এ লজ্জা কোথায় রাখি

মাজহার মান্নান

বাংলাদেশে যারা শিক্ষকতা করেন তারাই জানেন বর্তমানে শিক্ষকতা কতটা চ্যালেঞ্জিং পেশায় পরিণত হয়েছে এবং কতটা চাপে তাদের কাজ করতে হয়। শিক্ষকদের আর্থিক চাপতো লেগেই থাকে, এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং নির্যাতন। তুচ্ছ এবং সাজানো ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষকদের এই অপমান কি জাতির জন্য লজ্জা নয়? যে শিক্ষক দেশ ও নাগরিক গঠনে কাজ করে চলেছেন তার এ অপমান পাওনা?

কোন মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোন শিক্ষক যদি অন্যায় করে থাকেন তবে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে; কিন্তু শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা, অপমান করা কি রাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর নয়? নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো কি সমগ্র জাতির জন্য লজ্জার নয়? কেউ যদি অন্যায় করে সেটা তদন্তসাপেক্ষে বিচার হবে; কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাষ্ট্রতো কাউকে দেয়নি।

শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠবস করানোর সেই দৃশ্য মানুষ ভুলেনি। ২০১৩ সালে পাবনায় একজন ছাত্র তথাকথিত অভিযোগে শিক্ষককে দুই হাতে ইট দিয়ে মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। সাভারে কলেজ শিক্ষককে এক বখাটে ছাত্র পেটালো। হাসপাতালে তার মৃত্যু হলো। ওই শিক্ষক ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করেছিলেন।

শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে মারধর করা হলো। আশালতা নামের আরেকজন শিক্ষিকাকে মিথ্যা অভিযোগে সাম্প্রদায়িকতার তকমা লাগানোর চেষ্টা করা হলো। বাংলাদেশের শিক্ষকরা আর্থ- সামাজিকভাবে কতটা ভালো থাকেন তা সবাই জানে। কৃমিকীটে খাওয়া দগ্ধ লাশের চেহারা তাদের বেতন কাঠামোর। শিক্ষকরা আর্থিক বঞ্চনার শিকার। তবুও জাতি গঠনে তারা কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তাদের প্রাপ্তি কি এই অপমান? সামান্য বেতনের দাবিতে প্রেসক্লাবে এসে শিক্ষককে মরিচের গুঁড়ার নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে। শিক্ষকদের এ ধরনের লাঞ্ছনা কি জাতির বিবেককে নাড়া দেয় না।

আসলে শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় সেই ধরনের কোন প্লাটফর্ম এখনো গড়ে ওঠেনি। শিক্ষক সমিতির নামে যে সংগঠনগুলো কাজ করছে তারাও তেমন কিছু করতে পারছে না। কেননা এই সমিতিগুলো লেজুড়বৃত্তি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ আর অপরাজনীতির জালে আটকা পড়ে আছে। শিক্ষকদের হয়রানি করা হয় বিভিন্নভাবে। সেগুলোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক নির্যাতন এবং মনো-দৈহিক নির্যাতন অন্যতম। জরিমানা, বেতন না দেয়া, অপমান, বরখাস্তকরণ, হামলা-মামলাসহ নানাভাবে তাদের অপদস্ত করা হয়।

আজ গুণগত শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে জোর দিয়ে; কিন্তু এই গুণগত শিক্ষা যারা নিশ্চিত করবেন সেই শিক্ষকদের এমনভাবে অপমান করে কি গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে? মোটেও না। শিক্ষার সামগ্রিক চিত্রটা কি স্বস্তিদায়ক? বিভিন্ন জরিপ আর বিশ্লেষণে দেখা যায়- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে গেছে সনদনির্ভর। পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাস করানোর নেশায় মেতে উঠে প্রতিষ্ঠানগুলো। গুণগত শিক্ষার প্রশ্নটি সেখানে উপেক্ষিত। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল। সেখানে পাসের হার ৯.৮৭ এবং ফেল ৯০.১৩ শতাংশ। এটা দেখে গুণগত শিক্ষার একটি সার্বিক চিত্রের ধারণা পাওয়া যায়।

নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষকদের ছাড়া কি বাস্তবায়ন সম্ভব? তাহলে যে শিক্ষক দিয়ে রাষ্ট্রের সুনাগরিক তৈরি হবে সেই শিক্ষককে পিটিয়ে কী বাস্তবায়ন করতে চায় জাতি? শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা শিক্ষকদের মর্যাদার ওপর চরম আঘাত। শিক্ষকদেরকে এক সময় সমাজের সবাই শ্রদ্ধা করতো। শিক্ষকদের সুপরামর্শ সমাজ গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশে শিক্ষকদের মর্যাদা অনেকটাই ক্ষুণœ হয়েছে।

শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো, অপমান করা, ঘুষি মারা, লাথি মারার মতো নোংরা এবং জঘন্য কর্মকান্ড বারবার শিক্ষক সমাজকে তথা সমগ্র জাতিকে বিচলিত করে তুলেছে। শিক্ষকেরাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তারা যদি কোন অন্যায় করে তবে সেটার আইনী প্রতিকার রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বারবার শিক্ষকের গায়ে হাত তোলেন তবে সেটা মেনে নেয়া যায় না। অসভ্যতারও একটি সীমা থাকে। যে শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষাবিদদের হাতে থাকার কথা সেটা এখন শিক্ষা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে।

শিক্ষা খাত নানা অনিয়মে জর্জরিত। শিক্ষকেরা এমনিতেই মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকেন বিভিন্ন কারণে। এরপরও যখন তাদের গায়ে হাত তোলা হয় সেটা বর্বরতার এক অনন্য নজির। একজন শিক্ষককে এভাবে মার খেতে হবে এটা সভ্য রাষ্ট্রে কাম্য নয়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলো শিক্ষক; যারা জাতি গঠনে অবিরাম কাজ করে চলেছেন। করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে সেটাকে পুষিয়ে নিতে শিক্ষকেরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের নিরাপত্তা কোথায়। কোন শিক্ষক যদি তার নিজ প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ না থাকেন তবে কোথায় আর তিনি নিরাপদ হবেন? শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বেতন ও অন্যান্য অসুবিধা দূরীকরণের জন্য সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করার কথা বিভিন্ন ফোরাম থেকে বলা হচ্ছে। জাতীয়করণের দাবিটি শতভাগ যৌক্তিক। শিক্ষকদের জাতীয়করণের জন্য অর্থ কোন সমস্যা নয়। যে দেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো এত বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারে সে দেশের পক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ সদিচ্ছার ব্যাপার মাত্র।

শিক্ষকদের যারা হাতের পুতুল বানাতে চায় তারা শিক্ষার কতটুকু ভালো চায় সেটাই বড় প্রশ্ন। শিক্ষা খাতে দুর্নীতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা খুবই বেদনাদায়ক। শিক্ষা খাতকে পেছনে রেখে উন্নত দেশ গঠনের চিন্তা অলীক কল্পনামাত্র। যাই হোক, শিক্ষা খাত জাতীয়করণ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। শিক্ষকেরা জাতীয়করণের সুসংবাদটি শোনার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। শিক্ষা জাতীয়করণ হলে ম্যানেজিং কমিটির খবরদারি থাকবে না। শিক্ষকেরা নিরাপদ বোধ করবেন। মেধাবীরা শিক্ষা পেশায় আসতে স্বস্তিবোধ করবেন।

পত্রিকায় মাঝে-মধ্যেই শিক্ষকদের অপমান করার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। শিক্ষককে মেরে শিক্ষা কায়েম করার অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদেরও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কেরও দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। এটা মোটেও ভালো দিক নয়। একটি বন্ধুসুলভ বন্ধন তাদের মধ্যে কাম্য। শিক্ষককে অপমান করার অর্থ পুরো জাতিকে অপমান করা। তাই শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। শিক্ষকেরা যেন স্বস্তিতে এবং নিরাপদে শিক্ষকতা করতে পারেন- সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২ , ১৭ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলকদ ১৪৪৩

