ফের বন্যা আতঙ্ক সিলেট-সুনামগঞ্জে

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

বিদ্যুতের মিটার উঁচু স্থানে স্থানান্তরের অনুরোধ

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ। বাড়িঘর তলিয়ে আছে পানির নিচে। আবারো বাড়তে শুরু করেছে সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি। গতকাল সবগুলো পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কয়েক ইঞ্চি বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা এবং লোভা নদীর পানিও। এতে টানা দুই দফার পর তৃতীয় দফার বন্যা আতঙ্কে ভুগছে সিলেটবাসী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নি¤œাঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে তাদের বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার উঁচুঁ স্থানে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া বেশকিছু এলাকায় পানিতে বই ভেসে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় যে যার মতো ত্রাণ বিতরণও অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পানি এখনো পুরো নামেনি। এখনো প্লাবিত জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে গত কয়েকদিন ধরে পানি কমতে শুরু করেছিল। আর গতকাল এসে ফের বাড়ছে নদীর পানি। পানি আবার বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় হাঁটু পানির জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। উপশহর, তালতালা, তেররতণ, মির্জা জাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।

পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন বলেন, গত রাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, টানা ১০দিন পর মাত্র দুই দিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোন সীমা থাকবে না।

বিদ্যুতের মিটার উঁচুতে স্থানান্তরের পরামর্শ

বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরসহ সব নিচু এলাকাগুলোর সব বাসিন্দাকে তাদের বিদ্যুতের মিটার উঁচুতে স্থানান্তরের পরামর্শন দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২।

গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট দপ্তরের আওতায় নগরীর শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, কালিঘাটসহ অন্যান্য নিচু এলাকায় যেসব বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সেসব বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিরাপদ উঁচু স্থানে স্থাপনের জন্য গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ করা হলো। এ ক্ষেত্রে মিটার সরানোর ব্যয় গ্রাহককে বহন করতে হবে। তবে মিটার পুনঃসংযোগের জন্য টোকেন বা টেম্পার টোকেন বিদ্যুৎ বিভাগ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসন সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও নেই পর্যাপ্ত বই। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই। সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে তোফাজ্জল হোসেন। তার বইও ভেসে গেছে বানের জলে। তোফাজ্জল বলে, ‘বন্যার কারণে কয়েক দিন ধরেই পড়ালেখা করতে পারছি না। পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এখন বাড়িতে এসে দেখি ঘরে বই-খাতা, জ্যামিতি বক্স কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে। যেকোন দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এখন আমি বই-খাতা পাব কোথায়?’

রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তার সব বই-খাতা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনোরকম দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আবদুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য পয়সা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।

সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা।

বন্যায় শিহাব, তোফাজ্জলের মতো অনেক শিক্ষার্থীই হারিয়ে ফেলেছে বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। সরকার থেকে দেয়া পাঠ্যবই বাজারে কিনতে পাওয়া না যাওয়ায় এগুলো হারিয়ে সংকটে পড়েছে সব শিক্ষার্থী। তাদের বইসহ শিক্ষা সরঞ্জাম দেয়া না হলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন।

তবে বন্যায় কী পরিমাণ শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে, সেটির তথ্য নেই শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ তবে এটি যে সমাধান নয়, সেটি তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এবার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’

শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মজুদ থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’

জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’

গেল বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ফের শঙ্কা

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

গেল বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ফের সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলাজুড়েই বলাবলি হচ্ছে আবারও নাকি বন্যা হবে। এই খবরে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে। তবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার নিচু এলাকা আবার ও নুতন করে প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার এর আগের দিন ২০০ মিলিমিটার। এই কর্মকর্তা জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস কোন বন্যার আভাস দেয়নি, লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী খাসিমারা ও চেলা নদীর পানি বেড়ে প্রবেশ করছে নি¤œাঞ্চলে। এছাড়া সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি, এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। বোগলা ইউনিয়নের আন্ধারীগাঁও এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, আগের বন্যার পানি ঘর থেকে নামতে পারেনি এর মধ্যে রাত থেকে ঢল নামছে। চেলার নদীর ইদুকোন ও আলমখালি দিয়ে পানি ঢুকছে। এখানে বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। আমাদের এলাকায় আবার পানি বাড়ছে, এখন আবার বড় বন্যা হলে আমাদের মতো মানুষ কি করে বাচমু?

গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। সুনামগঞ্জ টানা চারদিন সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময় মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ছিল বন্ধ। এরপর ২০ জুন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে। তবে এখনও অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আছে। এখনও জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষ পানিবন্দী আছে। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে আছে বন্যার পানি। জেলার গ্রামীণ সড়ক এখনও পানিতে প্লাবিত আছে। তবে নতুন করে পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলাবাসীর মনে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি আগের মতো হবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হবে। তবে ভারী নয়, এই বৃষ্টি হবে হালকা। বন্যা পূর্ভাবাস অনুযায়ী সুনামগঞ্জে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা এখনও বন্যাকবলিত। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। কিন্তু ভারতের মেঘলায়েও বৃষ্টিপাত হওয়ায় দোয়ারাবাজারের সীমান্তবর্তী খাসিমারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নি¤œাঞ্চল এলাকায় প্রবেশ করেছে। উপজেলার ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ বন্যা দুর্গতদের মাঝে খাবার বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মামুন জানান, ছাতক উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই এখনও পানি রয়েছে। এছাড়া আরও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমাদের বন্যা মোকাবিলার সব প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণসহ অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রচুর সহযোগিতার খবর পাচ্ছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ জেলার বন্যাকবলিত দুর্গম হাওরাঞ্চলের মানুষসহ অন্যান্য জায়গাতে দিনে রাতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরও বিভিন্ন সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২ , ১৬ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলকদ ১৪৪৩

ফের বন্যা আতঙ্ক সিলেট-সুনামগঞ্জে

image

সিলেট : ফের পানি বাড়ছে সুরমাসহ বিভিন্ন নদীতে -ইদ্রিস আলী

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

বিদ্যুতের মিটার উঁচু স্থানে স্থানান্তরের অনুরোধ

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ। বাড়িঘর তলিয়ে আছে পানির নিচে। আবারো বাড়তে শুরু করেছে সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি। গতকাল সবগুলো পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কয়েক ইঞ্চি বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা এবং লোভা নদীর পানিও। এতে টানা দুই দফার পর তৃতীয় দফার বন্যা আতঙ্কে ভুগছে সিলেটবাসী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নি¤œাঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে তাদের বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার উঁচুঁ স্থানে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া বেশকিছু এলাকায় পানিতে বই ভেসে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় যে যার মতো ত্রাণ বিতরণও অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পানি এখনো পুরো নামেনি। এখনো প্লাবিত জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে গত কয়েকদিন ধরে পানি কমতে শুরু করেছিল। আর গতকাল এসে ফের বাড়ছে নদীর পানি। পানি আবার বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় হাঁটু পানির জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। উপশহর, তালতালা, তেররতণ, মির্জা জাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।

পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন বলেন, গত রাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, টানা ১০দিন পর মাত্র দুই দিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোন সীমা থাকবে না।

বিদ্যুতের মিটার উঁচুতে স্থানান্তরের পরামর্শ

বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরসহ সব নিচু এলাকাগুলোর সব বাসিন্দাকে তাদের বিদ্যুতের মিটার উঁচুতে স্থানান্তরের পরামর্শন দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২।

গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট দপ্তরের আওতায় নগরীর শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, কালিঘাটসহ অন্যান্য নিচু এলাকায় যেসব বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সেসব বাসাবাড়ির মিটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিরাপদ উঁচু স্থানে স্থাপনের জন্য গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ করা হলো। এ ক্ষেত্রে মিটার সরানোর ব্যয় গ্রাহককে বহন করতে হবে। তবে মিটার পুনঃসংযোগের জন্য টোকেন বা টেম্পার টোকেন বিদ্যুৎ বিভাগ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।

