ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭ শিক্ষকের অনাস্থা

দুর্নীতিসহ ১২টি অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিভাগের সাতজন শিক্ষক। গত ২৬ জুন উপাচার্যের কার্যালয়ে চিঠিটি জমা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

অনাস্থা জানানো সাত শিক্ষক হলেন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. মোছা. আয়েশা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক আরিফা রহমান, ড. আকিব-উল হক, সহকারী অধ্যাপক ছন্দা কর্মকার, সঞ্চারী প্রতিভা, ফারিয়া বকুল। এসব শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি বিভাগের অভ্যন্তরীণ উল্লেখ করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি তারা। তবে চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে সাত শিক্ষক লিখেছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনের অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি ও সিএন্ডডি কমিটির সভায় কথা বলতে গেলে বা তার অন্যায়কে সমর্থন না করলে আমাদের সবার প্রতিই তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং অসদাচরণ করেন। আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী সবাই তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা কেউ কেউ মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত, কেউ কেউ অত্যন্ত ভীত ও শঙ্কিত। এতে করে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অভিভাবক। এ অবস্থায় আমরা আপনার কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করছি।

দুর্নীতি ও বিভিন্ন অন্যায় কর্মকান্ডে জড়িত মনোবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আসন্ন সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করে তা তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করে মনোবিজ্ঞান বিভাগে সবার জন্য স্বাভাবিক একাডেমিক কর্মপরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার আবেদন জানানো হয় সাত শিক্ষকের চিঠিতে।

ড. কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্টোর কিপার নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। পছন্দের লোক নিয়োগের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতি মাসের সভায় শিক্ষক বা কর্মচারী নিয়োগের বা নতুন নতুন পদ সৃষ্টির এজেন্ডা দেন, যেটিকে দুর্নীতির অংশ বলে চিহ্নিত করেন সাত শিক্ষক।

আর্থিক বিষয় নিয়ে অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সিএন্ডডি কমিটির অনুমোদন ছাড়া লাগামহীনভাবে অর্থ খরচ করেন চেয়ারম্যান। যে কারণে বিভাগের যৌথ একাউন্ট এবং বিভাগের ক্রয় কমিটি থেকে লিখিতভাবে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন অধ্যাপক রেজাউল করিম।

মিথ্যাচার, অসদাচরণ, মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি নিয়ে আরও ৮টি অভিযোগ করা হয়েছে সাত শিক্ষকের চিঠিতে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন বলেন, “এদের বিরুদ্ধে বিভাগের অন্য শিক্ষকদেরও অনাস্থা আছে। বিভাগের শিক্ষক ২০ জন, সাতজনের অনাস্থায় কিছু আসে যায় না। বিভাগের চেয়ারম্যান কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যে ভোটে নির্বাচিত হয় আবার অনাস্থা ভোটে পদত্যাগ করতে হবে?

আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কোনো অনিয়ম করিনি। একাডেমিক কাউন্সিলে মেজরিটি অনুপাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচের নিয়ম আছে। এই পাঁচ-সাত জনের কথায়তো আর বিভাগ চলে না।

শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২ , ১৭ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলকদ ১৪৪৩

ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭ শিক্ষকের অনাস্থা

প্রতিনিধি, ঢাবি

দুর্নীতিসহ ১২টি অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিভাগের সাতজন শিক্ষক। গত ২৬ জুন উপাচার্যের কার্যালয়ে চিঠিটি জমা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

অনাস্থা জানানো সাত শিক্ষক হলেন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. মোছা. আয়েশা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক আরিফা রহমান, ড. আকিব-উল হক, সহকারী অধ্যাপক ছন্দা কর্মকার, সঞ্চারী প্রতিভা, ফারিয়া বকুল। এসব শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি বিভাগের অভ্যন্তরীণ উল্লেখ করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি তারা। তবে চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে সাত শিক্ষক লিখেছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনের অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি ও সিএন্ডডি কমিটির সভায় কথা বলতে গেলে বা তার অন্যায়কে সমর্থন না করলে আমাদের সবার প্রতিই তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং অসদাচরণ করেন। আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী সবাই তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা কেউ কেউ মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত, কেউ কেউ অত্যন্ত ভীত ও শঙ্কিত। এতে করে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অভিভাবক। এ অবস্থায় আমরা আপনার কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করছি।

দুর্নীতি ও বিভিন্ন অন্যায় কর্মকান্ডে জড়িত মনোবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আসন্ন সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করে তা তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করে মনোবিজ্ঞান বিভাগে সবার জন্য স্বাভাবিক একাডেমিক কর্মপরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার আবেদন জানানো হয় সাত শিক্ষকের চিঠিতে।

ড. কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্টোর কিপার নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। পছন্দের লোক নিয়োগের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতি মাসের সভায় শিক্ষক বা কর্মচারী নিয়োগের বা নতুন নতুন পদ সৃষ্টির এজেন্ডা দেন, যেটিকে দুর্নীতির অংশ বলে চিহ্নিত করেন সাত শিক্ষক।

আর্থিক বিষয় নিয়ে অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সিএন্ডডি কমিটির অনুমোদন ছাড়া লাগামহীনভাবে অর্থ খরচ করেন চেয়ারম্যান। যে কারণে বিভাগের যৌথ একাউন্ট এবং বিভাগের ক্রয় কমিটি থেকে লিখিতভাবে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন অধ্যাপক রেজাউল করিম।

মিথ্যাচার, অসদাচরণ, মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি নিয়ে আরও ৮টি অভিযোগ করা হয়েছে সাত শিক্ষকের চিঠিতে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন বলেন, “এদের বিরুদ্ধে বিভাগের অন্য শিক্ষকদেরও অনাস্থা আছে। বিভাগের শিক্ষক ২০ জন, সাতজনের অনাস্থায় কিছু আসে যায় না। বিভাগের চেয়ারম্যান কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যে ভোটে নির্বাচিত হয় আবার অনাস্থা ভোটে পদত্যাগ করতে হবে?

আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কোনো অনিয়ম করিনি। একাডেমিক কাউন্সিলে মেজরিটি অনুপাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচের নিয়ম আছে। এই পাঁচ-সাত জনের কথায়তো আর বিভাগ চলে না।