চান্দিনায় এক মাসে ২১ ডাকাতি রাত জেগে পাহারা গ্রামবাসীর

কুমিল্লার চান্দিনায় ডাকাতদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনগণ। সড়ক, মহাসড়ক ও বাড়িতে ডাকাতি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কার্যত কোন ভূমিকা না থাকায় আতঙ্কে রাত্রি যাপন করছে এ উপজেলার মানুষ। গত এক মাসে চান্দিনায় অন্তত ১৪টি গৃহ ডাকাতি, ৩টি সড়ক ডাকাতি ও ৭টি মহাসড়ক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতি রোধে বিভিন্ন এলাকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে জনগণ।

উপজেলার গোবিন্দপুর, হারং, কুটুম্বপুর, মীরগঞ্জ, এতবারপুর, মাইজখার, কামারখোলা ও হাড়িপাড়া গ্রামে গত এক মাসে ১৪টি পরিবারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও হারং উদালিয়া ব্রীজ এলাকায় ৩টি সড়ক ডাকাতি ও মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা, তীরচর ও কুটুম্বপুর এলাকায় রড ছুড়ে ৭টি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মহাসড়কের কয়েকটি ঘটনা ভূক্তভোগীরা পুলিশকে অবহিত করলেও বাকিরা অসহায় হয়ে স্থান ত্যাগ করে। পুলিশ হাতে গোনা কয়েকজন নামে-বেনামে ডাকাতকে আটক করলেও তালিকাভূক্ত শীর্ষ কোন ডাকাত চক্রকে এখনও আটক করতে সক্ষম হয়নি। এমনকি ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া কোন মালামালও উদ্ধার করতে পারেনি চান্দিনা থানা পুলিশ। তবে ডাকাতির ঘটনায় চান্দিনা থানার এক উপ-পরিদর্শককে থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনে সংযোগ করা হয়েছে। এসব ডাকাতির ঘটনায় ভূক্তভোগীদের মামলা না করে নিরব থাকার পরামর্শ দেয় চান্দিনা থানা পুলিশ। গত বুধবার রাতে উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের হাড়িপাড়া ও কামারখোলা গ্রামের ৬টি পরিবারে ঘরে ডাকাতি করে সশস্ত্র ডাকাতদল।

এসময় নগদ টাকাসহ অন্তত ২০ লাখ টাকার মামামাল লুট ও পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুটে নেয় ডাকাতদল। হাড়িপাড়া গ্রামের শাহ আলম জানান, আমি দুবাই প্রবাসী। ছুটিতে বাড়ি আসি। বুধবার রাত ২টায় ডাকাতদল আমার বাড়ির গেইটের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোন, আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। কামারখোলা গ্রামের পূর্বপাড়া আব্দুল মান্নান ভূইয়া’র বাড়িতে ৪টি পরিবারে ডাকাতির ঘটনায় নগদ ৩ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণাংকার, ৬টি মোবাইল ফোন, বিমান টিকেট যুক্ত ২টি পাসপোর্ট সহ মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়।

কামারখোলা গ্রামের ইমাম হোসেন জানান, আমার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার পর চান্দিনা থানা পুলিশ এসে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমাকে মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মামলা করলে ডাকাতদল গা ঢাকা দিবে, আমরা তাদেরকে ধরতে পারবো না। তার চেয়ে ভাল আপনারা নিরব থাকেন তাহলে আমরা সুন্দরভাবে কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারবো এবং আসামী ধরা সহজ হবে।

এছাড়া গত মঙ্গলবার (২১ জুন) দিবাগত রাত ১ টার দিকে ১০-১২ জনের সশস্ত্র মুখোশধারী ডাকাত হারং এলাকার নূরুজ্জামান সরকারের বাড়ির কলাপসিবল গেটের তালা কেটে ঘরে ঢুকে তাকে ও তার স্ত্রীকে গলায় রামদা ঠেকিয়ে হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে ঘরের ভেতরে থাকা আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এরপর তাদের ভাড়াটিয়া লাভলী আক্তার এর ঘরে একই কায়দায় প্রবেশ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। একই রাতে উপজেলার এতবারপুর গ্রামে মো. খোকন এর বাড়ীতে ডাকাতি হয়। রাত পৌনে ২টায় ঘরের দরজা ভেঙে মুখোশধারী দুইজন ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ফেনী সদর উপজেলার বিল্লাল হোসেন জানান, আমি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার যোগে বাড়ি ফিরছিলাম। রাত অনুমান সোয়া ১টায় কুটুম্বপুর এলাকায় আমার বাড়িতে বিকট শব্দ হওয়ায় চালক গাড়ি থামায়। আমার গাড়ি থামাতেই ৬-৭ জন অস্ত্রধারী ডাকাত গাড়িতে এলোপাথারী আঘাত করতে শুরু করে। এসময় আমার সঙ্গে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমার হাতের মোবাইলটি নিচে ফেলে দেওয়ার কারণে সেটি নিতে পারেনি এবং গাড়ি চালকের মোবাইলটি ছোট টাইপ মোবাইল হওয়ায় সেটিও নেয়নি।

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, এসব ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। কয়েকজন আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

