ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ ৫৮টি উপজেলা। ২০ মিনিট পরপর লোডশেডিং শুরু হয় আবার কখনও ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থা চলছে রংপুর বিভাগে। কখন বিদ্যুৎ আসবে এটাই এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে রংপুর বিভাগের শত শত কল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিং অন্যদিকে প্রচ- দাবদাহ মানুষের জনজীবন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। সর্Ÿোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে রংপুর আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জাবেদ জানান প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দুপুর পর্যন্ত ১১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সাপ্লাই পাওয়ার কারণে তাদের ঘনঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা জানাতে পারেনি কোন কর্মকর্তাই।
রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নেসকোর একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে চাহিদা রয়েছে ৭০০ মেগাওয়াট, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং চলছে। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুৎ এসেছে যার স্থায়িত্ব ছিল ২০ থেকে ২৫ মিনিট। দুপুর ১টা থেকে এক বারের জন্য বিদ্যুৎ আসেনি বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছে। জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যুৎ বিভাগের অভিযোগ কেন্দ্রগুলোর টেলিফোন তুলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রংপুর জেলাসহ পুরো বিভাগে তিন দিন ধরে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বিভাগীয় নগরী রংপুরে আরও ভয়াবহ অবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কলকারখানাগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। প্রচ- গরমের কারণে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। নগরীর প্রেসক্লাব মার্কেটের ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ যায় কিন্তু কখন আসবে তা কেউ বলতে পারছে না। একদিকে প্রচ- গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের জনজীবন হাঁসফাঁস অবস্থা। একই কথা জানালেন জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন। তিনি জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং আর প্রচ- গরমের কারণে মার্কেটে বেচাকেনা একেবারে নেই। আর কয়েকদিন পর ঈদুল আজহা। এখন বেচা-কেনার ধুম পড়ার কথা, অথচ খদ্দের নেই।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে। সাবিহা সুলতানা নামে এক গৃহিনী অভিযোগ করেন, সরকার বলছে বিদ্যুতের সংকট নেই, তাহলে কেন এত লোডশেডিং?
সার্বিক বিষয়ে জানতে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন স্বীকার করেন, রংপুর বিভাগে নেসকো আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। এমনি অবস্থা সাময়িক বলে দাবি করে তিনি বলেন, ২-৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২ , ২০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ ৫৮টি উপজেলা। ২০ মিনিট পরপর লোডশেডিং শুরু হয় আবার কখনও ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থা চলছে রংপুর বিভাগে। কখন বিদ্যুৎ আসবে এটাই এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে রংপুর বিভাগের শত শত কল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিং অন্যদিকে প্রচ- দাবদাহ মানুষের জনজীবন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। সর্Ÿোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে রংপুর আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জাবেদ জানান প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দুপুর পর্যন্ত ১১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সাপ্লাই পাওয়ার কারণে তাদের ঘনঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা জানাতে পারেনি কোন কর্মকর্তাই।
রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নেসকোর একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে চাহিদা রয়েছে ৭০০ মেগাওয়াট, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং চলছে। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুৎ এসেছে যার স্থায়িত্ব ছিল ২০ থেকে ২৫ মিনিট। দুপুর ১টা থেকে এক বারের জন্য বিদ্যুৎ আসেনি বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছে। জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যুৎ বিভাগের অভিযোগ কেন্দ্রগুলোর টেলিফোন তুলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রংপুর জেলাসহ পুরো বিভাগে তিন দিন ধরে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বিভাগীয় নগরী রংপুরে আরও ভয়াবহ অবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কলকারখানাগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। প্রচ- গরমের কারণে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। নগরীর প্রেসক্লাব মার্কেটের ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ যায় কিন্তু কখন আসবে তা কেউ বলতে পারছে না। একদিকে প্রচ- গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের জনজীবন হাঁসফাঁস অবস্থা। একই কথা জানালেন জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন। তিনি জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং আর প্রচ- গরমের কারণে মার্কেটে বেচাকেনা একেবারে নেই। আর কয়েকদিন পর ঈদুল আজহা। এখন বেচা-কেনার ধুম পড়ার কথা, অথচ খদ্দের নেই।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে। সাবিহা সুলতানা নামে এক গৃহিনী অভিযোগ করেন, সরকার বলছে বিদ্যুতের সংকট নেই, তাহলে কেন এত লোডশেডিং?
সার্বিক বিষয়ে জানতে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন স্বীকার করেন, রংপুর বিভাগে নেসকো আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। এমনি অবস্থা সাময়িক বলে দাবি করে তিনি বলেন, ২-৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।