আড়াই বছর ধরে ফাইলবন্দী ৪ লেন প্রকল্প

সরু সড়কে যানজট : পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না শরীয়তপুরবাসী

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি সহজ হবে আশা ছিল শরীয়তপুরবাসীর, কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। মাত্র ৭০ কিলোমিটার পথ পারি দিতে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। সরু সংযোগ সড়কের কারণে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

অথচ যখন পদ্মা সেতু ছিল না তখন শরীয়তপুরের মানুষ রাজধানীতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌঁছে যেত। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে জেলা শহর থেকে সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই সরু। বিপরীত দিক থেকে আসা ছোট কোন গাড়ী সাইড দিতেও বাসগুলোকে সড়কের এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাই শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত পুরো পথই চলতে হয় খুবই ধীর গতিতে।

জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ২৭ কিলোমিটার সড়ক পার হতে সময় লেগে যায় ৩ ঘণ্টা। আর সংযোগ সড়ক থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৪৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও কম।

এই সমস্যাগুলো হওয়ার সম্ভাবনা চিন্তা করে ২০২০ সালের শুরুর দিকে এই সড়কটি চওড়া করার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেই প্রকল্প এগিয়ে নিতে পারেনি। শেষ সময় এসে তারা মহামারী করোনার দোহাই দিচ্ছেন। বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সড়কটি প্রশ্বস্ত করার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কথা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ সুফল পেতে শরীয়তপুরবাসীর আরো ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৬ জুন জেলা সদর থেকে ঢাকা রওয়ানা দিয়েছিলেন গার্মেন্টসকর্মী সাহিদা আক্তার।

সাহিদা আক্তার বলেন, জীবনে প্রথম শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকা যাবো ভেবে খুবই খুশি লাগছিল। কিন্তু শরীয়তপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বেলা ১২টায় বাসে উঠে ঢাকা পৌঁছেছি সন্ধা ৬টায়। এর থেকে ভালো ছিল আগে আমাদের লঞ্চে যেতে সময় লাগতো সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা। আমাদের শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুতে উঠা পর্যন্ত এই অত্যধিক সরু রাস্তা হওয়ার কারনেই আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ১৮ বছর পর শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বাস যোগে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছে। কিন্তু শরীয়তপুর সদর থেকে ডুবিসায়বর বন্দর কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব বাসগুলো চলছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছে চালকরা। ফলে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও এই ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এই সরু সড়কে গাড়ী চালাতে গিয়ে পদ্মা সেতুতে গাড়ী চলাচল শুরুর পর গত কয়েকদিন দিনে ছোট বড় অন্তত ৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুত্বর আহতের ঘটনাও ঘটেছে।

শরীয়তপুরের জাজিরার বাসিন্দা নাসরুল্লাহ্ শাকুরী সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলো ঠিকই কিন্তু আমরা সুফল পাচ্ছি না। চার বছর আগে রাস্তা প্রশ্বস্তের প্রকল্প অনুমোদন হলেও এতদিন কোন কাজ করা হয়নি। সবে মাত্র চলতি মাসে কাজ শুরু করেছে। ঢাকা যেতে শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত সড়কে অবস্থানকালে আতঙ্কে থাকতে হয়। অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গেলে রাস্তা ছেড়ে গাড়ির চাকা খাদে নেমে যায়। এছাড়াও বর্ষার দিন তাই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে।

জোলার একাধিক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, রাস্তা ভাঙা ও সরু থাকার কারণে ভালো কোনো কোম্পানির বাস এই রুটে আসছে না। এতে আমরা ভালো মানের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। শরীয়তপুর পরিবহন বাসের চালক আরিফ আকন সংবাদকে বলেন, শরীয়তপুর থেকে ডুবিসায়বর বন্দর পর্যন্ত কোনো রকমে যেতে পারলেও ডুবিসায়বর থেকে মাত্র ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে পরের ১০ কিলোমিটার যেতে হয়। একটি রিক্সাকে সাইড দিতেও গাড়ির চাকা সড়কের বাইরে চলে যায়। সড়কটি উন্নয়ন করা হলে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টায় যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়া যাবে।

শরীয়তপুরবাসীকে এই ভোগান্তিতে পড়ার কথা ছিল না। কারণ সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে, এই বাস্তব বিষয়টি ধরে নিয়ে সরকার প্রায় আড়াই বছর আগেই একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটি এগিয়ে নেয়ার কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।

যাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে সবাই গাফিলতি করেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন আরও দুই বছর সময় চাইছে। এটা আমাদের শরীয়তপুরবাসীর সঙ্গে এক ধরণের মস্করা করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার ২৮ মাস আগেই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নয়নের প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর করোনা মহামারিতে আশানুরূপ কাজ করা সম্ভব হয়নি।

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২ , ১৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

