ওষুধের কাঁচামালের নামে আফিম আমদানি, গ্রেপ্তার ২

ওষুধের কাঁচামালের নাম দিয়ে আমদানি করা ৩ কেজি আফিম জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আফিম আমদানির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মো. আবুল মোতালেব এবং জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া নামের দু’জনকে। চালানটি ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গ্রেপ্তার ২ জন একটি চক্রের সদস্য। এ চক্রে আরও একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসি ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়. ওষুদের কাঁচামালের আড়ালে একটি মাদকের চালান আসবে ঢাকায় এমন তথ্য ছিল ডিএনসির কাছে। খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। ডিএনসির ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীর মাদকের ক্রেতা সেজে বিভিন্ন জায়গায় আফিম আমদানিকারীদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে। একটি চক্র আফিম বিক্রি করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীরের টিম রাজধানীর পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন লেন (ভিআইপি রোড) থেকে দুই কেজি আফিমসহ মো. আবুল মোতালেব (৪৬) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া (৪৪) নামে আরেকজনকে এক কেজি আফিমসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তার মোতালেব নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় জড়িত। তবে এর আড়ালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়ার বাড়ি জামালপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এর আড়ালে তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা এক প্রশ্নের জবাবে জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, একটি শপিং ব্যাগের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের বয়ামের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো ছিল দুই কেজি আফিম। অন্য এক কেজি আফিম পলিথিনে মোড়ানো ছিল। আফিম একটি ‘ক’ শ্রেণীর মাদক। উদ্ধার করা তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে ৩ কোটি টাকা।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ চালান বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের হাব হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ। এ আফিমের চালান ঢাকায় আনা হয় ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিরা জব্দ করা আফিম ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দুইভাবে হয়ে থাকে। এক, আফিম সরাসরি সেবন এবং এ আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে পরবর্তীতে হেরোইন, ইয়াবা এবং ফেনসিডিলের মতো ভয়ঙ্কর ড্রাগ তৈরি হয়। অভিযান পরিচালনাকারী ডিএনসির সহকারী পরিচালক মেহেদী হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। কারণ আফিম ওষুদের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এ জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে আফিম আমদানি করতে হয়। কিন্তু এ চালানটি অবৈধভাবে আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত চক্রের বাইরে আরও দু’জনের নাম পাওয়া গেছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে আফিমের উৎস এবং গন্তব্য কোথায় ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যাবে।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

ওষুধের কাঁচামালের নামে আফিম আমদানি, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ওষুধের কাঁচামালের নাম দিয়ে আমদানি করা ৩ কেজি আফিম জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আফিম আমদানির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মো. আবুল মোতালেব এবং জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া নামের দু’জনকে। চালানটি ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গ্রেপ্তার ২ জন একটি চক্রের সদস্য। এ চক্রে আরও একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসি ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়. ওষুদের কাঁচামালের আড়ালে একটি মাদকের চালান আসবে ঢাকায় এমন তথ্য ছিল ডিএনসির কাছে। খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। ডিএনসির ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীর মাদকের ক্রেতা সেজে বিভিন্ন জায়গায় আফিম আমদানিকারীদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে। একটি চক্র আফিম বিক্রি করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীরের টিম রাজধানীর পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন লেন (ভিআইপি রোড) থেকে দুই কেজি আফিমসহ মো. আবুল মোতালেব (৪৬) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া (৪৪) নামে আরেকজনকে এক কেজি আফিমসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তার মোতালেব নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় জড়িত। তবে এর আড়ালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়ার বাড়ি জামালপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এর আড়ালে তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা এক প্রশ্নের জবাবে জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, একটি শপিং ব্যাগের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের বয়ামের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো ছিল দুই কেজি আফিম। অন্য এক কেজি আফিম পলিথিনে মোড়ানো ছিল। আফিম একটি ‘ক’ শ্রেণীর মাদক। উদ্ধার করা তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে ৩ কোটি টাকা।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ চালান বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের হাব হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ। এ আফিমের চালান ঢাকায় আনা হয় ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিরা জব্দ করা আফিম ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দুইভাবে হয়ে থাকে। এক, আফিম সরাসরি সেবন এবং এ আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে পরবর্তীতে হেরোইন, ইয়াবা এবং ফেনসিডিলের মতো ভয়ঙ্কর ড্রাগ তৈরি হয়। অভিযান পরিচালনাকারী ডিএনসির সহকারী পরিচালক মেহেদী হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। কারণ আফিম ওষুদের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এ জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে আফিম আমদানি করতে হয়। কিন্তু এ চালানটি অবৈধভাবে আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত চক্রের বাইরে আরও দু’জনের নাম পাওয়া গেছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে আফিমের উৎস এবং গন্তব্য কোথায় ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যাবে।