ভেসে গেছে বই, অনিশ্চিত পড়ালেখা

বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসন সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও নেই পর্যাপ্ত বই। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই। সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে তোফাজ্জল হোসেন। তার বইও ভেসে গেছে বানের জলে। তোফাজ্জল বলে, ‘বন্যার কারণে কয়েক দিন ধরেই পড়ালেখা করতে পারছি না। পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। এখন বাড়িতে এসে দেখি ঘরে বই-খাতা, জ্যামিতি বক্স কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে। যেকোন দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এখন আমি বই-খাতা পাব কোথায়?’

রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তার সব বই-খাতা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনোরকম দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আবদুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য পয়সা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।

সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা।

বন্যায় শিহাব, তোফাজ্জলের মতো অনেক শিক্ষার্থীই হারিয়ে ফেলেছে বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। সরকার থেকে দেয়া পাঠ্যবই বাজারে কিনতে পাওয়া না যাওয়ায় এগুলো হারিয়ে সংকটে পড়েছে সব শিক্ষার্থী। তাদের বইসহ শিক্ষা সরঞ্জাম দেয়া না হলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন।

তবে বন্যায় কী পরিমাণ শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে, সেটির তথ্য নেই শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ তবে এটি যে সমাধান নয়, সেটি তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এবার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’

শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মজুদ থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’

জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’

গেল বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ফের শঙ্কা

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

গেল বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ফের সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলাজুড়েই বলাবলি হচ্ছে আবারও নাকি বন্যা হবে। এই খবরে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে। তবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার নিচু এলাকা আবার ও নুতন করে প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার এর আগের দিন ২০০ মিলিমিটার। এই কর্মকর্তা জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস কোন বন্যার আভাস দেয়নি, লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী খাসিমারা ও চেলা নদীর পানি বেড়ে প্রবেশ করছে নি¤œাঞ্চলে। এছাড়া সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি, এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। বোগলা ইউনিয়নের আন্ধারীগাঁও এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, আগের বন্যার পানি ঘর থেকে নামতে পারেনি এর মধ্যে রাত থেকে ঢল নামছে। চেলার নদীর ইদুকোন ও আলমখালি দিয়ে পানি ঢুকছে। এখানে বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। আমাদের এলাকায় আবার পানি বাড়ছে, এখন আবার বড় বন্যা হলে আমাদের মতো মানুষ কি করে বাচমু?

গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। সুনামগঞ্জ টানা চারদিন সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময় মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ছিল বন্ধ। এরপর ২০ জুন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে। তবে এখনও অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আছে। এখনও জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষ পানিবন্দী আছে। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে আছে বন্যার পানি। জেলার গ্রামীণ সড়ক এখনও পানিতে প্লাবিত আছে। তবে নতুন করে পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলাবাসীর মনে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি আগের মতো হবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হবে। তবে ভারী নয়, এই বৃষ্টি হবে হালকা। বন্যা পূর্ভাবাস অনুযায়ী সুনামগঞ্জে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা এখনও বন্যাকবলিত। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। কিন্তু ভারতের মেঘলায়েও বৃষ্টিপাত হওয়ায় দোয়ারাবাজারের সীমান্তবর্তী খাসিমারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নি¤œাঞ্চল এলাকায় প্রবেশ করেছে। উপজেলার ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ বন্যা দুর্গতদের মাঝে খাবার বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মামুন জানান, ছাতক উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই এখনও পানি রয়েছে। এছাড়া আরও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমাদের বন্যা মোকাবিলার সব প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণসহ অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রচুর সহযোগিতার খবর পাচ্ছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ জেলার বন্যাকবলিত দুর্গম হাওরাঞ্চলের মানুষসহ অন্যান্য জায়গাতে দিনে রাতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরও বিভিন্ন সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।