রপ্তানি আয়ে নতুন মাইলফলক

রপ্তানি আয়ে নতুন মাইলফলক ছাড়ালো বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই মাইলফলক অর্জন হলো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গতবছর আমাদের রপ্তানি আয় অনেক ভালো হয়েছে। তাই আমরা মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। তবে বর্তমানে ক্রয়াদেশ যেভাবে কমছে তাতে আগামী বছরটা কেমন যাবে সেটি নিয়ে সন্দিহান।

গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশে থেকে ৫২.০৮ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ আর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘এই সময়ে অবশ্যই বাংলাদেশ ভালো করেছে। বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। এতে রপ্তানি আয়ে মাইলফলক ছুঁতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানিতে ভালো করার আরেকটা কারণ আছে। সেটি হলোÑ চীনের জিরো কোভিড নীতি। এর ফলে, চীন ও মায়ানমার থেকে অনেক কারখানা অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিয়েছে। এর সুবিধা আমরাও পেয়েছি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালোই করেছে।’

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৩৮ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভিত্তি করে পরের বছরের জন্য চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। রপ্তানি আয়ে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস সেক্টর ২০২২ অর্থবছরে ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ খাতে আয় বেড়েছে ৩৫.৪৭ শতাংশ যা ২০২১ অর্থবছরেও ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলার ছিল।

ইপিবির পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার মার্কিন ডলার। মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাক পণ্য থেকে এসেছে। এ পণ্যটির রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০২০-২১ এর তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আগের অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

তবে আলোচ্য সময়ে রপ্তানিতে মাইলফল সৃষ্টি করলেও চলতি অর্থবছর হয়তো আশঙ্কা রয়েছে। জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কিছু কারখানায় ক্রয়াদেশ কমে গেছে। অনেক কারখানা ক্রয়াদেশ কমার কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অর্থাৎ ক্রয়াদেশ কমার একটা আশঙ্কা রয়েছে। যদি কমে যায় তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমবে।’

বিশ্বের অর্থনীতির গতি কমে আসছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা ও ইউরোপ। বর্তমানে ইউরোপের অর্থনীতি নিম্মমুখী। আর আমেরিকার অবস্থাও ভালো না। সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ভালো হবে না। তাই গত অর্থবছরের মাইলফলক অর্জন চলতি অর্থবছর কতটা ধরে রাখা যায় সেটি নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।’

এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রচলিত বাজারে যেমন রপ্তানি বাড়ছে তেমনি নতুন বাজারেও বাড়ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সব সময়ই বেশি হয়। অন্যদিকে ভারতে রপ্তানি তুলনামুলক কম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই দুই দেশেই রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১০০ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি বেড়েছে দেড় গুণের মতো।

অন্যদিকে ভারতেও পণ্য রপ্তানিতে নতুন আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি দেড় বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১৫৩ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার (১.৫৩ বিলিয়ন বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন) চেয়েও ২০ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ের চেয়ে বেশি ৫৯ শতাংশ।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেই নয়, রাশিয়া, জাপান, চিলিসহ সব অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। রাশিয়ায় সরাসরি কোন পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তৃতীয় কোন দেশের মাধ্যমে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। তারপরও রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। এসব কারণে দেশের রপ্তানি আয় মাইলফলক স্পর্শ করল।

গত কয়েকটি অর্থবছরের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর আরও বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে এরপরের বছর করোনার কারণে রপ্তানিতে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এই ২০১৯-২০ অর্থবছর রপ্তানি কমে হয়েছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

এর পরের বছর করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে ও টিকা কার্যক্রম বাড়লে রপ্তানি আয় ফের বাড়তে শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ বিলিয়ন ডলারে।

রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে সম্প্রতি ২০২১-২৪ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সেই নীতিমালায় ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের নীতিমালায় সেটি ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি লক্ষ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বেশকিছু নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় অগ্রাধিকারমূলক খাতে সম্ভাবনাময় কিছু পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কৌশল গ্রহণ করে রপ্তানি বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মকৌশল নিয়েও বিস্তারিত পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২ , ২০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

