনায় ফুটেছে হাসনাহেনা
নীল অপরাজিতা
চারিদিকে অচেনা পাখির কলস্বর।
প্রয়োজন ও সম্পর্ক
ফারুখ সিদ্ধার্থ
গড়ায়ু পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত যে
প্রস্থানের সঙ্গে তার গাঁটছড়া বাঁধে কেউ?
প্রয়োজন নির্ধারণ করে সম্পর্ক;
নির্ধারণ করে তার মেয়াদও।
সে-ই তো লিখিয়ে নেয় নতুন কবিতা...
যার সাথে জন্মের গাঁটছড়া-
হৃদয়ের হাত-ধরাধরি
প্রয়োজনে হাত ছেড়ে দেয় সে-ও!
প্রয়োজনই লিখিয়ে নিয়েছে এই কবিতা।
স্বপ্ন চুরি করা চিল
রাজীব আহমেদ
অশুভ ধোয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়েছে আকাশ
জমকালো আলোর সাজসজ্জায় নির্বাসনে সোনালি আলোর কণিকা
মেকি আলোর ঝলকানিতে মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে
রক্ত পিপাসু দন্তপাটি
প্রেত সঙ্কুল ভুতুড়ে পরিবেশে আতঙ্কিত যাপিত জীবন
কলযজ্ঞের ডামাডোলে কুকিয়ে ওঠে নিষ্পাপ পৃথিবী
সংকটময় শতাব্দীর কদর্য উত্থানে সুবিধে নেয় কতিপয় পিশাচের দল
পৃথিবীকে আপেল ভেবে বিঁধিয়ে দেয় দুর্গন্ধ মুখের বিষাক্ত দাঁত
সন্তান হারানোর গভীর ক্ষতে গোঙানি ছাড়ে জগত জননী
তার ওপর জড়ো হয় ঈশ্বরে মাথা ঠোকা অসহায় মানুষের সারি
দিন যায়, দুঃস্বপ্নের চাকায় পিষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে অনাথের দল
যারা কোটরে যাওয়া চোখ দিয়ে চেয়ে দেখে স্বপ্ন চুরি করা চিল
অতঃপর দানবাক্স নির্ভর ঈশ্বরের হট্টহাসির সঙ্গে হেসে ওঠে খিলখিল
প্রেমিক
অদিতি খান
দুঃখ গড়িয়ে চিবুক ছুঁলে
ভালোবাসার আলিঙ্গন ঘটায় যে সেই তো প্রেমিক।
জরাজীর্ণ মানিব্যগে
সাদা কালো ছবি যে সাজিয়ে রাখে সেই তো প্রেমিক।
কৃষ্ণচূড়া ঝরতে দেখলে
যে উপন্যাস লিখে ফেলার মতন শব্দ জানে সেই তো প্রেমিক।
নীল জোছনা রাতে
যে গোটা শহর উৎসর্গ করে দেয় সেই তো প্রেমিক।
সমুদ্র পাড়ে বসে
একটার পর একটা কবিতা যে পড়ে যায়
সেই তো প্রেমিক।
সিক্ত হাতে পুরা পৃথিবীর বিপরীতে
যে শক্ত করে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে
সেই তো প্রেমিক।
বেলীর মালা হাতে জড়াতে জড়াতে
ভালোবাসি বলতে যে ভোলে না সেই তো প্রেমিক।
প্রেম
রামু সাহা
রাধা যতবার কেঁদেছিলো শ্রীকৃষ্ণ বিরহে
যমুনা তা জানে
বরুনা কী কেঁদেছে সেই যুবকের জন্য
নদীই তা বলতে পারে
ওগো প্রেম সোনার দিনার চাই
নাকি সোনার নোলক
প্রেম কি উড়ালপাখি
কর্পূরের মতো উড়ে যাবে
হাওয়ায় হাওয়ায়