আন্তর্জাতিক বাজারে কমলো জ্বালানি তেলের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিন ও ডিসটিলেটের মজুদ বৃদ্ধি এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধির আশঙ্কায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সংকুচিত সরবরাহে ভারসাম্য আনবে বলে প্রত্যাশা। রয়টার্স।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার আইসিই ফিউচারস ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের আগস্ট সরবরাহ চুক্তির দাম ১ ডলার ৭২ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ১১৬ ডলার ২৬ সেন্টে। সেপ্টেম্বর সরবরাহ চুক্তিতে ব্রেন্টের দাম ১ ডলার ৩৫ সেন্ট কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১১২ ডলার ৪৫ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) আগস্ট সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ১ ডলার ৯৮ সেন্ট বা ১ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১০৯ ডলার ৭৮ সেন্টে।

এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানায়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ কমে গিয়েছিল। তবে চলতি সপ্তাহে জ্বালানি তেলসহ গ্যাসোলিন ও ডিসটিলেটের মজুদ লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। মূলত পরিশোধন কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রমে গতি ফেরায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে মজুদ।

এদিকে বিপির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে জ্বালানির বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়েছে ৫.৮০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। লক্ষ্য অর্জনে দেশগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। বেশির ভাগ দেশেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমার পরিবর্তে বেড়েছে।

২০২১ স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ অব ওয়ার্ল্ড এনার্জি শীর্ষক প্রতিবেদনে বিপি জানায়, গত বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল দৈনিক ৩৭ লাখ ব্যারেল। অর্থাৎ মহামারীর আগের বছরের তুলনায় পণ্যটির চাহিদা কম ছিল। এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে দুর্বল এভিয়েশন খাত। ২০২১ সালে এভিয়েশন খাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা মহামারীর আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম ছিল।

এদিকে অর্থনীতিগুলোয় দ্রুত পুনরুদ্ধার ঘটায় জ্বালানি ব্যবহার থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা প্রায় মহামারীপূর্ব অবস্থার কাছাকাছি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর জ্বালানি পণ্যের প্রাথমিক চাহিদা বেড়েছে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ হারে, যা ২০১৯ সালের চাহিদা প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই বছর জ্বালানির চাহিদা বেড়েছিল ১ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। গত বছর প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারের ৮২ শতাংশই এসেছে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। ২০১৯ সালে এটি মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৮৩ শতাংশ এসেছিল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। আর পাঁচ বছর আগে তা ছিল ৮৫ শতাংশ।

২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা ছিল দৈনিক ৯ কোটি ৬৯ লাখ ব্যারেল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় দৈনিক ৩৭ লাখ ব্যারেল কম। চাহিদা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এভিয়েশন খাতকে দায়ী করা হচ্ছে। কারণ করোনা বিধিনিষেধ শিথিল হলেও খাতটি স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে। এভিয়েশন খাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল দৈনিক ২৫ লাখ ব্যারেল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম।

২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বেড়েছে দৈনিক ১৪ লাখ ব্যারেল করে। এরমধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি উত্তোলন বাড়াতে সহায়তা করেছে রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য দেশগুলো। ২০২১ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়েছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। এ সময় জ্বালানিটির চাহিদা মহামারীপূর্ব অবস্থাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো চার ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মাইলফলক স্পর্শ করেছে এটি। গত বছর প্রাথমিক জ্বালানিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের হিস্যা অপরিবর্তিত ছিল। এর আগের বছর পণ্যটির হিস্যা ছিল ২৪ শতাংশ।

ইনসার্ট : গত বৃহস্পতিবার আইসিই ফিউচারস ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের আগস্ট সরবরাহ চুক্তির দাম ১ ডলার ৭২ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ১১৬ ডলার ২৬ সেন্টে।

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২ , ১৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

আন্তর্জাতিক বাজারে কমলো জ্বালানি তেলের দাম

সংবাদ ডেস্ক

image

আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিন ও ডিসটিলেটের মজুদ বৃদ্ধি এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধির আশঙ্কায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সংকুচিত সরবরাহে ভারসাম্য আনবে বলে প্রত্যাশা। রয়টার্স।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার আইসিই ফিউচারস ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের আগস্ট সরবরাহ চুক্তির দাম ১ ডলার ৭২ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ১১৬ ডলার ২৬ সেন্টে। সেপ্টেম্বর সরবরাহ চুক্তিতে ব্রেন্টের দাম ১ ডলার ৩৫ সেন্ট কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১১২ ডলার ৪৫ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) আগস্ট সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ১ ডলার ৯৮ সেন্ট বা ১ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১০৯ ডলার ৭৮ সেন্টে।

এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানায়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ কমে গিয়েছিল। তবে চলতি সপ্তাহে জ্বালানি তেলসহ গ্যাসোলিন ও ডিসটিলেটের মজুদ লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। মূলত পরিশোধন কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রমে গতি ফেরায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে মজুদ।

এদিকে বিপির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে জ্বালানির বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়েছে ৫.৮০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। লক্ষ্য অর্জনে দেশগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। বেশির ভাগ দেশেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমার পরিবর্তে বেড়েছে।

২০২১ স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ অব ওয়ার্ল্ড এনার্জি শীর্ষক প্রতিবেদনে বিপি জানায়, গত বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল দৈনিক ৩৭ লাখ ব্যারেল। অর্থাৎ মহামারীর আগের বছরের তুলনায় পণ্যটির চাহিদা কম ছিল। এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে দুর্বল এভিয়েশন খাত। ২০২১ সালে এভিয়েশন খাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা মহামারীর আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম ছিল।

এদিকে অর্থনীতিগুলোয় দ্রুত পুনরুদ্ধার ঘটায় জ্বালানি ব্যবহার থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা প্রায় মহামারীপূর্ব অবস্থার কাছাকাছি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর জ্বালানি পণ্যের প্রাথমিক চাহিদা বেড়েছে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ হারে, যা ২০১৯ সালের চাহিদা প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই বছর জ্বালানির চাহিদা বেড়েছিল ১ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। গত বছর প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারের ৮২ শতাংশই এসেছে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। ২০১৯ সালে এটি মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৮৩ শতাংশ এসেছিল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। আর পাঁচ বছর আগে তা ছিল ৮৫ শতাংশ।

২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা ছিল দৈনিক ৯ কোটি ৬৯ লাখ ব্যারেল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় দৈনিক ৩৭ লাখ ব্যারেল কম। চাহিদা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এভিয়েশন খাতকে দায়ী করা হচ্ছে। কারণ করোনা বিধিনিষেধ শিথিল হলেও খাতটি স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে। এভিয়েশন খাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল দৈনিক ২৫ লাখ ব্যারেল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম।

২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বেড়েছে দৈনিক ১৪ লাখ ব্যারেল করে। এরমধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি উত্তোলন বাড়াতে সহায়তা করেছে রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য দেশগুলো। ২০২১ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়েছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। এ সময় জ্বালানিটির চাহিদা মহামারীপূর্ব অবস্থাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো চার ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মাইলফলক স্পর্শ করেছে এটি। গত বছর প্রাথমিক জ্বালানিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের হিস্যা অপরিবর্তিত ছিল। এর আগের বছর পণ্যটির হিস্যা ছিল ২৪ শতাংশ।

ইনসার্ট : গত বৃহস্পতিবার আইসিই ফিউচারস ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের আগস্ট সরবরাহ চুক্তির দাম ১ ডলার ৭২ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ১১৬ ডলার ২৬ সেন্টে।