সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে প্রণয়ন হচ্ছে ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা’

রাজধানীর সড়কে পথচারী দুর্ঘটনা কমাতে ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। মোটরযানের কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার উত্তরাধীকারীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায়। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের আলোকে এই প্রবিধানমালা প্রণয়ন হচ্ছে। খসড়া প্রবিধানমালায় ফুটপাত নির্মাণ, ফুটপাত নির্ধারণ, পথচারী নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা, পথচারী পারাপার, সড়কের যৌথ ব্যবহার, রাস্তাপারের অগ্রাধিকার, রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ, পথচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা, ২০২১’ এর ওপর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের কাছে ডিটিসিএ-এর পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৬ জুন এক আদেশে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামত চেয়েছে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষ।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালার ১২ নম্বর ‘দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালার আওতাধীন কোন মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোন ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীগণ বা উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৫৩ এর অধীনে গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসা খরচ প্রাপ্য হইবেন।’

প্রতিষ্ঠানে অধিক জনসমাবেশ ঘটলে নিজস্ব ট্রাফিক পরিকল্পনা

প্রবিধানমালার ১১ নম্বর ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস কারখানা, হাসপাতাল, ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পথচারী পারাপারের ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক ধারায় বলা হয়েছে, ‘গার্মেন্টস কারখানাসহ যে সকল প্রতিষ্ঠানে অধিক জনসমাবেশ ঘটে তাহাদিগকে নিজস্ব ট্রাফিক পরিকল্পনা তৈরি করিতে হইবে এবং রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে প্রয়োজনে ট্রাফিক ওয়ার্ডেন নিয়োগ করিতে হইবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের রাস্তায় ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ও শেষ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তা পারাপার নিরাপদ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ট্রাফিক ওয়ার্ডেনের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে প্রবিধানমালায়।

হাসপাতাল সর্ম্পকে ১১ নম্বর ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সন্নিহিত সড়কে হুইলচেয়ার, স্ট্রেচারসহ অন্যান্য চাকাযুক্ত বাহন চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাতের সঙ্গে র‌্যাম্প নির্মাণ করিতে হইবে।’

পথচারী পারাপার

খসড়া প্রবিধানমালার ৫ নম্বর ধারায় পথচারীদের ‘যত্রতত্র রাস্তা পারাপার নিয়ন্ত্রণ’ বা বন্ধ করার লক্ষ্যে সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে সড়ক বিভাজক বা ফেন্সিং এবং সড়কের ‘ফুটপাত সন্নিহিত’ দুইপাশে রেলিং বা প্রতিবন্ধক স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ম্যানহোল, ডাস্টবিন, ইউটিলিটি ইত্যাদি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে পথচারীর নিরবচ্ছিন্ন চলাচলে কোন বাধার সৃষ্টি না হয়। ম্যানহোল সর্বদা ঢাকনাসহ থাকবে ও ফুটপাত এবং এ সংলগ্ন স্থানে কোন ক্রমেই নির্মাণসামগ্রী, মালামাল ও আবর্জনা রাখা যাবে না।পথচারী পারাপারের অগ্রাধিকার পদ্ধতি সর্ম্পকে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, রাস্তায় সমতল পারাপারের সুবিধার্থে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেসব স্থানে সমতল পারাপার সম্ভব নয় যেমন রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম, চার লেনের অধিক চওরা রাস্তা যেখানে যানবাহনের চাপ বেশি, মোটরওয়ে/এক্সপ্রেসওয়ে ক্রসিং, বিআরটি স্টেশন, এমআরটি স্টেশন, ট্রানজিট স্টেশন সেসব স্থানে গ্রেড পৃথক সুবিধা যেমন আন্ডারপাস বা ফুট ওভারব্রিজের ক্ষেত্রে যথাযথ র‌্যাম্প কিংবা লিফ্ট বা চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকতে হবে; যাতে সব ফুটপাত ব্যবহারকারী বিশেষত অক্ষম অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচলের সুগম্যতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।

পুরাতন শহরের সরু রাস্তায় ‘শেয়ার্ড’ (যৌথ) ব্যবহার

প্রবিধানমালার ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘শহরের যে সকল জায়গায় বিশেষ করিয়া পুরাতন শহর এলাকার রাস্তাগুলি সংকীর্ণ বা সরু হওয়ায় যেখানে পৃথকভাবে ফুটপাত নির্মাণ করা হয় নাই বা বাস্তবসম্মত কারণে উহা নির্মাণ করা সম্ভবও নহে সেই সকল এলাকার রাস্তায় একইসঙ্গে যানবাহন এবং পথচারী চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হইবে। রাস্তায় চলাচল এবং পারপারের ক্ষেত্রে পথচারী সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাইবে।’ পুরাতন শহর এলাকার রাস্তায় যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ১০ কিলোমিটার।

পথচারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

পথচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্ম্পকে প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, পথচারীরা ফুটপাতবিহীন সড়কের ডানপাশ দিয়ে অর্থাৎ যানবাহন যে মুখী হয়ে ‘আগমন’ করছে তার বিপরীতমুখী হয়ে চলাচল করবে। পথচারীদের রোড সাইন, সিগন্যাল, মার্কিংসহ সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হবে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে, পথচারীদের পারাপারের জন্য নির্ধারিত, সহজে দৃষ্টিগ্রাহ্য ও আলোকিত স্থানে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে পারাপারের অনুকূল অবস্থা বিবেচনায় স্বাভাবিক গতিতে রাস্তা পার হতে হবে। তবে কোন পথচারীই রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন, ইয়ারফোন, হেডফোনসহ যানবাহনের শব্দ শোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বা মনোযোগ বিঘœকারী কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না।

ফুটপাতের মাপ নির্ধারণ

খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, তিন ধরনের ফুটপাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ ফ্রন্টেজ জোন, পথচারী জোন ও ফার্নিচার জোন। এর মধ্যে ফ্রন্টেজ জোন বলতে ‘ভবন সম্মুখ জোন বা বিল্ডিং ফ্রন্টেজ জোন’কে বুঝানো হয়েছে। পথচারী জোন অর্থ ‘পায়ে হাঁটিয়া, বা দৌড়াইয়া, চলাচল করে এইরূপ কোন ব্যক্তি কিংবা শারীরিক অক্ষমতার কারণে স্বচালিত বা সহযোগী ব্যক্তি কর্তৃক হুইলচেয়ার পরিচালনা করে কিংবা পুশ স্ট্রলার/ট্রলিসহ রাস্তা পার হয় এইরূপ ব্যক্তিও পথচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হইবে।’ ‘রোড ফার্নিচার জোন’ অর্থ ‘রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাতের যে অংশে সাইনপোস্ট, ট্রাফিকপোস্ট, লাইটপোস্ট, পার্কিং মিটার এবং বৃক্ষরোপণের জন্য ব্যবহৃত হইয়া থাকে সেই অংশ’কে বুঝানো হবে।

এর মধ্যে আবাসিক এলাকার ফুটপাতের ‘ফ্রন্টেজ জোন প্রস্ত অন্যূন শূন্য দশমিক পাঁচ মিটার, পথচারী জোনের প্রস্ত এক দশমিক আট মিটার ও ফার্নিচার জোনের প্রস্ত এক দশমিক শূন্য মিটার; অর্থাৎ মোট প্রস্ত তিন দশমিক তিন মিটার হবে। প্রতি ঘণ্টায় এই প্রস্তের জোন দিয়ে এক হাজার পথচারী চলাচল করতে পারবে।

বাণিজ্যিক এলাকায় ফ্রন্টেজ জোনের প্রস্ত এক দশমিক শূন্য মিটার, পথচারী জোনের প্রস্ত দুই দশমিক পাঁচ মিটার ও ফার্নিচার জোনের প্রস্ত এক দশমিক পাঁচ মিটার; অর্থাৎ মোট প্রস্ত পাঁচ দশমিক শূন্য মিটার। এই ধরনের ফুটপাত দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় আড়াই হাজার মানুষ চলাচল করতে পারবে।

ব্যস্ত ও বড় পরিসরের বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাতের ফ্রন্টেজ জোনের প্রস্ত এক দশমিক শূন্য মিটার, পথচারী জোনের প্রস্ত চার দশমিক শূন্য মিটার এবং ফার্নিচার জোনের প্রস্ত এক দশমিক পাঁচ মিটার; অর্থাৎ মোট প্রস্ত হবে ছয় দশমিক পাঁচ মিটার। এই ধরনের ফুটপাত দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ হাজার পথচারী চলাচল করতে পারবে। তবে সব ধরনের ফুটপাতের উচ্চতা হবে অনূর্ধ্ব ১৫ মিটার।

পুলিশ এবং বুয়েটের ডেটাবেজের বরাত দিয়ে গত বছর ডিটিসিএ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর দেশে প্রায় দুই হাজার ৫০০টির মতো সড়ক দুঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে সাতটি দুর্ঘটনায় আটজনের প্রাণহানি হয়। আর দেশে সংঘটিত মোট সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ২০ ভাগই ঢাকা মহানগরীতে হয়, যার বেশিরভাগই পথচারী সংশ্লিষ্ট।

