রূপগঞ্জে দুই স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে আহত, অভিযুক্ত শিক্ষক গণধর্ষণ মামলার আসামি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুই ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় অভিযুক্ত হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিন একটি গণধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি ২০১৭ সালে রূপগঞ্জ থানাতেই দায়ের করা হয়েছিল বলে জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) আবির হোসেন জানান।

পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ৩ ধারায় মামলাটি করা হয়েছিল। গণধর্ষণের অভিযোগে ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন জসিম উদ্দিন। তবে মামলাটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে নথিপত্র ঘাটতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। তবে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি কীভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা চালিয়ে যান তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আবির হোসেন।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদের মুঠোফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। কল ধরেননি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবিরও।

এদিকে ঘটনার পর শনিবার রাত থেকেই অভিযুক্ত হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনের নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা ছিল কি না জানি না। তবে একটি হত্যা মামলায় তিনি তিন বছর জেল খেটেছেন। জামিন পাওয়ার পর তিনি বেরিয়ে আসেন বলে শুনেছি।’

বিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীকে বেত দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহতের ঘটনায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গতকবাল সকালে এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা এলাকার হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে বেত দিয়ে পেটান বাংলা বিভাগের শিক্ষক জসিম উদ্দিন। বেতের পিটুনিতে গুরুতর আহত দুই ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে এই ঘটনায় থানায় স্বজনরা অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এই ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে আহত শিক্ষার্থীদের স্বজনরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেটি তদন্ত করছে পুলিশ। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে আহত দুই ছাত্রীর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে স্থানীয় ইউএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার দুপুরে অজ্ঞান অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা বিবেচনায় তাদের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। গতকাল সকালের দিকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কেবিনে দেয়া হয়েছে।

আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা বাগানবাড়ি এলাকার মৃত মোমেন ভূঁইয়ার মেয়ে তানজিলা আক্তার (১৪) ও একই উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা কর্ণগোপ এলাকার রাসেল মিয়ার মেয়ে সামিয়া সিমি নিশী (১৩)। তারা দু’জনই হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে শনিবার বরপা হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই আনন্দে ছাত্রীরা সবাই স্কুলের ভেতরে চুমকি মাখামাখি শুরু করে। এ সময় ওই দুই ছাত্রীকে ডেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যান শিক্ষক জসিম উদ্দিন। এরপর তাদের বাঁশের বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে দুই ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২ , ২০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

রূপগঞ্জে দুই স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে আহত, অভিযুক্ত শিক্ষক গণধর্ষণ মামলার আসামি

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুই ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় অভিযুক্ত হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিন একটি গণধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি ২০১৭ সালে রূপগঞ্জ থানাতেই দায়ের করা হয়েছিল বলে জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) আবির হোসেন জানান।

পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ৩ ধারায় মামলাটি করা হয়েছিল। গণধর্ষণের অভিযোগে ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন জসিম উদ্দিন। তবে মামলাটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে নথিপত্র ঘাটতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। তবে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি কীভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা চালিয়ে যান তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আবির হোসেন।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদের মুঠোফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। কল ধরেননি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবিরও।

এদিকে ঘটনার পর শনিবার রাত থেকেই অভিযুক্ত হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনের নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা ছিল কি না জানি না। তবে একটি হত্যা মামলায় তিনি তিন বছর জেল খেটেছেন। জামিন পাওয়ার পর তিনি বেরিয়ে আসেন বলে শুনেছি।’

বিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীকে বেত দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহতের ঘটনায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গতকবাল সকালে এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা এলাকার হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে বেত দিয়ে পেটান বাংলা বিভাগের শিক্ষক জসিম উদ্দিন। বেতের পিটুনিতে গুরুতর আহত দুই ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে এই ঘটনায় থানায় স্বজনরা অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এই ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে আহত শিক্ষার্থীদের স্বজনরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেটি তদন্ত করছে পুলিশ। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে আহত দুই ছাত্রীর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে স্থানীয় ইউএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার দুপুরে অজ্ঞান অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা বিবেচনায় তাদের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। গতকাল সকালের দিকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কেবিনে দেয়া হয়েছে।

আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা বাগানবাড়ি এলাকার মৃত মোমেন ভূঁইয়ার মেয়ে তানজিলা আক্তার (১৪) ও একই উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা কর্ণগোপ এলাকার রাসেল মিয়ার মেয়ে সামিয়া সিমি নিশী (১৩)। তারা দু’জনই হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে শনিবার বরপা হাজী নূর উদ্দিন আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই আনন্দে ছাত্রীরা সবাই স্কুলের ভেতরে চুমকি মাখামাখি শুরু করে। এ সময় ওই দুই ছাত্রীকে ডেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যান শিক্ষক জসিম উদ্দিন। এরপর তাদের বাঁশের বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে দুই ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।