মেঘনার ক্রমাগত ভাঙনে আতংকে আশুগঞ্জের চর-সোনারামপুরবাসী

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর ভাঙনে আতংকিত হয়ে পড়েছে উপজেলার চর- সোনারামপুরবাসী। গত কয়েকদিনে চরের দুটি ঘর বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে, দেবে গেছে চরের শ্মশ্বানের মাঝখানের মাটি। ক্রমাগত ভাঙনে আতংকিত চরে বসবাসকারী সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। বন্যার কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে চরে স্থাপিত আশুগঞ্জ - সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের রিভারক্রসিং টাওয়ারের নীচ। নদীর ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে টাওয়ারটি।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, মেঘনা নদীর চরের উজানে অপরিকল্পিত ড্রেজিং, কয়েকজন চরবাসীর নদী তীর দখল ও বর্ষার কারণে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভাঙন প্রতিরোধ ও টাওয়ারের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টাওয়ার এলাকা ও চরের শ্মশান ঘাট এলাকায় ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার সকালে আশুগঞ্জ - সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের রিভারক্রসিং টাওয়ারের এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পিজিসিবির ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল (সিভিল ডিজাইন ) বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী। এ সময় তার সাথে ছিলেন পিজিসিবির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারি প্রকৌশলী সাদী মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃটিশ আমলে মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা চর- সোনারামপুরে জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে চরে ৬ হাজার ৪২২ জন মানুষ বসবাস করেন। বসবাসকারীদের প্রায় ৯০ ভাগই হিন্দু ধর্মাম্বলী। চরের পূর্ব সীমানায় রয়েছে ২৩০ কেভি আশুগঞ্জ - সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের রিভারক্রসিং ৩ নং টাওয়ার।

প্রতিবছর বর্ষা শুরু এবং শেষের দিকে টাওয়ার এলাকায় এবং চরের মধ্যবর্তী শ্মশান ঘাট এলাকায় কম- বেশি ভাঙন দেখা দেয়। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আবার ভাঙন শুরু হয়।

গত সপ্তাহে চরের বাসিন্দা রাসু দাস ও উৎপল দাসের বাড়ির একাংশ নদীতে তলিয়ে গেছে। দেবে গেছে শ্মশানের মাঝখানের মাটি। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটি চরের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।

গত ২০১৯ সালেও টাওয়ার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিলে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তাছাড়া টাওয়ারের নিরাপত্তায় সিমেন্টের ব্লক রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির অনুরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টাওয়ার এলাকায় ও চরের শ্মশান ঘাট এলাকায় ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

চরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা, ভারত দাস, শিপন দাসসহ বেশ কয়েকজন বলেন, কয়েক বছর আগে চরের উজানে মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিত ডেজিং করার পর থেকে প্রতিবছরই বর্ষায় চরে ভাঙন শুরু হয়। তারা চর রক্ষায় চরের চারপাশে বাধঁ নির্মাণের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, চরে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিঃদায়িত্ব) খান মোঃ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ভাঙন এলাকায় ৭ হাজার জিও ব্যাগ (বালির বস্তা) ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই ৪ হাজার ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, টাওয়ারের আশে- পাশে যাতে কেউ ঘেষতে না পারে সেজন্য নৌ পুলিশের বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল (সিভিল ডিজাইন ) বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, টাওয়ারের নিরাপত্তার জন্য যে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল তা কিছুটা নষ্ট ও স্থানচ্যুতি হয়েছে। টাওয়ার এলাকায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানি আছে। তাছাড়া টাওয়ারের পশ্চিম পাশে (চরঘেষে) নতুন করে প্রবল স্রোতধারা বইছে- যাতে টাওয়ারের পশ্চিম পাশের মাটি ও সরে যাবার আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

এ ব্যাপারে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, বুধবার পিজিসিবির পক্ষ থেকে ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি নজরদারির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২ , ১৭ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলকদ ১৪৪৩

