জোছনাজলে জোনাকীজীবন

প্রেমের এক অনবদ্য কোলাজ

শ্যামলী দাস

মানব মনের গভীরতম উপলব্ধি প্রেম। জোছনাজলে জোনাকীজীবন কবিতা সংকলনটি সে প্রেমেরই নানা বিচিত্র দিক নিয়ে হাজির হয়েছে। প্রেম, ভালবাসা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বিরহ-আবেগ প্রভৃতি অনুভূতির জীবন্ত ক্যানভাস এই বইটি। প্রেমকে কবি দেখেছেন, জীবনের সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতি হিসেবে। তাই পাওয়া না-পাওয়ার নানা হিসেবকে প্রেমেরই সুগভীর অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এ-সংকলনে।

এ বইয়ে ১৫০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। এ সব কবিতার বিষয়-আশয় বর্ণালী। তবে ভালোবাসার যন্ত্রণা বেশিরভাগ কবিতারই মূল উপজীব্য। কিছু কিছু কবিতা নস্টালজিয়া আক্রান্ত। আবার কোনো কোনো কবিতায় প্রকৃত প্রেমের আঁচ পাওয়া যায়। তবে সব ছাপিয়ে প্রেমের দহন বড় বিষয় হিসেবে ওঠে এসেছে এ-কবিতাগ্রন্থে।

বইটি শুরু হয়েছে ‘পুড়ছি’ শিরোনামক কবিতা দিয়ে। এতে যেমন বেদনা আছে, তেমনি রয়েছে নস্টালজিয়া। কয়েকটি লাইন এরকম- ‘মন খারাপের প্রতিটা দিন / ভীষণ খুঁজি তোরে / সবখানে তুই আছিস জুড়ে / দেখিস হৃদয় খুঁড়ে।’

লাইনগুলোতে কবির বেদনাবোধ স্পষ্ট। একইভাবে ‘হৃদয় একমাত্র’ কবিতায় কবি তাঁর বিরহের চিত্র এঁকেছেন। আবার ‘স্বপ্ন মধুর’, ‘কলঙ্ক দাগ’, ‘হৃদয়ের উত্তাপে’ প্রভৃতি কবিতাগুলোতেও মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা বেদনার ছাপ ফুটে উঠেছে।

কবি সামসুদ্দিন আহমেদ তাঁর ‘দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ’ কবিতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি আধুনিকতা দ্বারা বেশ প্রভাবিত, উক্ত কবিতায় তাঁর আধুনিকতা বোধের পরিচয় মেলে। এ-কবিতায় ভালোবাসার পাশাপাশি কবিমনের দ্রোহও প্রকাশ পেয়েছে। তাই তো কবি বলে ওঠেন- ‘যে তুমি মানছো না নির্দেশ প্রোটোকল / রাষ্ট্রদ্রোহী ঘৃণ্য রাজাকার / মেতেছো অতিমারীর ছোঁয়ার প্রলেপ দেয়ার / এ বঙ্গে ঠাঁই নেই ঘৃণ্য হে তোমার।’

অন্যদিকে, ‘প্রেম তৃষ্ণায়’ কবিতায় কবি বিরহের পাশাপাশি সুখ-স্মৃতির কথাও বলেছেন। এ কবিতায় দীর্ঘশ্বাস আছে, আবার প্রবল প্রাণ শক্তির স্ফুরণও রয়েছে। মানব জীবন নিয়ে এক ধরনের এক্সপেরিমেনটেশানেরও দরকার রয়েছে বলে মনে করেন সামসুদ্দিন আহামেদ।

‘পাপ জমে জমে কাঁপছে ধরণী / ধারণে অপারগ অবনী / জঞ্জাল স্তূপ আকাশ ছুঁয়েছে / প্রকাশ পেয়েছে রজনী।’

যেসব কবিতার কথা বলেছি তার বাইরেও ‘ফিরুক না ফিরুক’, ‘সেই স্মৃতি’, ‘কাঁদুক আকাশ’, ‘তীব্র অসুখ’, ‘পরিচয়’, ‘কাটাকুটি’, ‘মন দেবতা’, ‘ধ্রুপদী প্রেম’ ইত্যাদি পাঠককে আকৃষ্ট করবে। সামসুদ্দিন আহমদের প্রথম কবিতা সংকলন জোছনাজলে জোনাকীজীবন মূলত প্রেম বিষয়টির উপর নির্ভর করেই এগিয়েছে। তাঁর ভাষা সহজবোধ্য, উপমা ও উৎপ্রেক্ষা জীবন-ঘনিষ্ঠ। এই সংকলনের পাঠক-প্রিয়তা প্রত্যাশা করি।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২ , ১৬ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলকদ ১৪৪৩

