চাল আমদানির অনুমতি পাচ্ছে ৯৫ প্রতিষ্ঠান

প্রথম দফায় বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য অনুমতি পাচ্ছে ৯৫ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আমদানির অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ৩০ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন এবং আতপ চাল ৩০ হাজার টন। চালে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙ্গা দানা থাকতে পারবে।

চাল আমদানি শর্তে বলা হয়েছে, আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য (বিল অব এন্ট্রিসহ) খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাতকরণ করতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানাতে হবে।

বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু বা জারি করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে ফের প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা বস্তায় চাল বিক্রি করতে হবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

অনেকদিন ধরেই অস্থিতিশীল চালের বাজার। ভরা বোরো মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে চাল আমদানিতে মোট করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশে নামলো।

এছাড়া সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরু চালের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৯ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে এক বছর আগে এই সময়ে দেশে সরু চাল বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায়। এখন তা ৬৪ থেকে ৮০ টাকা। এক বছর আগে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, যেটি এখন হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা। এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৪৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।

চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারও অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চালকল ও বাজারে সরকার অভিযানও চালাচ্ছে। বৈধ মাত্রার চেয়ে বেশি মজুদ করায় মামলাও হয়েছে স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযানের সুফল বাজারে কমই মিলছে। চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দামে এই লাফ বছরের বাকি সময়ের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। তার ওপর দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, উত্তরে কুড়িগ্রাম অঞ্চলেও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। এতে আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে শুল্ক।

নতুন শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ শুল্ক ছাড়ের অনুমোদন পেতে আমদানিকারককে অবশ্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি নেয়ার শর্তজুড়ে দিয়েছে এনবিআর। কমানো শুল্ক হারে চাল আমদানির জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবে।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

চাল আমদানির অনুমতি পাচ্ছে ৯৫ প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

প্রথম দফায় বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য অনুমতি পাচ্ছে ৯৫ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আমদানির অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ৩০ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন এবং আতপ চাল ৩০ হাজার টন। চালে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙ্গা দানা থাকতে পারবে।

চাল আমদানি শর্তে বলা হয়েছে, আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য (বিল অব এন্ট্রিসহ) খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাতকরণ করতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানাতে হবে।

বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু বা জারি করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে ফের প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা বস্তায় চাল বিক্রি করতে হবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

অনেকদিন ধরেই অস্থিতিশীল চালের বাজার। ভরা বোরো মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে চাল আমদানিতে মোট করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশে নামলো।

এছাড়া সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরু চালের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৯ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে এক বছর আগে এই সময়ে দেশে সরু চাল বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায়। এখন তা ৬৪ থেকে ৮০ টাকা। এক বছর আগে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, যেটি এখন হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা। এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৪৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।

চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারও অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চালকল ও বাজারে সরকার অভিযানও চালাচ্ছে। বৈধ মাত্রার চেয়ে বেশি মজুদ করায় মামলাও হয়েছে স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযানের সুফল বাজারে কমই মিলছে। চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দামে এই লাফ বছরের বাকি সময়ের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। তার ওপর দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, উত্তরে কুড়িগ্রাম অঞ্চলেও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। এতে আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে শুল্ক।

নতুন শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ শুল্ক ছাড়ের অনুমোদন পেতে আমদানিকারককে অবশ্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি নেয়ার শর্তজুড়ে দিয়েছে এনবিআর। কমানো শুল্ক হারে চাল আমদানির জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবে।