বাজেট পাস, আজ থেকে কার্যকর

জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২ (বাজেট) পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফেরাতে চায় সরকার। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ রাখতে চায় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণের। এ জন্য আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক রেখেই নতুন বাজেট অনুমোদন পায়।

এর মধ্য দিয়ে আজ থেকে এ বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে; যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বছরজুড়েই সরকারকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ঘাটতি হিসাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

‘কোভিড-১৯ অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর অধিবেশনজুড়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। তবে শেষ পর্যন্ত বাজেটে ব্যয়ের আকারসহ অন্যান্য মৌলিক ইস্যুতেগুলোতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।

প্রস্তাবিত বাজেটে পাচার হওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কেউ ঘোষণা দিয়ে নগদ অর্থ আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে, তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা ছিল বছরে ১২ লাখ টাকা।

এছাড়া সব সেবার ক্ষেত্রে ই-টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) যুক্ত করে রিটার্ন দাখিলের যে বাধ্যবাধকতা ছিল তাতেও ছাড় দেয়া হয়েছে। কেবল ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে বাজেট উপস্থাপনের পর গত ১৩ জুন বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়।

এবার অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে মূল লক্ষ্য হলো করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারায় প্রত্যাবর্তন। সেই লক্ষ্যে এই বাজেটের মূল নজর হচ্ছে অর্থনীতির সব খাতে সক্ষমতার উন্নয়ন। এজন্য এই বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।

ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যেখানে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

ঘাটতির অঙ্ক ছাড়া বাকিটা আসবে রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে। এর লক্ষ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংগ্রহ করা কর রাজস্বের মাধ্যমে আয় করা হবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই আয় আসবে মূলত আয়কর, ভ্যাট এবং আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে। এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোক্তাকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে এই বাজেটে। এজন্য অর্থমন্ত্রী আগামী বছরজুড়ে দেশের মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নিয়ে তার আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় কোন খাতে সম্পদের কী পরিমাণ ব্যয় করবেন সেটিও স্পষ্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে মোট সম্পদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, কৃষিতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, সুদ পরিশোধে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, পরিবহন ও যোগাযোগে ১২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও জনপ্রশাসন ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, গৃহায়নে এক শতাংশ, বিনোদন ও সংস্কৃতি এবং ধর্মে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিসে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে এক দশমিক এক শতাংশ ব্যয় করার ছক তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী।

পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫১ কোটি ৮১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয় করার কর্তৃত্ব দিয়ে সংসদে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২ সর্বসম্মতিক্রমে পাসের মধ্য দিয়ে নতুন বাজেট পাস হয়।

২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সরকারের অনুমিত ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে সংযুক্ত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্বদানের জন্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে এই নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২ উত্থাপন করে পাসের প্রস্তাব করেন। বিলে বাংলাদেশের সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং ২০২৩ সালের ৩০ জুন মাসে সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের অনুমিত ব্যয় মঞ্জুরি তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্দিষ্টকরণের বিধান করা হয়। মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের ব্যয় নির্বাহের জন্য মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবির প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।

বিরোধীদলের পক্ষ থেকে এসব দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে মোট ৬৬৪টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। এর মধ্যে ৪টি দাবির ওপর বিরোধীদল আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা বক্তব্য দেন। এই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

গত ৯ জুন বাজেট উপস্থাপনের পর ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয় ১৩ জুন। এতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর টানা ১৬ দিন আলোচনা হয়।

এর আগে বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারের অর্থবিল পাস করা হয়। সেখানে পাচারের অর্থ-সম্পদ দেশে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সংসদ সদস্যদের অর্থবিলের ওপর আনীত সংশোধনীগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। বাকিগুলো সদস্যদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

এই বাজেট কার্যকরের ফলে বাড়তি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে একদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যেমন নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে, অন্যদিকে করদাতাদের ওপর বাড়তি করারোপের একটা চাপও তৈরি হবে। যে কারণে কোন ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে, আবার সেটি কোন কোন ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম দামেও পাওয়ার পথ তৈরি হবে।

এক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য ও সেবামূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্থমন্ত্রী বাজেট পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়েছেন আয় বাড়ানোর নানা পরিকল্পনা। এজন্য বিভিন্ন রকম কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ পণ্য ও সেবা সহজলভ্য রাখতে উৎপাদন বাড়িয়ে সরবরাহ বাড়াতে রেখেছেন এযাবৎকালের সর্বোচ্চ প্রণোদনা ও ভর্তুকি ব্যয়ের পরিকল্পনা।

শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২ , ১৭ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলকদ ১৪৪৩

বাজেট পাস, আজ থেকে কার্যকর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২ (বাজেট) পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফেরাতে চায় সরকার। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ রাখতে চায় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণের। এ জন্য আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক রেখেই নতুন বাজেট অনুমোদন পায়।

এর মধ্য দিয়ে আজ থেকে এ বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে; যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বছরজুড়েই সরকারকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ঘাটতি হিসাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

‘কোভিড-১৯ অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর অধিবেশনজুড়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। তবে শেষ পর্যন্ত বাজেটে ব্যয়ের আকারসহ অন্যান্য মৌলিক ইস্যুতেগুলোতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।

প্রস্তাবিত বাজেটে পাচার হওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কেউ ঘোষণা দিয়ে নগদ অর্থ আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে, তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা ছিল বছরে ১২ লাখ টাকা।

এছাড়া সব সেবার ক্ষেত্রে ই-টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) যুক্ত করে রিটার্ন দাখিলের যে বাধ্যবাধকতা ছিল তাতেও ছাড় দেয়া হয়েছে। কেবল ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে বাজেট উপস্থাপনের পর গত ১৩ জুন বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়।

এবার অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে মূল লক্ষ্য হলো করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারায় প্রত্যাবর্তন। সেই লক্ষ্যে এই বাজেটের মূল নজর হচ্ছে অর্থনীতির সব খাতে সক্ষমতার উন্নয়ন। এজন্য এই বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।

ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যেখানে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

ঘাটতির অঙ্ক ছাড়া বাকিটা আসবে রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে। এর লক্ষ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংগ্রহ করা কর রাজস্বের মাধ্যমে আয় করা হবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই আয় আসবে মূলত আয়কর, ভ্যাট এবং আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে। এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোক্তাকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে এই বাজেটে। এজন্য অর্থমন্ত্রী আগামী বছরজুড়ে দেশের মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নিয়ে তার আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় কোন খাতে সম্পদের কী পরিমাণ ব্যয় করবেন সেটিও স্পষ্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে মোট সম্পদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, কৃষিতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, সুদ পরিশোধে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, পরিবহন ও যোগাযোগে ১২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও জনপ্রশাসন ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, গৃহায়নে এক শতাংশ, বিনোদন ও সংস্কৃতি এবং ধর্মে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিসে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে এক দশমিক এক শতাংশ ব্যয় করার ছক তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী।

পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫১ কোটি ৮১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয় করার কর্তৃত্ব দিয়ে সংসদে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২ সর্বসম্মতিক্রমে পাসের মধ্য দিয়ে নতুন বাজেট পাস হয়।

২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সরকারের অনুমিত ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে সংযুক্ত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্বদানের জন্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে এই নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২২ উত্থাপন করে পাসের প্রস্তাব করেন। বিলে বাংলাদেশের সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং ২০২৩ সালের ৩০ জুন মাসে সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের অনুমিত ব্যয় মঞ্জুরি তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্দিষ্টকরণের বিধান করা হয়। মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের ব্যয় নির্বাহের জন্য মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবির প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।

বিরোধীদলের পক্ষ থেকে এসব দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে মোট ৬৬৪টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। এর মধ্যে ৪টি দাবির ওপর বিরোধীদল আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা বক্তব্য দেন। এই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

গত ৯ জুন বাজেট উপস্থাপনের পর ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয় ১৩ জুন। এতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর টানা ১৬ দিন আলোচনা হয়।

এর আগে বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারের অর্থবিল পাস করা হয়। সেখানে পাচারের অর্থ-সম্পদ দেশে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সংসদ সদস্যদের অর্থবিলের ওপর আনীত সংশোধনীগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। বাকিগুলো সদস্যদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

এই বাজেট কার্যকরের ফলে বাড়তি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে একদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যেমন নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে, অন্যদিকে করদাতাদের ওপর বাড়তি করারোপের একটা চাপও তৈরি হবে। যে কারণে কোন ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে, আবার সেটি কোন কোন ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম দামেও পাওয়ার পথ তৈরি হবে।

এক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য ও সেবামূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্থমন্ত্রী বাজেট পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়েছেন আয় বাড়ানোর নানা পরিকল্পনা। এজন্য বিভিন্ন রকম কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ পণ্য ও সেবা সহজলভ্য রাখতে উৎপাদন বাড়িয়ে সরবরাহ বাড়াতে রেখেছেন এযাবৎকালের সর্বোচ্চ প্রণোদনা ও ভর্তুকি ব্যয়ের পরিকল্পনা।