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২ , ১৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে প্রণয়ন হচ্ছে ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা’

রাকিব উদ্দিন

রাজধানীর সড়কে পথচারী দুর্ঘটনা কমাতে ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। মোটরযানের কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার উত্তরাধীকারীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায়। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের আলোকে এই প্রবিধানমালা প্রণয়ন হচ্ছে। খসড়া প্রবিধানমালায় ফুটপাত নির্মাণ, ফুটপাত নির্ধারণ, পথচারী নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা, পথচারী পারাপার, সড়কের যৌথ ব্যবহার, রাস্তাপারের অগ্রাধিকার, রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ, পথচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা, ২০২১’ এর ওপর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের কাছে ডিটিসিএ-এর পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৬ জুন এক আদেশে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামত চেয়েছে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষ।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালার ১২ নম্বর ‘দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালার আওতাধীন কোন মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোন ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীগণ বা উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৫৩ এর অধীনে গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসা খরচ প্রাপ্য হইবেন।’

প্রতিষ্ঠানে অধিক জনসমাবেশ ঘটলে নিজস্ব ট্রাফিক পরিকল্পনা

প্রবিধানমালার ১১ নম্বর ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস কারখানা, হাসপাতাল, ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পথচারী পারাপারের ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক ধারায় বলা হয়েছে, ‘গার্মেন্টস কারখানাসহ যে সকল প্রতিষ্ঠানে অধিক জনসমাবেশ ঘটে তাহাদিগকে নিজস্ব ট্রাফিক পরিকল্পনা তৈরি করিতে হইবে এবং রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে প্রয়োজনে ট্রাফিক ওয়ার্ডেন নিয়োগ করিতে হইবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের রাস্তায় ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ও শেষ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তা পারাপার নিরাপদ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ট্রাফিক ওয়ার্ডেনের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে প্রবিধানমালায়।

হাসপাতাল সর্ম্পকে ১১ নম্বর ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সন্নিহিত সড়কে হুইলচেয়ার, স্ট্রেচারসহ অন্যান্য চাকাযুক্ত বাহন চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাতের সঙ্গে র‌্যাম্প নির্মাণ করিতে হইবে।’

পথচারী পারাপার

খসড়া প্রবিধানমালার ৫ নম্বর ধারায় পথচারীদের ‘যত্রতত্র রাস্তা পারাপার নিয়ন্ত্রণ’ বা বন্ধ করার লক্ষ্যে সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে সড়ক বিভাজক বা ফেন্সিং এবং সড়কের ‘ফুটপাত সন্নিহিত’ দুইপাশে রেলিং বা প্রতিবন্ধক স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ম্যানহোল, ডাস্টবিন, ইউটিলিটি ইত্যাদি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে পথচারীর নিরবচ্ছিন্ন চলাচলে কোন বাধার সৃষ্টি না হয়। ম্যানহোল সর্বদা ঢাকনাসহ থাকবে ও ফুটপাত এবং এ সংলগ্ন স্থানে কোন ক্রমেই নির্মাণসামগ্রী, মালামাল ও আবর্জনা রাখা যাবে না।পথচারী পারাপারের অগ্রাধিকার পদ্ধতি সর্ম্পকে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, রাস্তায় সমতল পারাপারের সুবিধার্থে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেসব স্থানে সমতল পারাপার সম্ভব নয় যেমন রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম, চার লেনের অধিক চওরা রাস্তা যেখানে যানবাহনের চাপ বেশি, মোটরওয়ে/এক্সপ্রেসওয়ে ক্রসিং, বিআরটি স্টেশন, এমআরটি স্টেশন, ট্রানজিট স্টেশন সেসব স্থানে গ্রেড পৃথক সুবিধা যেমন আন্ডারপাস বা ফুট ওভারব্রিজের ক্ষেত্রে যথাযথ র‌্যাম্প কিংবা লিফ্ট বা চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকতে হবে; যাতে সব ফুটপাত ব্যবহারকারী বিশেষত অক্ষম অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচলের সুগম্যতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।

পুরাতন শহরের সরু রাস্তায় ‘শেয়ার্ড’ (যৌথ) ব্যবহার

প্রবিধানমালার ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘শহরের যে সকল জায়গায় বিশেষ করিয়া পুরাতন শহর এলাকার রাস্তাগুলি সংকীর্ণ বা সরু হওয়ায় যেখানে পৃথকভাবে ফুটপাত নির্মাণ করা হয় নাই বা বাস্তবসম্মত কারণে উহা নির্মাণ করা সম্ভবও নহে সেই সকল এলাকার রাস্তায় একইসঙ্গে যানবাহন এবং পথচারী চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হইবে। রাস্তায় চলাচল এবং পারপারের ক্ষেত্রে পথচারী সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাইবে।’ পুরাতন শহর এলাকার রাস্তায় যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ১০ কিলোমিটার।

পথচারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

পথচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্ম্পকে প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, পথচারীরা ফুটপাতবিহীন সড়কের ডানপাশ দিয়ে অর্থাৎ যানবাহন যে মুখী হয়ে ‘আগমন’ করছে তার বিপরীতমুখী হয়ে চলাচল করবে। পথচারীদের রোড সাইন, সিগন্যাল, মার্কিংসহ সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হবে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে, পথচারীদের পারাপারের জন্য নির্ধারিত, সহজে দৃষ্টিগ্রাহ্য ও আলোকিত স্থানে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে পারাপারের অনুকূল অবস্থা বিবেচনায় স্বাভাবিক গতিতে রাস্তা পার হতে হবে। তবে কোন পথচারীই রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন, ইয়ারফোন, হেডফোনসহ যানবাহনের শব্দ শোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বা মনোযোগ বিঘœকারী কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না।

ফুটপাতের মাপ নির্ধারণ

খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, তিন ধরনের ফুটপাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ ফ্রন্টেজ জোন, পথচারী জোন ও ফার্নিচার জোন। এর মধ্যে ফ্রন্টেজ জোন বলতে ‘ভবন সম্মুখ জোন বা বিল্ডিং ফ্রন্টেজ জোন’কে বুঝানো হয়েছে। পথচারী জোন অর্থ ‘পায়ে হাঁটিয়া, বা দৌড়াইয়া, চলাচল করে এইরূপ কোন ব্যক্তি কিংবা শারীরিক অক্ষমতার কারণে স্বচালিত বা সহযোগী ব্যক্তি কর্তৃক হুইলচেয়ার পরিচালনা করে কিংবা পুশ স্ট্রলার/ট্রলিসহ রাস্তা পার হয় এইরূপ ব্যক্তিও পথচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হইবে।’ ‘রোড ফার্নিচার জোন’ অর্থ ‘রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাতের যে অংশে সাইনপোস্ট, ট্রাফিকপোস্ট, লাইটপোস্ট, পার্কিং মিটার এবং বৃক্ষরোপণের জন্য ব্যবহৃত হইয়া থাকে সেই অংশ’কে বুঝানো হবে।

এর মধ্যে আবাসিক এলাকার ফুটপাতের ‘ফ্রন্টেজ জোন প্রস্ত অন্যূন শূন্য দশমিক পাঁচ মিটার, পথচারী জোনের প্রস্ত এক দশমিক আট মিটার ও ফার্নিচার জোনের প্রস্ত এক দশমিক শূন্য মিটার; অর্থাৎ মোট প্রস্ত তিন দশমিক তিন মিটার হবে। প্রতি ঘণ্টায় এই প্রস্তের জোন দিয়ে এক হাজার পথচারী চলাচল করতে পারবে।

বাণিজ্যিক এলাকায় ফ্রন্টেজ জোনের প্রস্ত এক দশমিক শূন্য মিটার, পথচারী জোনের প্রস্ত দুই দশমিক পাঁচ মিটার ও ফার্নিচার জোনের প্রস্ত এক দশমিক পাঁচ মিটার; অর্থাৎ মোট প্রস্ত পাঁচ দশমিক শূন্য মিটার। এই ধরনের ফুটপাত দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় আড়াই হাজার মানুষ চলাচল করতে পারবে।

ব্যস্ত ও বড় পরিসরের বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাতের ফ্রন্টেজ জোনের প্রস্ত এক দশমিক শূন্য মিটার, পথচারী জোনের প্রস্ত চার দশমিক শূন্য মিটার এবং ফার্নিচার জোনের প্রস্ত এক দশমিক পাঁচ মিটার; অর্থাৎ মোট প্রস্ত হবে ছয় দশমিক পাঁচ মিটার। এই ধরনের ফুটপাত দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ হাজার পথচারী চলাচল করতে পারবে। তবে সব ধরনের ফুটপাতের উচ্চতা হবে অনূর্ধ্ব ১৫ মিটার।

পুলিশ এবং বুয়েটের ডেটাবেজের বরাত দিয়ে গত বছর ডিটিসিএ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর দেশে প্রায় দুই হাজার ৫০০টির মতো সড়ক দুঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে সাতটি দুর্ঘটনায় আটজনের প্রাণহানি হয়। আর দেশে সংঘটিত মোট সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ২০ ভাগই ঢাকা মহানগরীতে হয়, যার বেশিরভাগই পথচারী সংশ্লিষ্ট।