দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষমাণ রংপুর এক্সপ্রেসের কয়েকজন টিকেট প্রত্যাশীর যুক্তি অনুযায়ী, ‘ট্রেনটির ১৪টি বগিতে প্রত্যেকটিতে ৬১টি আসন করে সর্বমোট ৮৫৪টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেক অনলাইন ও অর্ধেক অফলাইনে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৪২৭টি আসন অফলাইন বা কাউন্টারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র ৪০ জনের মতো টিকেট পাচ্ছেন। এখন যদি প্রত্যেকে ৪টি করেও টিকেট কেনেন তাহলেও ১৬০টির মতো টিকেট পাচ্ছেন যাত্রীরা। অর্থাৎ বাকি ২৬০টি টিকেটের কোন হাদিস নেই।’
বেশ কয়েকজন টিকেটপ্রত্যাশী সংবাদ-এর কাছে দাবি করেছেন, তারা একাধিকবার করে কালোবাজারির টিকেটের অফার পেয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের কাছে টিকেটের আসল মূল্য থেকে তিন/চারগুণ বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। অফার লুফে নিয়ে অনেকে লাইন ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
একাধিক টিকেটপ্রত্যাশী সংবাদ’কে বলেছেন, ‘তাদের কাছে যারা কালোবাজারির টিকেট দেয়ার অফার করেছেন তারা বলেছেন টিকেট তাদের আগেই কেনা আছে। টাকা দিলে কাউন্টারের ভেতর থেকে এনে দিতে পারবেন।’
তবে টিকেটপ্রত্যাশীদের কালোবাজারির অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি সংবাদ। এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন মাস্টার মো. আফসার উদ্দিন কোন কথা বলতে রাজি হননি। তিনি স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
তবে কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারকে তার রুমে দীর্ঘ অপেক্ষা করেও পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মুঠোফোনেও বারবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
টানা প্রায় দেড়দিন ধরে অপেক্ষা করেও রংপুর এক্সপ্রেসের টিকেট পাননি মনিরুজ্জামান মুন্না। গত রোববার বিকেলে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। গতকাল রংপুর এক্সপ্রেসের নির্ধারিত ১২ নাম্বার কাউন্টারের সামনে শুয়েছিলেন।
শুয়ে শুয়েই তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আজ সকালে লাইনের অনেক পেছনে ছিলাম। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হলে ব্ল্যাকে টিকেট কেনার অফার পেয়েছি। আমার কাছে ৫০৫ টাকার টিকেট ১৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে।’
মুন্না আরও বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থী মানুষ। এত টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে পারবো না। আমাকে কয়েকবার অফার দিলেও আমি না করে দিছি। আমার সময়ের অভাব নেই তাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আশা করি কাল সকালে টিকেট পাবো।’
কুড়িগ্রাম যাওয়ার জন্য রোববার থেকে লাইনে আছেন মো. আশরাফুল। তিনিও কালোবাজারির টিকেটের অফার পেয়েছেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘টিকেট বিক্রি শুরু হলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকেট শেষ হয়ে যায়। আজ ১০টার(সোমবার) আগেই কাউন্টার থেকে বলা হলো টিকেট শেষ। লাইন থেকে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মতো টিকেট পেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেককে দেখেছি লাইন ছেড়ে চলে যেতে। তারা কোথায় যায়? আমাকেও ২০০০ টাকা দিলে টিকেট ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেছেন একজন। যাদের টাকা আছে তারা সেই অফার নিয়ে নিচ্ছেন। সকালে এসে সকাল সকালই টিকেট পেয়ে যাচ্ছেন। আর আমরা গতকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাইনি।’
বগুড়ার মিনহাজ নামের এক টিকেটপ্রত্যাশী বলেন, ‘বেশির ভাগ টিকেটই কালোবাজারি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের শুধু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রাখা হচ্ছে। কী করবো গাড়িতে গেলে টাকাও বেশি লাগে আবার আসতে যেতেই ছুটি শেষ হয়ে যায়। তাই লাইনে দাঁড়িয়েছি কপাল গুণে যদি টিকেট পাই।’
রংপুরের আপেল মাহমুদ সংবাদকে বলেন, ‘কালোবাজারিরা আমাকে বলেছেন তাদের টিকেট কাটা আছে। কাউন্টারের ভেতরে রাখা আছে। বেশি টাকা দিতে রাজি হলে লাইন ছেড়ে দিয়ে তার সঙ্গে গেলেই টিকেট দিয়ে দেবেন। কোন ঝামেলা নেই।’
কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রাজশাহীর টিকেটের বেশ চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে কম। চট্টগ্রামের রেলের টিকেট সবাই পাচ্ছেন। এরপরই সিলেটের টিকেটের চাহিদাও কম রয়েছে বলে জানা গেছে।
কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, গতকাল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৮ জুলাইয়ের ২৭ হাজার ৮০০ আগাম টিকেট বিক্রি হয়েছে।
