নড়াইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন বন্ধে নির্দেশনা

শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নড়াইলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে ব্যবহার করায় উদ্বেগ জানিয়ে তা বন্ধে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান গত ২৮ জুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা জারি করেন। এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধে ঈদুল আজহার ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও গত শুক্রবার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করা হয় যে, হঠাৎ করেই নড়াইলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এমন নয়।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক আদেশে শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আদেশটি একই বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকাশ করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করছেন বা শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। এতে শ্রেণীকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শ্রেুণীর কার্যক্রমে মনোযোগী হতে পারছে না। এটা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।’ শ্রেণীকক্ষে কার্যকরী পাঠদান ও শিখন-শেখানো কার্যক্রম ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও গতিশীল করতে’ মোবাইল ফোনে এই নিষেধাজ্ঞা বলে জানানো হয়।

যদিও এই আদেশের বাস্তবতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে উদ্বেগ জানিয়ে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নড়াইলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধে গত ২৮ জুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে, বিভিন্ন গণমাধ্যম এই নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইল আনছে এবং ভালো-মন্দ, কোন কিছু বিবেচনা না করে বিভিন্ন ধরনের বির্তকিত পোস্টে লাইক এবং শেয়ার দিয়ে বিব্রতকর ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

এই নির্দেশনা জারির পর বিভিন্ন পেশার মানুষসহ অভিভাবকেরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধের আদেশ কতটা কার্যকর হবে, তা দেখার বিষয়। কারণ, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওই আদেশ (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ) কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।

নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসারের ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি নড়াইলের ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী এবং মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী ফেইসবুকে উত্তেজনাকর পোস্ট দিয়েছে। ফলে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধে ৪টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ আদেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেলা ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরিদর্শনকালে কোন শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৪টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- (১) মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন আনতে পারবে না। (২) মোবাইল না আনার নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ চেক করা যেতে পারে। (৩) কোন শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৪) মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ঈদের ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় ভারতের বিতর্কিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেইসবুকে পোস্ট দেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ অভিযুক্ত ছাত্রকে জুতার মালা পরানো হয়।

এছাড়া সম্প্রতি মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শিক্ষা অফিসসহ এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

নড়াইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন বন্ধে নির্দেশনা

প্রতিনিধি, নড়াইল

শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নড়াইলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে ব্যবহার করায় উদ্বেগ জানিয়ে তা বন্ধে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান গত ২৮ জুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা জারি করেন। এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধে ঈদুল আজহার ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও গত শুক্রবার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করা হয় যে, হঠাৎ করেই নড়াইলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এমন নয়।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক আদেশে শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আদেশটি একই বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকাশ করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করছেন বা শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। এতে শ্রেণীকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শ্রেুণীর কার্যক্রমে মনোযোগী হতে পারছে না। এটা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।’ শ্রেণীকক্ষে কার্যকরী পাঠদান ও শিখন-শেখানো কার্যক্রম ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও গতিশীল করতে’ মোবাইল ফোনে এই নিষেধাজ্ঞা বলে জানানো হয়।

যদিও এই আদেশের বাস্তবতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে উদ্বেগ জানিয়ে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নড়াইলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধে গত ২৮ জুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে, বিভিন্ন গণমাধ্যম এই নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইল আনছে এবং ভালো-মন্দ, কোন কিছু বিবেচনা না করে বিভিন্ন ধরনের বির্তকিত পোস্টে লাইক এবং শেয়ার দিয়ে বিব্রতকর ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

এই নির্দেশনা জারির পর বিভিন্ন পেশার মানুষসহ অভিভাবকেরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধের আদেশ কতটা কার্যকর হবে, তা দেখার বিষয়। কারণ, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওই আদেশ (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ) কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।

নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসারের ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি নড়াইলের ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী এবং মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী ফেইসবুকে উত্তেজনাকর পোস্ট দিয়েছে। ফলে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধে ৪টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ আদেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেলা ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরিদর্শনকালে কোন শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৪টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- (১) মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন আনতে পারবে না। (২) মোবাইল না আনার নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ চেক করা যেতে পারে। (৩) কোন শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৪) মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ঈদের ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় ভারতের বিতর্কিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেইসবুকে পোস্ট দেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ অভিযুক্ত ছাত্রকে জুতার মালা পরানো হয়।

এছাড়া সম্প্রতি মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শিক্ষা অফিসসহ এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।