বন্যায় সুনামগঞ্জে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি

সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব আসন্ন কোরবানির ঈদে পড়ার সম্ভবাবনা রয়েছে। মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আনুমানিক ২০ কোটি টাকার খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গো-খাদ্যও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বন্যায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ সুনামগঞ্জের প্রাথমিকভাবে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮ টি। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৯৯টি, ভেড়া ৫১৪টি। হাঁস ৯৭৮৩১টি, মুরগি ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫টি। সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলায় আনুমানিক ২০ কোটি টাকার খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রচুর গো-খাদ্য বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আসাদুজ্জামান জানান, তার অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৯০০ মেট্রিক টন গো-খাদ্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। প্রতি টন ৫২ হাজার টাকা হলে মোট ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা হবে। এখনও সরকারের পক্ষ থেকে গো-খাদ্য বরাদ্দ পাননি বলও জানান।

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার ফলে অনেক খামারির গরু ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলোর খাদ্যের সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ এখনও গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত। এছাড়া জমানো খড় ও পানিতে ভেসে গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পাঠানবাড়ি গ্রামে অ্যাডভোকেট আমিনুর রশিদ রনক একটি গরুর খামার করেছিলেন। ১৮টি অস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়ান জাতের গরু দীর্ঘদিন ধরেই লালন পালন করছেন। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য হাটে তুলবেন। কিন্তু সর্বনাশা বানের পানিতে তার বড় ৯টি গরুই মারা গেছে। যার মূল্য আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া এক লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং অবকাঠামোগত অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, আমার সর্বস্ব বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা পোষানো খুবই কঠিন। সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের পলাশ নতুনপাড়ার বাসিন্দা মুক্তার মিয়ার ৩টি অস্ট্রেলিয়ান গাভী ও বাছুর এবং গো-খাদ্য বানের জলে ভেসে গেছে। দক্ষিণ বাদাঘাট ললিয়ার পার গ্রামের সোলেমান মিয়ার ৫টি গরু ও গো-খাদ্য ভেসে গেছে। মুক্তার মিয়া ও সোলেমান মিয়া এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব আসন্ন কোরবানির পশুর হাটে পড়বে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে গবাদিপশুর মোট সংখ্যা ৫৭ হাজার ৩৬৭টি। মোট খামারির সংখ্যা ৩৩১৬ জন। কোরবানির যোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড় ৩০৪৫৯টি, বলদ ৭৭৯৯টি, গাভী ৭১৫৬টি। মহিষ ১২৯৪টি, ছাগল ৫৩৩৬টি, ভেড়া ৪৩৩১টি।

কোরবানির পশুর হাটে এবার সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগের মতে সংকট সৃষ্টি হবে না। কারণ সুনামগঞ্জ জেলার বাইরে থেকেও পশুর আগমন ঘটবে।

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২ , ১৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

বন্যায় সুনামগঞ্জে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব আসন্ন কোরবানির ঈদে পড়ার সম্ভবাবনা রয়েছে। মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আনুমানিক ২০ কোটি টাকার খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গো-খাদ্যও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বন্যায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ সুনামগঞ্জের প্রাথমিকভাবে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮ টি। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৯৯টি, ভেড়া ৫১৪টি। হাঁস ৯৭৮৩১টি, মুরগি ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫টি। সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলায় আনুমানিক ২০ কোটি টাকার খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রচুর গো-খাদ্য বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আসাদুজ্জামান জানান, তার অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৯০০ মেট্রিক টন গো-খাদ্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। প্রতি টন ৫২ হাজার টাকা হলে মোট ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা হবে। এখনও সরকারের পক্ষ থেকে গো-খাদ্য বরাদ্দ পাননি বলও জানান।

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার ফলে অনেক খামারির গরু ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলোর খাদ্যের সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ এখনও গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত। এছাড়া জমানো খড় ও পানিতে ভেসে গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পাঠানবাড়ি গ্রামে অ্যাডভোকেট আমিনুর রশিদ রনক একটি গরুর খামার করেছিলেন। ১৮টি অস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়ান জাতের গরু দীর্ঘদিন ধরেই লালন পালন করছেন। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য হাটে তুলবেন। কিন্তু সর্বনাশা বানের পানিতে তার বড় ৯টি গরুই মারা গেছে। যার মূল্য আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া এক লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং অবকাঠামোগত অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, আমার সর্বস্ব বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা পোষানো খুবই কঠিন। সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের পলাশ নতুনপাড়ার বাসিন্দা মুক্তার মিয়ার ৩টি অস্ট্রেলিয়ান গাভী ও বাছুর এবং গো-খাদ্য বানের জলে ভেসে গেছে। দক্ষিণ বাদাঘাট ললিয়ার পার গ্রামের সোলেমান মিয়ার ৫টি গরু ও গো-খাদ্য ভেসে গেছে। মুক্তার মিয়া ও সোলেমান মিয়া এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব আসন্ন কোরবানির পশুর হাটে পড়বে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে গবাদিপশুর মোট সংখ্যা ৫৭ হাজার ৩৬৭টি। মোট খামারির সংখ্যা ৩৩১৬ জন। কোরবানির যোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড় ৩০৪৫৯টি, বলদ ৭৭৯৯টি, গাভী ৭১৫৬টি। মহিষ ১২৯৪টি, ছাগল ৫৩৩৬টি, ভেড়া ৪৩৩১টি।

কোরবানির পশুর হাটে এবার সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগের মতে সংকট সৃষ্টি হবে না। কারণ সুনামগঞ্জ জেলার বাইরে থেকেও পশুর আগমন ঘটবে।