মূল হোতা শনাক্ত, গ্রেপ্তার চারজনের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন

‘এই শাহীনুর ভাই ওই মালাডা কোহানে?’ কলেজ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি এ কথা বলার পর কিছুক্ষণ কেটে যায়। এ সময় কলেজ ভবনের সামনে অনেক পুলিশ সদস্য ও বিক্ষুদ্ধ জনতা ছিলেন। এছাড়া ভবনের কলাপসিবল গেটের সামনেও পুলিশের এক সদস্য ছিলেন। এ সময় চারিদিকে শোরগোল চলছিল। হঠাৎ করেই ভবনের ভেতর থেকে নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং অভিযুক্ত ছাত্র রাহুল দেব রায় ও তার বাবাকে বের করে আনা হয়। পুলিশ সদস্যসহ বিক্ষুদ্ধ জনতা তাদের বের করে আনেন। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষসহ কারো গলায়ই জুতার মালা ছিল না। ঢালু সিঁড়িতে (প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহৃত) আসার পরই বিক্ষুদ্ধরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ওই শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরান। ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওচিত্রে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তাদের মাঠের ভেতরে নিয়ে আসলে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই প্রিন্সিপ্যালের মালাটা খুলে দেও।’ তবুও খোলা হয়নি জুতার মালা। তবে পুলিশের সামনে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা দেয়ায় বিভিন্ন মহলে নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।

ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়-লাল, কালো ও আকাশি রঙের গেঞ্জি পরিহিত তিন যুবক গলায় জুতার মালা পরান। এই ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। এ তথ্য জানিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)। এর মধ্যে লাল রঙের গেঞ্জি পরিহিত আড়পাড়া গ্রামের শাওনসহ (২৮) দু’জনকে গত মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া কালো রঙের গেঞ্জি পরিহিত রুখালী গ্রামের রহমতউল্লাহ বিশ্বাস রনিকে গত বুধবার রাতে খুলনার ছোট বয়রা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রনি খুলনা বিএল কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর অন্য হোতা আকাশি রঙের গেঞ্জি পরা যুবককে খুঁজছে পুলিশ।

এদিকে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করাসহ সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তারকৃত চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী ৩ জুলাই রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৭ জুলাই মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় কয়েক গ্রামের ১৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে নড়াইল সদরের বড়কুলা গ্রামে অধ্যক্ষের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ প্রহারা রয়েছে। বাড়িতে অধ্যক্ষের স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ পরিবারের অন্যরা আছেন। এর মধ্যে অধ্যক্ষের অনার্সপড়–য়া বড় মেয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অপমান ও লজ্জায় ক্লাসে যেতে পারছি না। মেঝো বোনের সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সে প্রাইভেট পড়তে বাইরে যেতে পারছে না। ছোট বোনেরও একই অবস্থা। আর বাবা আপাতত আত্মীয় বাড়িতেই থাকছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, গত ১৮ জুন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের রাজনীতিবিদ নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় তার ফেইসবুক আইডিতে যে পোস্ট দিয়েছে, সেজন্য ওই ছাত্রই দায়ী। এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়ী নন।

শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২ , ১৭ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলকদ ১৪৪৩

মূল হোতা শনাক্ত, গ্রেপ্তার চারজনের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন

প্রতিনিধি, নড়াইল

‘এই শাহীনুর ভাই ওই মালাডা কোহানে?’ কলেজ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি এ কথা বলার পর কিছুক্ষণ কেটে যায়। এ সময় কলেজ ভবনের সামনে অনেক পুলিশ সদস্য ও বিক্ষুদ্ধ জনতা ছিলেন। এছাড়া ভবনের কলাপসিবল গেটের সামনেও পুলিশের এক সদস্য ছিলেন। এ সময় চারিদিকে শোরগোল চলছিল। হঠাৎ করেই ভবনের ভেতর থেকে নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং অভিযুক্ত ছাত্র রাহুল দেব রায় ও তার বাবাকে বের করে আনা হয়। পুলিশ সদস্যসহ বিক্ষুদ্ধ জনতা তাদের বের করে আনেন। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষসহ কারো গলায়ই জুতার মালা ছিল না। ঢালু সিঁড়িতে (প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহৃত) আসার পরই বিক্ষুদ্ধরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ওই শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরান। ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওচিত্রে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তাদের মাঠের ভেতরে নিয়ে আসলে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই প্রিন্সিপ্যালের মালাটা খুলে দেও।’ তবুও খোলা হয়নি জুতার মালা। তবে পুলিশের সামনে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা দেয়ায় বিভিন্ন মহলে নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।

ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়-লাল, কালো ও আকাশি রঙের গেঞ্জি পরিহিত তিন যুবক গলায় জুতার মালা পরান। এই ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। এ তথ্য জানিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)। এর মধ্যে লাল রঙের গেঞ্জি পরিহিত আড়পাড়া গ্রামের শাওনসহ (২৮) দু’জনকে গত মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া কালো রঙের গেঞ্জি পরিহিত রুখালী গ্রামের রহমতউল্লাহ বিশ্বাস রনিকে গত বুধবার রাতে খুলনার ছোট বয়রা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রনি খুলনা বিএল কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর অন্য হোতা আকাশি রঙের গেঞ্জি পরা যুবককে খুঁজছে পুলিশ।

এদিকে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করাসহ সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তারকৃত চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী ৩ জুলাই রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৭ জুলাই মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় কয়েক গ্রামের ১৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে নড়াইল সদরের বড়কুলা গ্রামে অধ্যক্ষের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ প্রহারা রয়েছে। বাড়িতে অধ্যক্ষের স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ পরিবারের অন্যরা আছেন। এর মধ্যে অধ্যক্ষের অনার্সপড়–য়া বড় মেয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অপমান ও লজ্জায় ক্লাসে যেতে পারছি না। মেঝো বোনের সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সে প্রাইভেট পড়তে বাইরে যেতে পারছে না। ছোট বোনেরও একই অবস্থা। আর বাবা আপাতত আত্মীয় বাড়িতেই থাকছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, গত ১৮ জুন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের রাজনীতিবিদ নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় তার ফেইসবুক আইডিতে যে পোস্ট দিয়েছে, সেজন্য ওই ছাত্রই দায়ী। এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়ী নন।