চান্দিনায় এক মাসে ২১ ডাকাতি রাত জেগে পাহারা গ্রামবাসীর

প্রতিনিধি, চান্দিনা (কুমিল্লা)

কুমিল্লার চান্দিনায় ডাকাতদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনগণ। সড়ক, মহাসড়ক ও বাড়িতে ডাকাতি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কার্যত কোন ভূমিকা না থাকায় আতঙ্কে রাত্রি যাপন করছে এ উপজেলার মানুষ। গত এক মাসে চান্দিনায় অন্তত ১৪টি গৃহ ডাকাতি, ৩টি সড়ক ডাকাতি ও ৭টি মহাসড়ক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতি রোধে বিভিন্ন এলাকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে জনগণ।

উপজেলার গোবিন্দপুর, হারং, কুটুম্বপুর, মীরগঞ্জ, এতবারপুর, মাইজখার, কামারখোলা ও হাড়িপাড়া গ্রামে গত এক মাসে ১৪টি পরিবারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও হারং উদালিয়া ব্রীজ এলাকায় ৩টি সড়ক ডাকাতি ও মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা, তীরচর ও কুটুম্বপুর এলাকায় রড ছুড়ে ৭টি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মহাসড়কের কয়েকটি ঘটনা ভূক্তভোগীরা পুলিশকে অবহিত করলেও বাকিরা অসহায় হয়ে স্থান ত্যাগ করে। পুলিশ হাতে গোনা কয়েকজন নামে-বেনামে ডাকাতকে আটক করলেও তালিকাভূক্ত শীর্ষ কোন ডাকাত চক্রকে এখনও আটক করতে সক্ষম হয়নি। এমনকি ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া কোন মালামালও উদ্ধার করতে পারেনি চান্দিনা থানা পুলিশ। তবে ডাকাতির ঘটনায় চান্দিনা থানার এক উপ-পরিদর্শককে থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনে সংযোগ করা হয়েছে। এসব ডাকাতির ঘটনায় ভূক্তভোগীদের মামলা না করে নিরব থাকার পরামর্শ দেয় চান্দিনা থানা পুলিশ। গত বুধবার রাতে উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের হাড়িপাড়া ও কামারখোলা গ্রামের ৬টি পরিবারে ঘরে ডাকাতি করে সশস্ত্র ডাকাতদল।

এসময় নগদ টাকাসহ অন্তত ২০ লাখ টাকার মামামাল লুট ও পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুটে নেয় ডাকাতদল। হাড়িপাড়া গ্রামের শাহ আলম জানান, আমি দুবাই প্রবাসী। ছুটিতে বাড়ি আসি। বুধবার রাত ২টায় ডাকাতদল আমার বাড়ির গেইটের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোন, আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। কামারখোলা গ্রামের পূর্বপাড়া আব্দুল মান্নান ভূইয়া’র বাড়িতে ৪টি পরিবারে ডাকাতির ঘটনায় নগদ ৩ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণাংকার, ৬টি মোবাইল ফোন, বিমান টিকেট যুক্ত ২টি পাসপোর্ট সহ মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়।

কামারখোলা গ্রামের ইমাম হোসেন জানান, আমার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার পর চান্দিনা থানা পুলিশ এসে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমাকে মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মামলা করলে ডাকাতদল গা ঢাকা দিবে, আমরা তাদেরকে ধরতে পারবো না। তার চেয়ে ভাল আপনারা নিরব থাকেন তাহলে আমরা সুন্দরভাবে কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারবো এবং আসামী ধরা সহজ হবে।

এছাড়া গত মঙ্গলবার (২১ জুন) দিবাগত রাত ১ টার দিকে ১০-১২ জনের সশস্ত্র মুখোশধারী ডাকাত হারং এলাকার নূরুজ্জামান সরকারের বাড়ির কলাপসিবল গেটের তালা কেটে ঘরে ঢুকে তাকে ও তার স্ত্রীকে গলায় রামদা ঠেকিয়ে হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে ঘরের ভেতরে থাকা আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এরপর তাদের ভাড়াটিয়া লাভলী আক্তার এর ঘরে একই কায়দায় প্রবেশ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। একই রাতে উপজেলার এতবারপুর গ্রামে মো. খোকন এর বাড়ীতে ডাকাতি হয়। রাত পৌনে ২টায় ঘরের দরজা ভেঙে মুখোশধারী দুইজন ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ফেনী সদর উপজেলার বিল্লাল হোসেন জানান, আমি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার যোগে বাড়ি ফিরছিলাম। রাত অনুমান সোয়া ১টায় কুটুম্বপুর এলাকায় আমার বাড়িতে বিকট শব্দ হওয়ায় চালক গাড়ি থামায়। আমার গাড়ি থামাতেই ৬-৭ জন অস্ত্রধারী ডাকাত গাড়িতে এলোপাথারী আঘাত করতে শুরু করে। এসময় আমার সঙ্গে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমার হাতের মোবাইলটি নিচে ফেলে দেওয়ার কারণে সেটি নিতে পারেনি এবং গাড়ি চালকের মোবাইলটি ছোট টাইপ মোবাইল হওয়ায় সেটিও নেয়নি।

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, এসব ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। কয়েকজন আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।