বন্যার কারণে নিত্যপণ্য ও সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী বিপাকে সাধারণ মানুষ

বন্যার অজুহাতে বাজারে সবজির দাম আবার বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে বাজারে সবজির আমদানি কম, খরচ বেশি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আরও দাম বাড়তে পারে। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, মিথ্যা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।

গতকাল সরেজমিন শ্যামলী কাঁচাবাজার ও মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লাল গোল বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, ছয় থেকে সাতশ’ গ্রামের ফুলকপি প্রতি পিস ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, কাকরোল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পটোল মানভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গাজর দেশি ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কুমড়া পিস ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা শ্যামলীর একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করা বাবুর্চি নূরন্নবী মিয়া বলেন, প্রতিদিন সবজির দাম বাড়ছে, আজ দেখি আকাশছোঁয়া। অল্প প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছি, আবার আগামীকাল কিনব। এত দাপাদাপি করে লাভ কী, পকেটে টাকা নেই। তাই চলে আসলাম।

সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর শ্যামলী কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রাফি বলেন, ‘বন্যার কারণে প্রতিদিনই সবজির দাম বাড়ছে। বাজারে এখন আগের তুলনায় সবজির সরবরাহ, আমদানি খরচও বেশি। যেকোন সবজির দাম বেশি। এদিকে আবার বেড়েছে দেশি রসুনের দাম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হতো ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আর চায়না রসুন প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হতো। শুকনো মরিচ (কারেন্ট) কেজিপ্রতি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা আর দেশি শুকনো মরিচ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কম ছিল। আদাও প্রতি কেজি ২০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলার বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, জিরা কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা, গোল মরিচ কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা, সাদা এলাচ কেজিপ্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা, কালো এলাচ কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা, লং কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা, দারুচিনি কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা, খোলা হলুদ কেজিপ্রতি ২৮০ টাকা, কেজিপ্রতি ধনিয়া ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মোটা চালসহ বেশকিছু চালের দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪-৫ টাকা, চাল প্রতি কেজি গড়ে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫-৪৬ টাকা, আটাশ প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, নাজির প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, কাটারী নাজির প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, মিনিকেট প্রতি কেজি মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, চিনিগুড়া প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের দাম কমার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের ফেনী রাইস স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘ভারত থেকে চাল আসার কথা তাই দাম কমেছে, চাল আমদানি হলে আরও কমবে। আর আমদানি না হলে ঈদের পর বর্তমান বাজারের চেয়ে দাম বাড়বে। চালের দাম কমেছে গড়ে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা।’

বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৫০ টাকা, দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২৭৫ টাকা। দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৫০০ খেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত আছে। গরু ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টাউন হল বাজারের মুরগি বিক্রেতা রাজন বলেন, এখন বাজারে মুরগির দাম কম, আগামী সপ্তাহে দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা বলেন, এখন বাজারে যেকোন পণ্য ক্রয় সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলানো যাচ্ছে না। হয় কোন পণ্য কেনা বাদ দিতে হবে, নয়তো খুব অল্প পরিমাণে কিনতে হবে। আর অল্প পরিমাণে কিনলে পরের দিন আবারো বাজারে আসতে হবে। সবকিছুর দাম বেড়েছে, কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি।

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২ , ১৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

বন্যার কারণে নিত্যপণ্য ও সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী বিপাকে সাধারণ মানুষ

আমিরুল মোমিনিন সাগর

image

বন্যার অজুহাতে বাজারে সবজির দাম আবার বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে বাজারে সবজির আমদানি কম, খরচ বেশি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আরও দাম বাড়তে পারে। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, মিথ্যা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।

গতকাল সরেজমিন শ্যামলী কাঁচাবাজার ও মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লাল গোল বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, ছয় থেকে সাতশ’ গ্রামের ফুলকপি প্রতি পিস ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, কাকরোল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পটোল মানভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গাজর দেশি ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কুমড়া পিস ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা শ্যামলীর একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করা বাবুর্চি নূরন্নবী মিয়া বলেন, প্রতিদিন সবজির দাম বাড়ছে, আজ দেখি আকাশছোঁয়া। অল্প প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছি, আবার আগামীকাল কিনব। এত দাপাদাপি করে লাভ কী, পকেটে টাকা নেই। তাই চলে আসলাম।

সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর শ্যামলী কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রাফি বলেন, ‘বন্যার কারণে প্রতিদিনই সবজির দাম বাড়ছে। বাজারে এখন আগের তুলনায় সবজির সরবরাহ, আমদানি খরচও বেশি। যেকোন সবজির দাম বেশি। এদিকে আবার বেড়েছে দেশি রসুনের দাম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হতো ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আর চায়না রসুন প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হতো। শুকনো মরিচ (কারেন্ট) কেজিপ্রতি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা আর দেশি শুকনো মরিচ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কম ছিল। আদাও প্রতি কেজি ২০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলার বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, জিরা কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা, গোল মরিচ কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা, সাদা এলাচ কেজিপ্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা, কালো এলাচ কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা, লং কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা, দারুচিনি কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা, খোলা হলুদ কেজিপ্রতি ২৮০ টাকা, কেজিপ্রতি ধনিয়া ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মোটা চালসহ বেশকিছু চালের দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪-৫ টাকা, চাল প্রতি কেজি গড়ে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫-৪৬ টাকা, আটাশ প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, নাজির প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, কাটারী নাজির প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, মিনিকেট প্রতি কেজি মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, চিনিগুড়া প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের দাম কমার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের ফেনী রাইস স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘ভারত থেকে চাল আসার কথা তাই দাম কমেছে, চাল আমদানি হলে আরও কমবে। আর আমদানি না হলে ঈদের পর বর্তমান বাজারের চেয়ে দাম বাড়বে। চালের দাম কমেছে গড়ে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা।’

বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৫০ টাকা, দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২৭৫ টাকা। দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৫০০ খেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত আছে। গরু ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টাউন হল বাজারের মুরগি বিক্রেতা রাজন বলেন, এখন বাজারে মুরগির দাম কম, আগামী সপ্তাহে দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা বলেন, এখন বাজারে যেকোন পণ্য ক্রয় সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলানো যাচ্ছে না। হয় কোন পণ্য কেনা বাদ দিতে হবে, নয়তো খুব অল্প পরিমাণে কিনতে হবে। আর অল্প পরিমাণে কিনলে পরের দিন আবারো বাজারে আসতে হবে। সবকিছুর দাম বেড়েছে, কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি।