ক্রয়ক্ষমতা আর কত কমবে

মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখা গেল একই পরিমাণ টাকায় আগের সপ্তাহে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, এবার তা কেনা হলো না। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের সমপরিমাণ চাল, আটা, তেলের চেয়ে এবার কিছু কম পরিমাণ ক্রয় করেই ঘরে ফিরতে হলো। অর্থাৎ আপনার কেনাকাটার সামর্থ্য কমেছে। আপনার আয় যদি বৃদ্ধি পেত তবে বাজারে মূল্য বৃদ্ধিতেও ক্রয়ক্ষমতা ঠিকই থাকত। কিন্তু বাজার মূল্যের সঙ্গে আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় পরিবারের স্বাভাবিক কাজ যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা তথা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটছে। এক সময় দেখা যাবে বিপদ-আপদমোকাবিলায় তিল তিল করে যে সঞ্চয় করেছিলেন সেটিও ভেঙে সংসার নির্বাহ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মুদ্রাস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য থেকে দেখা যায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। সরকারি সংস্থা, গত মার্চ মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী এই সূচকের হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালের মার্চে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৬ টাকা ২২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে অথবা সীমিত আয়ের কারণে ১০০ টাকায় অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ পণ্য কিনতে হয়েছে- আর এটাই হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস।

খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে যখন মূল্যস্ফীতি ঘটে, তখন তা সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে উঠে দুর্বিষহ। আয়ের সিংহভাগ ব্যয় হয় খাদ্য সংগ্রহে। সংসার নির্বাহে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যসামগ্রী কেনার সামর্থ্য হারায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। মূল্যস্ফীতি একজন ক্রেতাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে, যেমন; একজন ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকতে পারে যদি মূল্যস্ফীতির আনুপাতিক হারে তার আয় বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণের ওপর মূলস্ফীতির তেমন নেতিবাচক পড়ে না। অন্যদিকে একজন গ্রাহক ব্যাংক সঞ্চয়ের ওপর শতকরা ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ভোগরত অবস্থায় মূল্যস্ফীতির হার যদি শতকরা ৬ শতাংশ ভাগ হয়, তবে সঞ্চয়ী হিসাবের ক্রয়ক্ষমতাও শতকরা ১ শতাংশ হ্রাস পায়।

বিবিএসের তথ্যমতে, মার্চে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। মার্চ মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। মার্চে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে; গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

একজন ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা হারানোর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মুদ্রাস্ফীতি বা নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্যবৃদ্ধি। তবে ক্রয়ক্ষমতা হারানোর পেছনে শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়, রয়েছে নানাবিধ কারণ। যেমন কর্মসংস্থান, প্রকৃত আয়, পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি, সহজ শর্তে লোন পাওয়া, স্বর্ণের দাম, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, করের পরিমাণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা। পেছনে মূলতঃ দুটি কারণে মুদ্রাস্ফীতির ঘটে; এক, যখন চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তখন ওই পণ্য সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায়। এটিকে বলা হয় ডিমান্ড পুশ ইনফ্লেশন বা চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে, উৎপাদনের কাঁচামাল, শ্রমিকের মজুরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, কর আরোপ, মুদ্রা সরবরাহের হার বৃদ্ধি পাওয়কে কষ্টপুষ ইনফ্লেনেশন বা খরচ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

করোনার অভিঘাতের পর নতুন করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘ রূপ নেয়ায় মন্দা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করে আসছে গত বছরের শুরু থেকে। এখন ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতের কারণে আগামী মাসগুলোতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি নিউইয়র্কে দেয়া ভাষণে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, যুদ্ধের কারণে দামের ঊর্ধ্বগতি দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। দ্য ফুড ফাউন্ডেশনের এক জরিপে উঠে শুধু বাংলাদেশ বা উন্নয়নশীল দেশই নয়, এখন যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের মানুষও ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে এখন এক বেলা উপোস করছে বা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ৩০ বছরের মধ্যে তা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে উঠতে পারে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ এখন হিমায়িত খাদ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের ফলে জনমনে যে অসন্তোষ তা নিরসনে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশই শুধু নয় বড় দেশগুলোও বৈশ্বিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যয় সংকোচন নীতিতে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম সারা বিশ্বেই হু হু করে বাড়ছে।

বাংলাদেশ সরকার মূল্যস্ফীতির এই প্রবণতা রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বা পে-স্কেল ঘোষণা না করা, ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা, বিলাসবহুল পণ্যের আমদানির গতি কমাতে কৌশল নির্ধারণ, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবাহ ঠিক রাখতে গৃহীত হয়েছে প্রয়োজনীয় নীতিমালা। সরকারের এ ব্যয় সংকোচন নীতির উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, আরও আগে এটা করা গেলে সাধারণ মানুষের পকেটের বেশকিছু টাকা বেঁচে যেত।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র]

সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২ , ২০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

ক্রয়ক্ষমতা আর কত কমবে

মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখা গেল একই পরিমাণ টাকায় আগের সপ্তাহে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, এবার তা কেনা হলো না। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের সমপরিমাণ চাল, আটা, তেলের চেয়ে এবার কিছু কম পরিমাণ ক্রয় করেই ঘরে ফিরতে হলো। অর্থাৎ আপনার কেনাকাটার সামর্থ্য কমেছে। আপনার আয় যদি বৃদ্ধি পেত তবে বাজারে মূল্য বৃদ্ধিতেও ক্রয়ক্ষমতা ঠিকই থাকত। কিন্তু বাজার মূল্যের সঙ্গে আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় পরিবারের স্বাভাবিক কাজ যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা তথা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটছে। এক সময় দেখা যাবে বিপদ-আপদমোকাবিলায় তিল তিল করে যে সঞ্চয় করেছিলেন সেটিও ভেঙে সংসার নির্বাহ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মুদ্রাস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য থেকে দেখা যায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। সরকারি সংস্থা, গত মার্চ মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী এই সূচকের হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালের মার্চে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৬ টাকা ২২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে অথবা সীমিত আয়ের কারণে ১০০ টাকায় অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ পণ্য কিনতে হয়েছে- আর এটাই হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস।

খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে যখন মূল্যস্ফীতি ঘটে, তখন তা সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে উঠে দুর্বিষহ। আয়ের সিংহভাগ ব্যয় হয় খাদ্য সংগ্রহে। সংসার নির্বাহে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যসামগ্রী কেনার সামর্থ্য হারায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। মূল্যস্ফীতি একজন ক্রেতাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে, যেমন; একজন ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকতে পারে যদি মূল্যস্ফীতির আনুপাতিক হারে তার আয় বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণের ওপর মূলস্ফীতির তেমন নেতিবাচক পড়ে না। অন্যদিকে একজন গ্রাহক ব্যাংক সঞ্চয়ের ওপর শতকরা ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ভোগরত অবস্থায় মূল্যস্ফীতির হার যদি শতকরা ৬ শতাংশ ভাগ হয়, তবে সঞ্চয়ী হিসাবের ক্রয়ক্ষমতাও শতকরা ১ শতাংশ হ্রাস পায়।

বিবিএসের তথ্যমতে, মার্চে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। মার্চ মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। মার্চে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে; গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

একজন ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা হারানোর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মুদ্রাস্ফীতি বা নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্যবৃদ্ধি। তবে ক্রয়ক্ষমতা হারানোর পেছনে শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়, রয়েছে নানাবিধ কারণ। যেমন কর্মসংস্থান, প্রকৃত আয়, পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি, সহজ শর্তে লোন পাওয়া, স্বর্ণের দাম, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, করের পরিমাণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা। পেছনে মূলতঃ দুটি কারণে মুদ্রাস্ফীতির ঘটে; এক, যখন চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তখন ওই পণ্য সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায়। এটিকে বলা হয় ডিমান্ড পুশ ইনফ্লেশন বা চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে, উৎপাদনের কাঁচামাল, শ্রমিকের মজুরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, কর আরোপ, মুদ্রা সরবরাহের হার বৃদ্ধি পাওয়কে কষ্টপুষ ইনফ্লেনেশন বা খরচ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

করোনার অভিঘাতের পর নতুন করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘ রূপ নেয়ায় মন্দা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করে আসছে গত বছরের শুরু থেকে। এখন ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতের কারণে আগামী মাসগুলোতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি নিউইয়র্কে দেয়া ভাষণে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, যুদ্ধের কারণে দামের ঊর্ধ্বগতি দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। দ্য ফুড ফাউন্ডেশনের এক জরিপে উঠে শুধু বাংলাদেশ বা উন্নয়নশীল দেশই নয়, এখন যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের মানুষও ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে এখন এক বেলা উপোস করছে বা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ৩০ বছরের মধ্যে তা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে উঠতে পারে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ এখন হিমায়িত খাদ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের ফলে জনমনে যে অসন্তোষ তা নিরসনে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশই শুধু নয় বড় দেশগুলোও বৈশ্বিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যয় সংকোচন নীতিতে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম সারা বিশ্বেই হু হু করে বাড়ছে।

বাংলাদেশ সরকার মূল্যস্ফীতির এই প্রবণতা রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বা পে-স্কেল ঘোষণা না করা, ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা, বিলাসবহুল পণ্যের আমদানির গতি কমাতে কৌশল নির্ধারণ, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবাহ ঠিক রাখতে গৃহীত হয়েছে প্রয়োজনীয় নীতিমালা। সরকারের এ ব্যয় সংকোচন নীতির উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, আরও আগে এটা করা গেলে সাধারণ মানুষের পকেটের বেশকিছু টাকা বেঁচে যেত।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র]