জালিয়াত চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

অভিযুক্তরা জামায়াতের সক্রিয় সদস্য

সরকারি খাস জমি জালিয়াতকারী চক্রের মূল হোতাকে সাঁথিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

জালিয়াতি ও তঞ্চকতাপূর্ণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৩০ জুন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মনিরুজ্জামানের নির্দেশে গৌরিগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেছেন। মামলার মোট আসামি ৬ জন। ১. মো. আবুল বাশার (৫২) পিতা- আবদুল জব্বার প্রাং, গ্রাম-ঘুঘুদহ, সাঁথিয়া; ২. মো. আলাউদ্দিন (৫৬) প্রাং, পিতা- নূর আলী, গ্রাম-বিলমহিষারচর; ৩. মো. গোলাম মোস্তফা (৬৫), পিতা- আবদুল হাকিম, গ্রাম-সোনাতলা; ৪. মো. বকুল হোসেন, পিতা- মোজাহার হোসেন মোজাই, গ্রাম - পিপুলিয়া, সাঁথিয়া; ৫. মো. আবদুল লতিফ (৬০), পিতা- আহের আলী, গ্রাম- ইকরজানা, সাঁথিয়া; ৬. আমিরুল ইসলাম বাবু (৪০) পিতা- জানু সরদার, গ্রাম- ঘুঘুদহ, বর্তমান ঠিকানা কৃষ্ণপুর, পাবনা সদর।

উল্লেখ্য, অভিযুক্তরা সবাই জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। ৪নং আসামি সাঁথিয়া পৌর এলাকার পিপুলিয়া মহল্লার বাসিন্দা মো. বকুল হোসেন জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ‘টর্নেডো বাহিনী’র প্রধান। সে একাধিক মামলার আসামি।

সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম মৌজার ‘খ’ তফশিলভুক্ত প্রায় সাড়ে ৫২ বিঘা জমি উল্লিখিত ভূমিদস্যুরা জাল দলিল ও ভুয়া মিস কেসের রায় জালিয়াতি করে নামজারিপূর্বক আত্মসাৎ ও দখলের অপচেষ্টা করলে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামলা করার জন্য সহকারী ভূমি অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলা রুজুর দিনই এই অপকর্মের অন্যতম কুশীলব ঘুঘুদহ গ্রামের আবদুল জব্বার প্রাং-এর ছেলে মো. আবুল বাসারকে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে।

উক্ত জমির মূল মালিক ছিলেন রাজেন্দ্র চৌধুরী (বাবা-মাধব চৌধুরী)। যিনি ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগেই ভারতে চলে যান। তার পরিত্যক্ত জমি ডিএস রেকর্ডের সময় খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ১৭ দশমিক ৩৬ একর জমি সাঁথিয়া ভূমি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ২০২১-২২ সালে ৭টি হিসাব (২৮৫৩/২১-২২), (৫৭৩৪/২১-২১), (৫৭৩৩/২১-২২), (৫৭৩৫/২১-২২), (৫৭৩৬/২১-২২), (৫৭৩৭/২১-২২) এবং (৬২০৬/২১-২২) নামজারি বা খারিজ করে নেয় নিজেদের নামে।

ধারণা করা হচ্ছে মোটা টাকা উৎকোচের বিনিময়ে এই সরকারি খাস জমি হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয় সাঁথিয়া ভূমি অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর জন্য বহুলাংশে দায়ী উক্ত সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তিনিই উক্ত নামজারি আদেশ অনুমোদন করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাঁথিয়া ভূমি অফিসে গত প্রায় আড়াই বছরে এভাবে জাল দলিল ও ভুয়া নামজারি করে বহু সরকারি সম্পত্তি (‘ক’ এবং ‘খ’ তফশিলভুক্ত) বেদখল করেছে ভূমিদস্যু চক্র। যখন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর পদ শূন্য ছিল তখনই ওই অফিসের কয়েকজন অসৎ কর্মচারী এই জালিয়াতিতে সহায়তা করেছে। উল্লেখ্য, বিগত উল্লিখিত সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ ছিলেন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে।

ইতোমধ্যেই গোপালপুর মৌজার ১৮ বিঘা ‘খ’ তফশিলের জমি মো. মনসুর আলম গং (পিতা- রিয়াজ উদ্দিন, গোপালপুর, সাঁথিয়া) জাল দলিল ও আদালতের রায় জাল করে নামজারি করে নেয়। ওই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে পাবনা আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত জালিয়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

পুলিশ আবুল বাসারকে গ্রেপ্তারের পর অন্য আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছে। সাঁথিয়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২ , ১৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

