গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত, লোডশেডিং সারাদেশে

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলে এই লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, ২ জুন চাহিদার চেয়ে অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায়, জোনভিত্তিক লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছে।

ওই দিন ঢাকায় চাহিদা ছিল ৪৭১৩ মেগাওয়াট। বিতরণ করা হয়েছে ৪৫৭৩ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ঢাকায় ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম দেয়া হয়েছে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে।

চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় একই দিনে চট্টগ্রাম ও সিলেট জোনে ৪০ মেগাওয়াট করে, ময়মনসিংহ, খুলনায় ও কুমিল্লায় ৫০ মেগাওয়াট করে, রাজশাহীতে ৬০ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ৭০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।

পিডিবি জানায়, চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর রয়েছে। তবে গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কয়লা সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণেও প্রায় ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

তাই গতকাল থেকে সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। কোথাও আবার টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

এদিকে পিডিবির বিদ্যুৎ ঘাটতির তথ্যের সঙ্গে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে ফারাক দেখা গেছে।

রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল এ সংস্থার চাহিদা ছিল প্রায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া গেছে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৩০০ মেগাওয়াট।

রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিডেট। প্রতিষ্ঠানটির দিনে চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৫০ মেগাওয়াট।

এদিকে ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ। গ্রামীণ জনপদ দেশে দেশের ৫৫ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনস্থ সমিতিগুলো। আরইবি সূত্রে জানা যায়, গতকাল তারা চাহিদার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পেয়েছে। ফলে সারাদেশেই কমবেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে।

সংবাদ-এর গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গজারিয়া উপজেলায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন থেকেই দিন-রাত দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা।

গজারিয়ায় ছয়টি সাবস্টেশনের মাধ্যমে আরইবি প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিতরণ করে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর গজারিয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম অভিলাশ চন্দ্র দাস সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে গত কয়েকদিন থেকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা শুধু গজারিয়া উপজেলায় নয় বিভিন্ন উপজেলাতেও একই অবস্থা। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।’

এদিকে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলার কোন কোন এলাকায় দিনে চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শতভাগ বিদ্যুতায়নের সফলতার মধ্যে দেশে লোডশেডিং ছিল না বললেই চলে। কোথাও হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে বিতরণ বা সঞ্চালন ত্রুটি হিসেবে দেখা হতো। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনায় আবার গ্রাহক ভোগান্তি শুরু হয়েছে।

এই অবস্থার মধ্যে গত রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় দেয়া এক পোস্টে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।’

কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সম্প্রতি খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে চড়া দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয় বন্ধ রেখেছে সরকার। এদিকে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন অনেক আগে থেকেই কম হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ)। সাধারণত গড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ২ হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ এমএমসিএফ গ্যাস।

এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে লোডশেডিং।

মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই ২০২২ , ২১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলহজ ১৪৪৩

গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত, লোডশেডিং সারাদেশে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলে এই লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, ২ জুন চাহিদার চেয়ে অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায়, জোনভিত্তিক লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছে।

ওই দিন ঢাকায় চাহিদা ছিল ৪৭১৩ মেগাওয়াট। বিতরণ করা হয়েছে ৪৫৭৩ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ঢাকায় ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম দেয়া হয়েছে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে।

চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় একই দিনে চট্টগ্রাম ও সিলেট জোনে ৪০ মেগাওয়াট করে, ময়মনসিংহ, খুলনায় ও কুমিল্লায় ৫০ মেগাওয়াট করে, রাজশাহীতে ৬০ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ৭০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।

পিডিবি জানায়, চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর রয়েছে। তবে গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কয়লা সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণেও প্রায় ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

তাই গতকাল থেকে সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। কোথাও আবার টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

এদিকে পিডিবির বিদ্যুৎ ঘাটতির তথ্যের সঙ্গে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে ফারাক দেখা গেছে।

রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল এ সংস্থার চাহিদা ছিল প্রায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া গেছে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৩০০ মেগাওয়াট।

রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিডেট। প্রতিষ্ঠানটির দিনে চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৫০ মেগাওয়াট।

এদিকে ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ। গ্রামীণ জনপদ দেশে দেশের ৫৫ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনস্থ সমিতিগুলো। আরইবি সূত্রে জানা যায়, গতকাল তারা চাহিদার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পেয়েছে। ফলে সারাদেশেই কমবেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে।

সংবাদ-এর গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গজারিয়া উপজেলায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন থেকেই দিন-রাত দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা।

গজারিয়ায় ছয়টি সাবস্টেশনের মাধ্যমে আরইবি প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিতরণ করে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর গজারিয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম অভিলাশ চন্দ্র দাস সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে গত কয়েকদিন থেকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা শুধু গজারিয়া উপজেলায় নয় বিভিন্ন উপজেলাতেও একই অবস্থা। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।’

এদিকে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলার কোন কোন এলাকায় দিনে চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শতভাগ বিদ্যুতায়নের সফলতার মধ্যে দেশে লোডশেডিং ছিল না বললেই চলে। কোথাও হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে বিতরণ বা সঞ্চালন ত্রুটি হিসেবে দেখা হতো। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনায় আবার গ্রাহক ভোগান্তি শুরু হয়েছে।

এই অবস্থার মধ্যে গত রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় দেয়া এক পোস্টে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।’

কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সম্প্রতি খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে চড়া দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয় বন্ধ রেখেছে সরকার। এদিকে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন অনেক আগে থেকেই কম হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ)। সাধারণত গড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ২ হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ এমএমসিএফ গ্যাস।

এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে লোডশেডিং।