মেঘনার ক্রমাগত ভাঙনে আতংকে আশুগঞ্জের চর-সোনারামপুরবাসী

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাক্ষণবাড়িয়া

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর ভাঙনে আতংকিত হয়ে পড়েছে উপজেলার চর- সোনারামপুরবাসী। গত কয়েকদিনে চরের দুটি ঘর বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে, দেবে গেছে চরের শ্মশ্বানের মাঝখানের মাটি। ক্রমাগত ভাঙনে আতংকিত চরে বসবাসকারী সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। বন্যার কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে চরে স্থাপিত আশুগঞ্জ - সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের রিভারক্রসিং টাওয়ারের নীচ। নদীর ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে টাওয়ারটি।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, মেঘনা নদীর চরের উজানে অপরিকল্পিত ড্রেজিং, কয়েকজন চরবাসীর নদী তীর দখল ও বর্ষার কারণে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভাঙন প্রতিরোধ ও টাওয়ারের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টাওয়ার এলাকা ও চরের শ্মশান ঘাট এলাকায় ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার সকালে আশুগঞ্জ - সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের রিভারক্রসিং টাওয়ারের এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পিজিসিবির ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল (সিভিল ডিজাইন ) বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী। এ সময় তার সাথে ছিলেন পিজিসিবির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারি প্রকৌশলী সাদী মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃটিশ আমলে মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা চর- সোনারামপুরে জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে চরে ৬ হাজার ৪২২ জন মানুষ বসবাস করেন। বসবাসকারীদের প্রায় ৯০ ভাগই হিন্দু ধর্মাম্বলী। চরের পূর্ব সীমানায় রয়েছে ২৩০ কেভি আশুগঞ্জ - সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের রিভারক্রসিং ৩ নং টাওয়ার।

প্রতিবছর বর্ষা শুরু এবং শেষের দিকে টাওয়ার এলাকায় এবং চরের মধ্যবর্তী শ্মশান ঘাট এলাকায় কম- বেশি ভাঙন দেখা দেয়। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আবার ভাঙন শুরু হয়।

গত সপ্তাহে চরের বাসিন্দা রাসু দাস ও উৎপল দাসের বাড়ির একাংশ নদীতে তলিয়ে গেছে। দেবে গেছে শ্মশানের মাঝখানের মাটি। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটি চরের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।

গত ২০১৯ সালেও টাওয়ার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিলে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তাছাড়া টাওয়ারের নিরাপত্তায় সিমেন্টের ব্লক রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির অনুরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) টাওয়ার এলাকায় ও চরের শ্মশান ঘাট এলাকায় ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

চরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা, ভারত দাস, শিপন দাসসহ বেশ কয়েকজন বলেন, কয়েক বছর আগে চরের উজানে মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিত ডেজিং করার পর থেকে প্রতিবছরই বর্ষায় চরে ভাঙন শুরু হয়। তারা চর রক্ষায় চরের চারপাশে বাধঁ নির্মাণের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, চরে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিঃদায়িত্ব) খান মোঃ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ভাঙন এলাকায় ৭ হাজার জিও ব্যাগ (বালির বস্তা) ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই ৪ হাজার ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, টাওয়ারের আশে- পাশে যাতে কেউ ঘেষতে না পারে সেজন্য নৌ পুলিশের বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল (সিভিল ডিজাইন ) বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, টাওয়ারের নিরাপত্তার জন্য যে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল তা কিছুটা নষ্ট ও স্থানচ্যুতি হয়েছে। টাওয়ার এলাকায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানি আছে। তাছাড়া টাওয়ারের পশ্চিম পাশে (চরঘেষে) নতুন করে প্রবল স্রোতধারা বইছে- যাতে টাওয়ারের পশ্চিম পাশের মাটি ও সরে যাবার আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

এ ব্যাপারে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, বুধবার পিজিসিবির পক্ষ থেকে ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি নজরদারির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।