স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সুপেয় পানি সংকটে সিলেটবাসী

জলমগ্ন এলাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ, পানি কমলেও ভেসে উঠছে আবর্জনা

বন্যায় সিলেটে সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ। বিভাগের মধ্যে সিলেট নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগের ওপর এলাকা প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে বন্যার পানি কমলেও ভেসে উঠছে ময়লা আবর্জনা, ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভোগেন। প্রায় ১৭ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন হয়ে আছে। গত ১৫ জুন থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারী বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।

যে কারণে খাবার পানির সংকট

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায়। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ২০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সরকারি নলকূপের হিসাবের বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বসানো অন্তত ৫০ হাজার নলকূপ শুধু সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শেখ সাদী রহমত উল্লাহ বলেন, বিভাগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া ৪৯ হাজার ১১০টি নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার পরিমাণ ৮০ ভাগ হবে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২০ হাজার ২৩৪টি, সুনামগঞ্জে ২৭ হাজার, হবিগঞ্জে এক হাজার ৫৯১টি এবং মৌলভীবাজারে ২৮৫টি। এর বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ৫ গুণ নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের অন্তত ৫০ হাজার বন্যায় প্লাবিত হতে পারে, ধারণা করছেন তিনি। তিনি বলেন, বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার, সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ, হবিগঞ্জে এক লাখ এক হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৮৫ হাজার। এর বাইরেও ১৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫টি করে। একটি নগরীতে দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি মজুদ রাখতে ১২ হাজার ১৫১টি জারিকেন বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭১টি, সুনামগঞ্জে ৫ হাজার, হবিগঞ্জে ১১২ ও মৌলভীবাজারে ৮০টি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

রোদ উঠেছে, কমছে পানি

টানা চারদিন বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। গতকাল সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি সিলেটে। দুপুর পর্যন্ত রোদ্র উজ্জ্বল দিন। বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে নদনদীর পানিও। গতকাল সিলেটের সবগুলো নদীরই পানি কমেছে। পানি কমছে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকেও। তবে এখনও নগরের বাইরের বেশিরভাগ এলাকাই জলমগ্ন হয়ে আছে। প্রায় ১৭ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। জমে আছে ময়লা আবর্জনা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটির, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে লোভা, সারি এবং ধলাই নদীর পানিও।

অনেকদিন পর রোদ উঠায় বাসা পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল আলী। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে প্রায় ৮ দিন পানি ছিল। ছয়দিন আগে পানি নামলেও বৃষ্টির কারণে ধোয়ামোছা করতে পারিনি। পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, পানি নামার পর এখন ঘরের ভেতরসহ আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সুপেয় পানি সংকটে সিলেটবাসী

জলমগ্ন এলাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ, পানি কমলেও ভেসে উঠছে আবর্জনা

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট

image

সিলেট এখনও বহু এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে -সংবাদ

বন্যায় সিলেটে সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ। বিভাগের মধ্যে সিলেট নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগের ওপর এলাকা প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে বন্যার পানি কমলেও ভেসে উঠছে ময়লা আবর্জনা, ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভোগেন। প্রায় ১৭ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন হয়ে আছে। গত ১৫ জুন থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারী বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।

যে কারণে খাবার পানির সংকট

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায়। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ২০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সরকারি নলকূপের হিসাবের বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বসানো অন্তত ৫০ হাজার নলকূপ শুধু সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শেখ সাদী রহমত উল্লাহ বলেন, বিভাগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া ৪৯ হাজার ১১০টি নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার পরিমাণ ৮০ ভাগ হবে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২০ হাজার ২৩৪টি, সুনামগঞ্জে ২৭ হাজার, হবিগঞ্জে এক হাজার ৫৯১টি এবং মৌলভীবাজারে ২৮৫টি। এর বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ৫ গুণ নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের অন্তত ৫০ হাজার বন্যায় প্লাবিত হতে পারে, ধারণা করছেন তিনি। তিনি বলেন, বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার, সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ, হবিগঞ্জে এক লাখ এক হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৮৫ হাজার। এর বাইরেও ১৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫টি করে। একটি নগরীতে দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি মজুদ রাখতে ১২ হাজার ১৫১টি জারিকেন বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭১টি, সুনামগঞ্জে ৫ হাজার, হবিগঞ্জে ১১২ ও মৌলভীবাজারে ৮০টি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

রোদ উঠেছে, কমছে পানি

টানা চারদিন বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। গতকাল সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি সিলেটে। দুপুর পর্যন্ত রোদ্র উজ্জ্বল দিন। বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে নদনদীর পানিও। গতকাল সিলেটের সবগুলো নদীরই পানি কমেছে। পানি কমছে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকেও। তবে এখনও নগরের বাইরের বেশিরভাগ এলাকাই জলমগ্ন হয়ে আছে। প্রায় ১৭ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। জমে আছে ময়লা আবর্জনা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটির, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে লোভা, সারি এবং ধলাই নদীর পানিও।

অনেকদিন পর রোদ উঠায় বাসা পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল আলী। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে প্রায় ৮ দিন পানি ছিল। ছয়দিন আগে পানি নামলেও বৃষ্টির কারণে ধোয়ামোছা করতে পারিনি। পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, পানি নামার পর এখন ঘরের ভেতরসহ আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না।