এসবির আপত্তি গোপন রেখে ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি’র) আপত্তিকে অনাপত্তি দেখিয়ে ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি সাজিয়ে পাসপোর্ট দিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় অফিস। হাফেজ আহেম্মেদ নামের ওই ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশি পরিচয়ে ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে এখন সৌদি আরবে চলে যায়। এরপর সে আর বাংলাদেশে ফিরে আসেনি।........ এসবির প্রতিবেদনে জাল করে ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট দেয়ার ঘটনায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের ৭ কর্মকর্তা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। এ সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্যশিট দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ যশোরের বোয়ালিয়া থানার ছোটবনগ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে রাজশাহীতে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ২০১৭ সালের ৬ জুন। পাসপোর্ট আবেদনের সময় ভারতীয় নাগরিক একটি মেইল আইডি ও বাংলাদেশি একটি ফোন নম্বর দেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের সহকারী রঞ্জু লাল সরকার ওই আবেদনটি গ্রহণ করে নিজের হেফাজতে নেন। পরে ভারতীয় ওই নাগরিককে বাংলাদেশি নাগরিক সাজিয়ে পাসপোর্ট প্রদানে সবধরনের সহযোগিতা করতে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ৭ কর্মকর্তা কর্মচারী। পাসপোর্ট পাওয়ার পর ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ সৌদি আরব গেলেও আর ফিরে আসেনি। এ সংক্রান্তে মামলা হলে তা তদন্ত করে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অফিস সহকারী রঞ্জু লালসহ ৭ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ভারতীয় ওই নাগরিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের জন্য অনুমতি চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

দুদকের ভাষ্য, ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদের নামে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু ও তাকে সৌদি আরব গমনে সহায়তার একটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদক। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্য ছিলেন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে সহকারী পরিচালক) মিসেস আফনান জান্নাত কেয়া। অনুসন্ধান টিমের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের ১১ মার্চ দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয় উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে। তিনি তদন্ত কাজ শেষ করে পাসপোর্ট গ্রহীতা ও রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিতে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাািখল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আবেদনসহ মোট ৪৩টি আবেদনের বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পুলিশ প্রতিবেদনে আবেদনকারী হাফেজ আহম্মেদকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্পেশাল ব্রাঞ্চের মডিউলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আসামি মো. হুমায়ুন কবির অসৎ উদ্দেশে বিষয়টি কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট দেননি। যার ফলে ১৮ আগস্ট তারিখে আবেদনপত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্রুভাল মডিউলে চলে যায়। রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আবজাউল আলম তার দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে সহায়তাকারী ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আলমাস উদ্দিনের মাধ্যমে ৩০ আগস্ট ডাটা কারেকশন (ঠিকানা- বাড়ি নম্বর সংশোধন) করে পাসপোর্ট প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। এরপর আসামি রঞ্জু লাল সরকার ৭ সেপ্টেম্বর সকালে তৎকালীন রেকর্ডকিপার আসামি মো. ইব্রাহিম হোসেনের (ইউজার আইডি ব্যবহার করে) সহযোগিতায় পাসপোর্ট (নম্বর- বিকিউ ০১৭৮২৬০) ডেলিভারি প্রদান করেন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের (বিজি-০০৩৫) ফ্লাইটে সৌদি আরবে গমন করেন। হাফেজ আহম্মেদ দেশ ছাড়ার পর তার আবেদনের মূল রেকর্ডপত্র রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস থেকে বিনষ্ট ও গায়েব করা হয়।

আরও খবর
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চায় : প্রধানমন্ত্রী
যানজটের লাগাম টানতে সার্কুলার রোড করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
মন্ত্রিসভায় পারিবারিক আদালত আইনের খসড়া অনুমোদন
রংপুরসহ ৮ জেলায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং, জনজীবন পুরোপুরি অচল
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আমিনুল ২৫ বছর পর গ্রেপ্তার
রাঙামাটিতে ৩ হত্যা ও শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ, প্রতিবাদ পিসিজেএসএসের
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়ায় ড. ইকবাল কবীর জাহিদকে ফাঁসানোর অভিযোগ!
ঈদের আগে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে না
আড়াইহাজারে ছাত্র-শিক্ষক মিলে মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণ
শিক্ষক হত্যা ও অধ্যক্ষকে হেনস্তা, নির্যাতনের প্রতিবাদ
‘জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি’
মাসে ১২০ কোটি টাকার ইয়াবা আনতো গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা শফিউল্লাহ

সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২ , ২০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

এসবির আপত্তি গোপন রেখে ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু

সাইফ বাবলু

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি’র) আপত্তিকে অনাপত্তি দেখিয়ে ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি সাজিয়ে পাসপোর্ট দিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় অফিস। হাফেজ আহেম্মেদ নামের ওই ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশি পরিচয়ে ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে এখন সৌদি আরবে চলে যায়। এরপর সে আর বাংলাদেশে ফিরে আসেনি।........ এসবির প্রতিবেদনে জাল করে ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট দেয়ার ঘটনায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের ৭ কর্মকর্তা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। এ সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্যশিট দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ যশোরের বোয়ালিয়া থানার ছোটবনগ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে রাজশাহীতে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ২০১৭ সালের ৬ জুন। পাসপোর্ট আবেদনের সময় ভারতীয় নাগরিক একটি মেইল আইডি ও বাংলাদেশি একটি ফোন নম্বর দেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের সহকারী রঞ্জু লাল সরকার ওই আবেদনটি গ্রহণ করে নিজের হেফাজতে নেন। পরে ভারতীয় ওই নাগরিককে বাংলাদেশি নাগরিক সাজিয়ে পাসপোর্ট প্রদানে সবধরনের সহযোগিতা করতে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ৭ কর্মকর্তা কর্মচারী। পাসপোর্ট পাওয়ার পর ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ সৌদি আরব গেলেও আর ফিরে আসেনি। এ সংক্রান্তে মামলা হলে তা তদন্ত করে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অফিস সহকারী রঞ্জু লালসহ ৭ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ভারতীয় ওই নাগরিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের জন্য অনুমতি চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

দুদকের ভাষ্য, ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদের নামে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু ও তাকে সৌদি আরব গমনে সহায়তার একটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদক। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্য ছিলেন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে সহকারী পরিচালক) মিসেস আফনান জান্নাত কেয়া। অনুসন্ধান টিমের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের ১১ মার্চ দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয় উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে। তিনি তদন্ত কাজ শেষ করে পাসপোর্ট গ্রহীতা ও রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিতে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাািখল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আবেদনসহ মোট ৪৩টি আবেদনের বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পুলিশ প্রতিবেদনে আবেদনকারী হাফেজ আহম্মেদকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্পেশাল ব্রাঞ্চের মডিউলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আসামি মো. হুমায়ুন কবির অসৎ উদ্দেশে বিষয়টি কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট দেননি। যার ফলে ১৮ আগস্ট তারিখে আবেদনপত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্রুভাল মডিউলে চলে যায়। রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আবজাউল আলম তার দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে সহায়তাকারী ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আলমাস উদ্দিনের মাধ্যমে ৩০ আগস্ট ডাটা কারেকশন (ঠিকানা- বাড়ি নম্বর সংশোধন) করে পাসপোর্ট প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। এরপর আসামি রঞ্জু লাল সরকার ৭ সেপ্টেম্বর সকালে তৎকালীন রেকর্ডকিপার আসামি মো. ইব্রাহিম হোসেনের (ইউজার আইডি ব্যবহার করে) সহযোগিতায় পাসপোর্ট (নম্বর- বিকিউ ০১৭৮২৬০) ডেলিভারি প্রদান করেন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের (বিজি-০০৩৫) ফ্লাইটে সৌদি আরবে গমন করেন। হাফেজ আহম্মেদ দেশ ছাড়ার পর তার আবেদনের মূল রেকর্ডপত্র রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস থেকে বিনষ্ট ও গায়েব করা হয়।