সাঁথিয়ায় সাড়ে ৫২ বিঘা খাস জমি আত্মসাৎ চেষ্টা

জালিয়াত চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

অভিযুক্তরা জামায়াতের সক্রিয় সদস্য

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

সরকারি খাস জমি জালিয়াতকারী চক্রের মূল হোতাকে সাঁথিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

জালিয়াতি ও তঞ্চকতাপূর্ণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৩০ জুন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মনিরুজ্জামানের নির্দেশে গৌরিগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেছেন। মামলার মোট আসামি ৬ জন। ১. মো. আবুল বাশার (৫২) পিতা- আবদুল জব্বার প্রাং, গ্রাম-ঘুঘুদহ, সাঁথিয়া; ২. মো. আলাউদ্দিন (৫৬) প্রাং, পিতা- নূর আলী, গ্রাম-বিলমহিষারচর; ৩. মো. গোলাম মোস্তফা (৬৫), পিতা- আবদুল হাকিম, গ্রাম-সোনাতলা; ৪. মো. বকুল হোসেন, পিতা- মোজাহার হোসেন মোজাই, গ্রাম - পিপুলিয়া, সাঁথিয়া; ৫. মো. আবদুল লতিফ (৬০), পিতা- আহের আলী, গ্রাম- ইকরজানা, সাঁথিয়া; ৬. আমিরুল ইসলাম বাবু (৪০) পিতা- জানু সরদার, গ্রাম- ঘুঘুদহ, বর্তমান ঠিকানা কৃষ্ণপুর, পাবনা সদর।

উল্লেখ্য, অভিযুক্তরা সবাই জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। ৪নং আসামি সাঁথিয়া পৌর এলাকার পিপুলিয়া মহল্লার বাসিন্দা মো. বকুল হোসেন জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ‘টর্নেডো বাহিনী’র প্রধান। সে একাধিক মামলার আসামি।

সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম মৌজার ‘খ’ তফশিলভুক্ত প্রায় সাড়ে ৫২ বিঘা জমি উল্লিখিত ভূমিদস্যুরা জাল দলিল ও ভুয়া মিস কেসের রায় জালিয়াতি করে নামজারিপূর্বক আত্মসাৎ ও দখলের অপচেষ্টা করলে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামলা করার জন্য সহকারী ভূমি অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলা রুজুর দিনই এই অপকর্মের অন্যতম কুশীলব ঘুঘুদহ গ্রামের আবদুল জব্বার প্রাং-এর ছেলে মো. আবুল বাসারকে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে।

উক্ত জমির মূল মালিক ছিলেন রাজেন্দ্র চৌধুরী (বাবা-মাধব চৌধুরী)। যিনি ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগেই ভারতে চলে যান। তার পরিত্যক্ত জমি ডিএস রেকর্ডের সময় খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ১৭ দশমিক ৩৬ একর জমি সাঁথিয়া ভূমি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ২০২১-২২ সালে ৭টি হিসাব (২৮৫৩/২১-২২), (৫৭৩৪/২১-২১), (৫৭৩৩/২১-২২), (৫৭৩৫/২১-২২), (৫৭৩৬/২১-২২), (৫৭৩৭/২১-২২) এবং (৬২০৬/২১-২২) নামজারি বা খারিজ করে নেয় নিজেদের নামে।

ধারণা করা হচ্ছে মোটা টাকা উৎকোচের বিনিময়ে এই সরকারি খাস জমি হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয় সাঁথিয়া ভূমি অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর জন্য বহুলাংশে দায়ী উক্ত সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তিনিই উক্ত নামজারি আদেশ অনুমোদন করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাঁথিয়া ভূমি অফিসে গত প্রায় আড়াই বছরে এভাবে জাল দলিল ও ভুয়া নামজারি করে বহু সরকারি সম্পত্তি (‘ক’ এবং ‘খ’ তফশিলভুক্ত) বেদখল করেছে ভূমিদস্যু চক্র। যখন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর পদ শূন্য ছিল তখনই ওই অফিসের কয়েকজন অসৎ কর্মচারী এই জালিয়াতিতে সহায়তা করেছে। উল্লেখ্য, বিগত উল্লিখিত সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ ছিলেন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে।

ইতোমধ্যেই গোপালপুর মৌজার ১৮ বিঘা ‘খ’ তফশিলের জমি মো. মনসুর আলম গং (পিতা- রিয়াজ উদ্দিন, গোপালপুর, সাঁথিয়া) জাল দলিল ও আদালতের রায় জাল করে নামজারি করে নেয়। ওই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে পাবনা আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত জালিয়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

পুলিশ আবুল বাসারকে গ্রেপ্তারের পর অন্য আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছে। সাঁথিয়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।