অনলাইনের টিকেট বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’ ডটকম বলছে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪০০ টিকেট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই ২০২২ , ২১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলহজ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষমাণ রংপুর এক্সপ্রেসের কয়েকজন টিকেট প্রত্যাশীর যুক্তি অনুযায়ী, ‘ট্রেনটির ১৪টি বগিতে প্রত্যেকটিতে ৬১টি আসন করে সর্বমোট ৮৫৪টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেক অনলাইন ও অর্ধেক অফলাইনে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৪২৭টি আসন অফলাইন বা কাউন্টারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র ৪০ জনের মতো টিকেট পাচ্ছেন। এখন যদি প্রত্যেকে ৪টি করেও টিকেট কেনেন তাহলেও ১৬০টির মতো টিকেট পাচ্ছেন যাত্রীরা। অর্থাৎ বাকি ২৬০টি টিকেটের কোন হাদিস নেই।’
বেশ কয়েকজন টিকেটপ্রত্যাশী সংবাদ-এর কাছে দাবি করেছেন, তারা একাধিকবার করে কালোবাজারির টিকেটের অফার পেয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের কাছে টিকেটের আসল মূল্য থেকে তিন/চারগুণ বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। অফার লুফে নিয়ে অনেকে লাইন ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
একাধিক টিকেটপ্রত্যাশী সংবাদ’কে বলেছেন, ‘তাদের কাছে যারা কালোবাজারির টিকেট দেয়ার অফার করেছেন তারা বলেছেন টিকেট তাদের আগেই কেনা আছে। টাকা দিলে কাউন্টারের ভেতর থেকে এনে দিতে পারবেন।’
তবে টিকেটপ্রত্যাশীদের কালোবাজারির অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি সংবাদ। এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন মাস্টার মো. আফসার উদ্দিন কোন কথা বলতে রাজি হননি। তিনি স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
তবে কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারকে তার রুমে দীর্ঘ অপেক্ষা করেও পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মুঠোফোনেও বারবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
টানা প্রায় দেড়দিন ধরে অপেক্ষা করেও রংপুর এক্সপ্রেসের টিকেট পাননি মনিরুজ্জামান মুন্না। গত রোববার বিকেলে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। গতকাল রংপুর এক্সপ্রেসের নির্ধারিত ১২ নাম্বার কাউন্টারের সামনে শুয়েছিলেন।
শুয়ে শুয়েই তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আজ সকালে লাইনের অনেক পেছনে ছিলাম। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হলে ব্ল্যাকে টিকেট কেনার অফার পেয়েছি। আমার কাছে ৫০৫ টাকার টিকেট ১৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে।’
মুন্না আরও বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থী মানুষ। এত টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে পারবো না। আমাকে কয়েকবার অফার দিলেও আমি না করে দিছি। আমার সময়ের অভাব নেই তাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আশা করি কাল সকালে টিকেট পাবো।’
কুড়িগ্রাম যাওয়ার জন্য রোববার থেকে লাইনে আছেন মো. আশরাফুল। তিনিও কালোবাজারির টিকেটের অফার পেয়েছেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘টিকেট বিক্রি শুরু হলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকেট শেষ হয়ে যায়। আজ ১০টার(সোমবার) আগেই কাউন্টার থেকে বলা হলো টিকেট শেষ। লাইন থেকে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মতো টিকেট পেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেককে দেখেছি লাইন ছেড়ে চলে যেতে। তারা কোথায় যায়? আমাকেও ২০০০ টাকা দিলে টিকেট ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেছেন একজন। যাদের টাকা আছে তারা সেই অফার নিয়ে নিচ্ছেন। সকালে এসে সকাল সকালই টিকেট পেয়ে যাচ্ছেন। আর আমরা গতকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাইনি।’
বগুড়ার মিনহাজ নামের এক টিকেটপ্রত্যাশী বলেন, ‘বেশির ভাগ টিকেটই কালোবাজারি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের শুধু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রাখা হচ্ছে। কী করবো গাড়িতে গেলে টাকাও বেশি লাগে আবার আসতে যেতেই ছুটি শেষ হয়ে যায়। তাই লাইনে দাঁড়িয়েছি কপাল গুণে যদি টিকেট পাই।’
রংপুরের আপেল মাহমুদ সংবাদকে বলেন, ‘কালোবাজারিরা আমাকে বলেছেন তাদের টিকেট কাটা আছে। কাউন্টারের ভেতরে রাখা আছে। বেশি টাকা দিতে রাজি হলে লাইন ছেড়ে দিয়ে তার সঙ্গে গেলেই টিকেট দিয়ে দেবেন। কোন ঝামেলা নেই।’
কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রাজশাহীর টিকেটের বেশ চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে কম। চট্টগ্রামের রেলের টিকেট সবাই পাচ্ছেন। এরপরই সিলেটের টিকেটের চাহিদাও কম রয়েছে বলে জানা গেছে।
কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, গতকাল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৮ জুলাইয়ের ২৭ হাজার ৮০০ আগাম টিকেট বিক্রি হয়েছে।
অনলাইনের টিকেট বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’ ডটকম বলছে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪০০ টিকেট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।