এ লজ্জা কোথায় রাখি

মাজহার মান্নান

বাংলাদেশে যারা শিক্ষকতা করেন তারাই জানেন বর্তমানে শিক্ষকতা কতটা চ্যালেঞ্জিং পেশায় পরিণত হয়েছে এবং কতটা চাপে তাদের কাজ করতে হয়। শিক্ষকদের আর্থিক চাপতো লেগেই থাকে, এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং নির্যাতন। তুচ্ছ এবং সাজানো ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষকদের এই অপমান কি জাতির জন্য লজ্জা নয়? যে শিক্ষক দেশ ও নাগরিক গঠনে কাজ করে চলেছেন তার এ অপমান পাওনা?

কোন মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোন শিক্ষক যদি অন্যায় করে থাকেন তবে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে; কিন্তু শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা, অপমান করা কি রাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর নয়? নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো কি সমগ্র জাতির জন্য লজ্জার নয়? কেউ যদি অন্যায় করে সেটা তদন্তসাপেক্ষে বিচার হবে; কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাষ্ট্রতো কাউকে দেয়নি।

শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠবস করানোর সেই দৃশ্য মানুষ ভুলেনি। ২০১৩ সালে পাবনায় একজন ছাত্র তথাকথিত অভিযোগে শিক্ষককে দুই হাতে ইট দিয়ে মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। সাভারে কলেজ শিক্ষককে এক বখাটে ছাত্র পেটালো। হাসপাতালে তার মৃত্যু হলো। ওই শিক্ষক ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করেছিলেন।

শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে মারধর করা হলো। আশালতা নামের আরেকজন শিক্ষিকাকে মিথ্যা অভিযোগে সাম্প্রদায়িকতার তকমা লাগানোর চেষ্টা করা হলো। বাংলাদেশের শিক্ষকরা আর্থ- সামাজিকভাবে কতটা ভালো থাকেন তা সবাই জানে। কৃমিকীটে খাওয়া দগ্ধ লাশের চেহারা তাদের বেতন কাঠামোর। শিক্ষকরা আর্থিক বঞ্চনার শিকার। তবুও জাতি গঠনে তারা কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তাদের প্রাপ্তি কি এই অপমান? সামান্য বেতনের দাবিতে প্রেসক্লাবে এসে শিক্ষককে মরিচের গুঁড়ার নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে। শিক্ষকদের এ ধরনের লাঞ্ছনা কি জাতির বিবেককে নাড়া দেয় না।

আসলে শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় সেই ধরনের কোন প্লাটফর্ম এখনো গড়ে ওঠেনি। শিক্ষক সমিতির নামে যে সংগঠনগুলো কাজ করছে তারাও তেমন কিছু করতে পারছে না। কেননা এই সমিতিগুলো লেজুড়বৃত্তি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ আর অপরাজনীতির জালে আটকা পড়ে আছে। শিক্ষকদের হয়রানি করা হয় বিভিন্নভাবে। সেগুলোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক নির্যাতন এবং মনো-দৈহিক নির্যাতন অন্যতম। জরিমানা, বেতন না দেয়া, অপমান, বরখাস্তকরণ, হামলা-মামলাসহ নানাভাবে তাদের অপদস্ত করা হয়।

আজ গুণগত শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে জোর দিয়ে; কিন্তু এই গুণগত শিক্ষা যারা নিশ্চিত করবেন সেই শিক্ষকদের এমনভাবে অপমান করে কি গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে? মোটেও না। শিক্ষার সামগ্রিক চিত্রটা কি স্বস্তিদায়ক? বিভিন্ন জরিপ আর বিশ্লেষণে দেখা যায়- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে গেছে সনদনির্ভর। পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাস করানোর নেশায় মেতে উঠে প্রতিষ্ঠানগুলো। গুণগত শিক্ষার প্রশ্নটি সেখানে উপেক্ষিত। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল। সেখানে পাসের হার ৯.৮৭ এবং ফেল ৯০.১৩ শতাংশ। এটা দেখে গুণগত শিক্ষার একটি সার্বিক চিত্রের ধারণা পাওয়া যায়।

নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষকদের ছাড়া কি বাস্তবায়ন সম্ভব? তাহলে যে শিক্ষক দিয়ে রাষ্ট্রের সুনাগরিক তৈরি হবে সেই শিক্ষককে পিটিয়ে কী বাস্তবায়ন করতে চায় জাতি? শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা শিক্ষকদের মর্যাদার ওপর চরম আঘাত। শিক্ষকদেরকে এক সময় সমাজের সবাই শ্রদ্ধা করতো। শিক্ষকদের সুপরামর্শ সমাজ গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশে শিক্ষকদের মর্যাদা অনেকটাই ক্ষুণœ হয়েছে।

শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো, অপমান করা, ঘুষি মারা, লাথি মারার মতো নোংরা এবং জঘন্য কর্মকান্ড বারবার শিক্ষক সমাজকে তথা সমগ্র জাতিকে বিচলিত করে তুলেছে। শিক্ষকেরাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তারা যদি কোন অন্যায় করে তবে সেটার আইনী প্রতিকার রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বারবার শিক্ষকের গায়ে হাত তোলেন তবে সেটা মেনে নেয়া যায় না। অসভ্যতারও একটি সীমা থাকে। যে শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষাবিদদের হাতে থাকার কথা সেটা এখন শিক্ষা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে।

শিক্ষা খাত নানা অনিয়মে জর্জরিত। শিক্ষকেরা এমনিতেই মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকেন বিভিন্ন কারণে। এরপরও যখন তাদের গায়ে হাত তোলা হয় সেটা বর্বরতার এক অনন্য নজির। একজন শিক্ষককে এভাবে মার খেতে হবে এটা সভ্য রাষ্ট্রে কাম্য নয়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলো শিক্ষক; যারা জাতি গঠনে অবিরাম কাজ করে চলেছেন। করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে সেটাকে পুষিয়ে নিতে শিক্ষকেরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের নিরাপত্তা কোথায়। কোন শিক্ষক যদি তার নিজ প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ না থাকেন তবে কোথায় আর তিনি নিরাপদ হবেন? শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বেতন ও অন্যান্য অসুবিধা দূরীকরণের জন্য সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করার কথা বিভিন্ন ফোরাম থেকে বলা হচ্ছে। জাতীয়করণের দাবিটি শতভাগ যৌক্তিক। শিক্ষকদের জাতীয়করণের জন্য অর্থ কোন সমস্যা নয়। যে দেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো এত বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারে সে দেশের পক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ সদিচ্ছার ব্যাপার মাত্র।

শিক্ষকদের যারা হাতের পুতুল বানাতে চায় তারা শিক্ষার কতটুকু ভালো চায় সেটাই বড় প্রশ্ন। শিক্ষা খাতে দুর্নীতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা খুবই বেদনাদায়ক। শিক্ষা খাতকে পেছনে রেখে উন্নত দেশ গঠনের চিন্তা অলীক কল্পনামাত্র। যাই হোক, শিক্ষা খাত জাতীয়করণ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। শিক্ষকেরা জাতীয়করণের সুসংবাদটি শোনার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। শিক্ষা জাতীয়করণ হলে ম্যানেজিং কমিটির খবরদারি থাকবে না। শিক্ষকেরা নিরাপদ বোধ করবেন। মেধাবীরা শিক্ষা পেশায় আসতে স্বস্তিবোধ করবেন।

পত্রিকায় মাঝে-মধ্যেই শিক্ষকদের অপমান করার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। শিক্ষককে মেরে শিক্ষা কায়েম করার অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদেরও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কেরও দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। এটা মোটেও ভালো দিক নয়। একটি বন্ধুসুলভ বন্ধন তাদের মধ্যে কাম্য। শিক্ষককে অপমান করার অর্থ পুরো জাতিকে অপমান করা। তাই শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। শিক্ষকেরা যেন স্বস্তিতে এবং নিরাপদে শিক্ষকতা করতে পারেন- সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]