জোছনাজলে জোনাকীজীবন

প্রেমের এক অনবদ্য কোলাজ

শ্যামলী দাস

image

মানব মনের গভীরতম উপলব্ধি প্রেম। জোছনাজলে জোনাকীজীবন কবিতা সংকলনটি সে প্রেমেরই নানা বিচিত্র দিক নিয়ে হাজির হয়েছে। প্রেম, ভালবাসা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বিরহ-আবেগ প্রভৃতি অনুভূতির জীবন্ত ক্যানভাস এই বইটি। প্রেমকে কবি দেখেছেন, জীবনের সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতি হিসেবে। তাই পাওয়া না-পাওয়ার নানা হিসেবকে প্রেমেরই সুগভীর অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এ-সংকলনে।

এ বইয়ে ১৫০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। এ সব কবিতার বিষয়-আশয় বর্ণালী। তবে ভালোবাসার যন্ত্রণা বেশিরভাগ কবিতারই মূল উপজীব্য। কিছু কিছু কবিতা নস্টালজিয়া আক্রান্ত। আবার কোনো কোনো কবিতায় প্রকৃত প্রেমের আঁচ পাওয়া যায়। তবে সব ছাপিয়ে প্রেমের দহন বড় বিষয় হিসেবে ওঠে এসেছে এ-কবিতাগ্রন্থে।

বইটি শুরু হয়েছে ‘পুড়ছি’ শিরোনামক কবিতা দিয়ে। এতে যেমন বেদনা আছে, তেমনি রয়েছে নস্টালজিয়া। কয়েকটি লাইন এরকম- ‘মন খারাপের প্রতিটা দিন / ভীষণ খুঁজি তোরে / সবখানে তুই আছিস জুড়ে / দেখিস হৃদয় খুঁড়ে।’

লাইনগুলোতে কবির বেদনাবোধ স্পষ্ট। একইভাবে ‘হৃদয় একমাত্র’ কবিতায় কবি তাঁর বিরহের চিত্র এঁকেছেন। আবার ‘স্বপ্ন মধুর’, ‘কলঙ্ক দাগ’, ‘হৃদয়ের উত্তাপে’ প্রভৃতি কবিতাগুলোতেও মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা বেদনার ছাপ ফুটে উঠেছে।

কবি সামসুদ্দিন আহমেদ তাঁর ‘দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ’ কবিতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি আধুনিকতা দ্বারা বেশ প্রভাবিত, উক্ত কবিতায় তাঁর আধুনিকতা বোধের পরিচয় মেলে। এ-কবিতায় ভালোবাসার পাশাপাশি কবিমনের দ্রোহও প্রকাশ পেয়েছে। তাই তো কবি বলে ওঠেন- ‘যে তুমি মানছো না নির্দেশ প্রোটোকল / রাষ্ট্রদ্রোহী ঘৃণ্য রাজাকার / মেতেছো অতিমারীর ছোঁয়ার প্রলেপ দেয়ার / এ বঙ্গে ঠাঁই নেই ঘৃণ্য হে তোমার।’

অন্যদিকে, ‘প্রেম তৃষ্ণায়’ কবিতায় কবি বিরহের পাশাপাশি সুখ-স্মৃতির কথাও বলেছেন। এ কবিতায় দীর্ঘশ্বাস আছে, আবার প্রবল প্রাণ শক্তির স্ফুরণও রয়েছে। মানব জীবন নিয়ে এক ধরনের এক্সপেরিমেনটেশানেরও দরকার রয়েছে বলে মনে করেন সামসুদ্দিন আহামেদ।

‘পাপ জমে জমে কাঁপছে ধরণী / ধারণে অপারগ অবনী / জঞ্জাল স্তূপ আকাশ ছুঁয়েছে / প্রকাশ পেয়েছে রজনী।’

যেসব কবিতার কথা বলেছি তার বাইরেও ‘ফিরুক না ফিরুক’, ‘সেই স্মৃতি’, ‘কাঁদুক আকাশ’, ‘তীব্র অসুখ’, ‘পরিচয়’, ‘কাটাকুটি’, ‘মন দেবতা’, ‘ধ্রুপদী প্রেম’ ইত্যাদি পাঠককে আকৃষ্ট করবে। সামসুদ্দিন আহমদের প্রথম কবিতা সংকলন জোছনাজলে জোনাকীজীবন মূলত প্রেম বিষয়টির উপর নির্ভর করেই এগিয়েছে। তাঁর ভাষা সহজবোধ্য, উপমা ও উৎপ্রেক্ষা জীবন-ঘনিষ্ঠ। এই সংকলনের পাঠক-প্রিয়তা প্রত্যাশা করি।