আড়াই বছর ধরে ফাইলবন্দী ৪ লেন প্রকল্প

সরু সড়কে যানজট : পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না শরীয়তপুরবাসী

প্রতিনিধি, জাজিরা (শরীয়তপুর)

image

জাজিরা (শরীয়তপুর) : ১২ ফুট চওড়া পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে যানজট -সংবাদ

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি সহজ হবে আশা ছিল শরীয়তপুরবাসীর, কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। মাত্র ৭০ কিলোমিটার পথ পারি দিতে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। সরু সংযোগ সড়কের কারণে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

অথচ যখন পদ্মা সেতু ছিল না তখন শরীয়তপুরের মানুষ রাজধানীতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌঁছে যেত। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে জেলা শহর থেকে সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই সরু। বিপরীত দিক থেকে আসা ছোট কোন গাড়ী সাইড দিতেও বাসগুলোকে সড়কের এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাই শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত পুরো পথই চলতে হয় খুবই ধীর গতিতে।

জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ২৭ কিলোমিটার সড়ক পার হতে সময় লেগে যায় ৩ ঘণ্টা। আর সংযোগ সড়ক থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৪৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও কম।

এই সমস্যাগুলো হওয়ার সম্ভাবনা চিন্তা করে ২০২০ সালের শুরুর দিকে এই সড়কটি চওড়া করার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেই প্রকল্প এগিয়ে নিতে পারেনি। শেষ সময় এসে তারা মহামারী করোনার দোহাই দিচ্ছেন। বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সড়কটি প্রশ্বস্ত করার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কথা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ সুফল পেতে শরীয়তপুরবাসীর আরো ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৬ জুন জেলা সদর থেকে ঢাকা রওয়ানা দিয়েছিলেন গার্মেন্টসকর্মী সাহিদা আক্তার।

সাহিদা আক্তার বলেন, জীবনে প্রথম শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকা যাবো ভেবে খুবই খুশি লাগছিল। কিন্তু শরীয়তপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বেলা ১২টায় বাসে উঠে ঢাকা পৌঁছেছি সন্ধা ৬টায়। এর থেকে ভালো ছিল আগে আমাদের লঞ্চে যেতে সময় লাগতো সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা। আমাদের শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুতে উঠা পর্যন্ত এই অত্যধিক সরু রাস্তা হওয়ার কারনেই আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ১৮ বছর পর শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বাস যোগে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছে। কিন্তু শরীয়তপুর সদর থেকে ডুবিসায়বর বন্দর কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব বাসগুলো চলছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছে চালকরা। ফলে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও এই ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এই সরু সড়কে গাড়ী চালাতে গিয়ে পদ্মা সেতুতে গাড়ী চলাচল শুরুর পর গত কয়েকদিন দিনে ছোট বড় অন্তত ৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুত্বর আহতের ঘটনাও ঘটেছে।

শরীয়তপুরের জাজিরার বাসিন্দা নাসরুল্লাহ্ শাকুরী সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলো ঠিকই কিন্তু আমরা সুফল পাচ্ছি না। চার বছর আগে রাস্তা প্রশ্বস্তের প্রকল্প অনুমোদন হলেও এতদিন কোন কাজ করা হয়নি। সবে মাত্র চলতি মাসে কাজ শুরু করেছে। ঢাকা যেতে শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত সড়কে অবস্থানকালে আতঙ্কে থাকতে হয়। অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গেলে রাস্তা ছেড়ে গাড়ির চাকা খাদে নেমে যায়। এছাড়াও বর্ষার দিন তাই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে।

জোলার একাধিক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, রাস্তা ভাঙা ও সরু থাকার কারণে ভালো কোনো কোম্পানির বাস এই রুটে আসছে না। এতে আমরা ভালো মানের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। শরীয়তপুর পরিবহন বাসের চালক আরিফ আকন সংবাদকে বলেন, শরীয়তপুর থেকে ডুবিসায়বর বন্দর পর্যন্ত কোনো রকমে যেতে পারলেও ডুবিসায়বর থেকে মাত্র ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে পরের ১০ কিলোমিটার যেতে হয়। একটি রিক্সাকে সাইড দিতেও গাড়ির চাকা সড়কের বাইরে চলে যায়। সড়কটি উন্নয়ন করা হলে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টায় যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়া যাবে।

শরীয়তপুরবাসীকে এই ভোগান্তিতে পড়ার কথা ছিল না। কারণ সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে, এই বাস্তব বিষয়টি ধরে নিয়ে সরকার প্রায় আড়াই বছর আগেই একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটি এগিয়ে নেয়ার কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।

যাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে সবাই গাফিলতি করেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন আরও দুই বছর সময় চাইছে। এটা আমাদের শরীয়তপুরবাসীর সঙ্গে এক ধরণের মস্করা করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার ২৮ মাস আগেই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নয়নের প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর করোনা মহামারিতে আশানুরূপ কাজ করা সম্ভব হয়নি।