এডিশ মশার কামড়ে দুই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

এডিশ মশার কামড়ে দুই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে একটি ডেঙ্গুজ্বর ও অন্যটি চিকুনগুনিয়া। এই ভাইরাস রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে এখনই মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এ বছর ডেঙ্গুজ্বরের অবস্থার অবনতির আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার অবস্থান জানার জন্য চলতি মাসে কোরবানির ঈদের পর (২০ জুলাই) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে জরিপ শুরু হবে। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে জরিপ চালানো হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৪৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৭ জন ও ঢাকার বাইরে দুইজন ভর্তি হয়েছে।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৫১ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪৫ জন ভর্তি আছেন। অন্যান্য বিভাগে আছে ৬ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছে ১১৬০ জন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়েছে এক হাজার ৮ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে একজন।

হাসপাতালের প্রাপ্ত তথ্য মতে, আক্রান্তদের মধ্যে ৭ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একজন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ৩ জন, বারডেম হাসপাতালে ২ জন ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তরা সবাইর ডেঙ্গু ফিবার। এছাড়া অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালে অনেকেই ভর্তি আছে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসা-বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ডাক্তারের চেম্বারে যোগাযোগ করছেন।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির মুভমেন্টের (এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা জেলায় যাওয়া) কারণে ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার কামরে কেউ অসুস্থ হয়ে ঢাকা থেকে জেলা বা গ্রামে সেখানে তাকে মশা কামড় দিলে এবং ওই মশা আবার অন্য সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দিলে তারও ডেঙ্গুজ্বর হবে। আর চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস থাকলে তারও চিকুনগুনিয়া হবে। এটাই স্বাভাবিক। এভাবে সারাদেশে ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে।

এর আগে যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক শনাক্ত হয়েছে। এ বছর এখনই ব্যবস্থা না নিলে অবস্থার অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকে ডেঙ্গু কর্র্নার চালু আছে। ডেঙ্গু রোগী বাড়লে আবার ডেঙ্গু কর্নারের সেবা জোরদার করা হবে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। বাসা-বাড়ির ভিতরের ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজের নিচে যাতে পানি জমে না থাকে তার লক্ষ্য রাখতে হবে।

অব্যবহৃত বাথরুমের কোমোডের মধ্যে মশার বংশবিস্তার ঘটতে পারে। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা বৃষ্টির পাানিতে মশার বিস্তার ঘটে। তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, ইদানীং মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে মশার উপদ্রব বাড়লেও মশা দমনে কার্যক্রম আরও জোরদার করা দরকার বলে এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

এখন দেশে নতুন করে ডেঙ্গুজ্বর ও করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। এখন জ্বর হলে কার ডেঙ্গু আর কার করোনাভাইরাস তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা দরকার। রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা করানো দরকার।

এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাসাবো, মুগদা, যাত্রাবাড়,ি পল্টন, খিলগাঁও, ধানমন্ডির অভিজাত এলাকা, মিরপুরের পল্লবী, পুরান ঢাকা, বিমানবন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মশার উপস্থিতি রয়েছে। এডিশ মশা ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ছে। মশা থেকে বাঁচতে নগরবাসী অ্যারোসলসহ অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করলেও মশা দমন করা যাচ্ছে না। বাসা-বাড়ির ভেতর মশার উপদ্রব রয়েছে। সিটি করপোরেশনের মশানিধন কর্তৃপক্ষের লোকজন মাঝে মধ্যে মশার ওষুধ দিলেও আবার একদিন পরে মশার উপস্থিতি দেখা দেয়। আর আক্রান্ত ব্যক্তিরা সতর্ক না থাকায় রোগ ছড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বন্যা ও পরিবহনসহ নানা কারণে মশার বিস্তার ঘটছে।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

এডিশ মশার কামড়ে দুই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

বাকী বিল্লাহ

এডিশ মশার কামড়ে দুই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে একটি ডেঙ্গুজ্বর ও অন্যটি চিকুনগুনিয়া। এই ভাইরাস রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে এখনই মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এ বছর ডেঙ্গুজ্বরের অবস্থার অবনতির আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার অবস্থান জানার জন্য চলতি মাসে কোরবানির ঈদের পর (২০ জুলাই) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে জরিপ শুরু হবে। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে জরিপ চালানো হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৪৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৭ জন ও ঢাকার বাইরে দুইজন ভর্তি হয়েছে।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৫১ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪৫ জন ভর্তি আছেন। অন্যান্য বিভাগে আছে ৬ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছে ১১৬০ জন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়েছে এক হাজার ৮ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে একজন।

হাসপাতালের প্রাপ্ত তথ্য মতে, আক্রান্তদের মধ্যে ৭ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একজন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ৩ জন, বারডেম হাসপাতালে ২ জন ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তরা সবাইর ডেঙ্গু ফিবার। এছাড়া অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালে অনেকেই ভর্তি আছে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসা-বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ডাক্তারের চেম্বারে যোগাযোগ করছেন।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির মুভমেন্টের (এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা জেলায় যাওয়া) কারণে ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার কামরে কেউ অসুস্থ হয়ে ঢাকা থেকে জেলা বা গ্রামে সেখানে তাকে মশা কামড় দিলে এবং ওই মশা আবার অন্য সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দিলে তারও ডেঙ্গুজ্বর হবে। আর চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস থাকলে তারও চিকুনগুনিয়া হবে। এটাই স্বাভাবিক। এভাবে সারাদেশে ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে।

এর আগে যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক শনাক্ত হয়েছে। এ বছর এখনই ব্যবস্থা না নিলে অবস্থার অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকে ডেঙ্গু কর্র্নার চালু আছে। ডেঙ্গু রোগী বাড়লে আবার ডেঙ্গু কর্নারের সেবা জোরদার করা হবে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। বাসা-বাড়ির ভিতরের ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজের নিচে যাতে পানি জমে না থাকে তার লক্ষ্য রাখতে হবে।

অব্যবহৃত বাথরুমের কোমোডের মধ্যে মশার বংশবিস্তার ঘটতে পারে। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা বৃষ্টির পাানিতে মশার বিস্তার ঘটে। তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, ইদানীং মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে মশার উপদ্রব বাড়লেও মশা দমনে কার্যক্রম আরও জোরদার করা দরকার বলে এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

এখন দেশে নতুন করে ডেঙ্গুজ্বর ও করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। এখন জ্বর হলে কার ডেঙ্গু আর কার করোনাভাইরাস তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা দরকার। রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা করানো দরকার।

এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাসাবো, মুগদা, যাত্রাবাড়,ি পল্টন, খিলগাঁও, ধানমন্ডির অভিজাত এলাকা, মিরপুরের পল্লবী, পুরান ঢাকা, বিমানবন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মশার উপস্থিতি রয়েছে। এডিশ মশা ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ছে। মশা থেকে বাঁচতে নগরবাসী অ্যারোসলসহ অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করলেও মশা দমন করা যাচ্ছে না। বাসা-বাড়ির ভেতর মশার উপদ্রব রয়েছে। সিটি করপোরেশনের মশানিধন কর্তৃপক্ষের লোকজন মাঝে মধ্যে মশার ওষুধ দিলেও আবার একদিন পরে মশার উপস্থিতি দেখা দেয়। আর আক্রান্ত ব্যক্তিরা সতর্ক না থাকায় রোগ ছড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বন্যা ও পরিবহনসহ নানা কারণে মশার বিস্তার ঘটছে।