রপ্তানি আয়ে নতুন মাইলফলক

রেজাউল করিম

রপ্তানি আয়ে নতুন মাইলফলক ছাড়ালো বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই মাইলফলক অর্জন হলো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গতবছর আমাদের রপ্তানি আয় অনেক ভালো হয়েছে। তাই আমরা মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। তবে বর্তমানে ক্রয়াদেশ যেভাবে কমছে তাতে আগামী বছরটা কেমন যাবে সেটি নিয়ে সন্দিহান।

গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশে থেকে ৫২.০৮ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ আর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘এই সময়ে অবশ্যই বাংলাদেশ ভালো করেছে। বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। এতে রপ্তানি আয়ে মাইলফলক ছুঁতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানিতে ভালো করার আরেকটা কারণ আছে। সেটি হলোÑ চীনের জিরো কোভিড নীতি। এর ফলে, চীন ও মায়ানমার থেকে অনেক কারখানা অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিয়েছে। এর সুবিধা আমরাও পেয়েছি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালোই করেছে।’

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৩৮ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভিত্তি করে পরের বছরের জন্য চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। রপ্তানি আয়ে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস সেক্টর ২০২২ অর্থবছরে ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ খাতে আয় বেড়েছে ৩৫.৪৭ শতাংশ যা ২০২১ অর্থবছরেও ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলার ছিল।

ইপিবির পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার মার্কিন ডলার। মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাক পণ্য থেকে এসেছে। এ পণ্যটির রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০২০-২১ এর তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আগের অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

তবে আলোচ্য সময়ে রপ্তানিতে মাইলফল সৃষ্টি করলেও চলতি অর্থবছর হয়তো আশঙ্কা রয়েছে। জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কিছু কারখানায় ক্রয়াদেশ কমে গেছে। অনেক কারখানা ক্রয়াদেশ কমার কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অর্থাৎ ক্রয়াদেশ কমার একটা আশঙ্কা রয়েছে। যদি কমে যায় তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমবে।’

বিশ্বের অর্থনীতির গতি কমে আসছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা ও ইউরোপ। বর্তমানে ইউরোপের অর্থনীতি নিম্মমুখী। আর আমেরিকার অবস্থাও ভালো না। সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ভালো হবে না। তাই গত অর্থবছরের মাইলফলক অর্জন চলতি অর্থবছর কতটা ধরে রাখা যায় সেটি নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।’

এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রচলিত বাজারে যেমন রপ্তানি বাড়ছে তেমনি নতুন বাজারেও বাড়ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সব সময়ই বেশি হয়। অন্যদিকে ভারতে রপ্তানি তুলনামুলক কম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই দুই দেশেই রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১০০ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি বেড়েছে দেড় গুণের মতো।

অন্যদিকে ভারতেও পণ্য রপ্তানিতে নতুন আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি দেড় বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১৫৩ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার (১.৫৩ বিলিয়ন বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন) চেয়েও ২০ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ের চেয়ে বেশি ৫৯ শতাংশ।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেই নয়, রাশিয়া, জাপান, চিলিসহ সব অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। রাশিয়ায় সরাসরি কোন পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তৃতীয় কোন দেশের মাধ্যমে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। তারপরও রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। এসব কারণে দেশের রপ্তানি আয় মাইলফলক স্পর্শ করল।

গত কয়েকটি অর্থবছরের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর আরও বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে এরপরের বছর করোনার কারণে রপ্তানিতে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এই ২০১৯-২০ অর্থবছর রপ্তানি কমে হয়েছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

এর পরের বছর করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে ও টিকা কার্যক্রম বাড়লে রপ্তানি আয় ফের বাড়তে শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ বিলিয়ন ডলারে।

রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে সম্প্রতি ২০২১-২৪ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সেই নীতিমালায় ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের নীতিমালায় সেটি ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি লক্ষ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বেশকিছু নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় অগ্রাধিকারমূলক খাতে সম্ভাবনাময় কিছু পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কৌশল গ্রহণ করে রপ্তানি বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মকৌশল নিয়েও বিস্তারিত পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।