কিস্তির টাকা না পেয়ে মারধর

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গ্রাহক কিস্তির টাকা না দেওয়ায় জামিনদারকে ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হলে গত রবিবার মারধরের শিকার ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

মারধরের শিকার জামিনদাতা মো. জসিম আকন বলেন, উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের নুরু মৃধার ছেলে মো. আবুল হোসেন মৃধা কিছুদিন পূর্বে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি থেকে চার লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ সময় আমি চেক জমা দিয়ে তার জামিনদাতা হই। আবুল হোসেন দু-তিন মাস অসুস্থ থাকার কারণে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিলেন। এই কারণে সে কিস্তি দিতে পারেনি। খিস্তি না দেওয়ায় সমিতির সভাপতি মোঃ আল আমিন হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে টাকা দিতে বলে এবং টাকা না দিলে মারধরের হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে গত ২৫ জুন সন্ধ্যা ৮টার দিকে ওই সমিতির পরিচালক পরিষদের সদস্য জাকির মোল্লা আমাকে সমিতির ভেতরে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করে। আমি কেন টাকা দেবো জানতে চাইলে অতর্কিতভাবে কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে থাকে। এ সময় আমি চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে।

আরেক জামিনদাতা মিলন মাঝি বলেন, সরকারি চেক জমা রেখে তার চাচাতো ভাই এই সমিতি থেকে ঋণগ্রহণ করে তাতে সে জামিনদাতা হন। ঋণগ্রহণের পর থেকেই নিয়মিত কিস্তি দিয়ে আসছিল। সুদের হার বেশি হওয়ায় মাঝখানে তার ভাই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গত রমজান মাসে আমাকে সমিতির ভিতরে ধরে নিয়ে যান। এ সময় বেল্লাল নামের সমিতির এক কর্মচারী কেন টাকা পরিশোধ করে নাই জানতে চেয়ে আমাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি ও কিলঘুসি দিতে শুরু করে। সমিতির সভাপতি প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় আমরা বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে সব টাকা পরিশোধ করে সেখান থেকে চলে আসি।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রাহককে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক গ্রাহকই অভিযোগ করে বলেন, টাকা পরিশোধ করে অনেক সময় তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। অধিক হারে সুদ গ্রহণ করার পরেও অনেক সময় কিস্তির টাকা পরিশোধ করলেও কাগজপত্রে সেটি জমা না করে তাদের হয়রানি করে দ্বিতীয় বার আবার টাকা নেওয়া হয়। অনেক সময় গ্রাহকের মোটরসাইকেল-অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রা আটকে রেখে জোরজবরদস্তি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।

অভিযোগের বিষয় মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পরিচালক পরিষদের সদস্য জাকির মোল্লা ও কর্মচারী বেল্লাল এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোঃ আল-আমিন হোসেন বলেন, জসিম আকনের কাঠের দোকানে জাকির মোল্লা কার্ড কিনে কিছু একটা বানাতে রেখে আসছিল।

সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে বাইরে বসে ঝগড়া হলে এখানে ডেকে এনে সেভেনআপ খাইয়ে সালিশ মীমাংসা করে মিটমাট করা হয়েছে।

আর জামিনদার মিলর মাঝির বিষয়ে তিনি বলেন, মিলন মাঝি চেক জমা দিয়ে তার স্ত্রীর নামে একটি ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋনের টাকা পরিশোধ নিয়ে তার সাথে একটু তর্কাতর্কি হয়েছিল। পরে তারা এক সপ্তাহ সময় নিয়ে টাকা-পয়সা পরিশোধ করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তানিয়া ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমি শুনিনি এবং কেউ অভিযোগও করেনি। যদি এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২ , ২২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

কিস্তির টাকা না পেয়ে মারধর

প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গ্রাহক কিস্তির টাকা না দেওয়ায় জামিনদারকে ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হলে গত রবিবার মারধরের শিকার ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

মারধরের শিকার জামিনদাতা মো. জসিম আকন বলেন, উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের নুরু মৃধার ছেলে মো. আবুল হোসেন মৃধা কিছুদিন পূর্বে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি থেকে চার লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ সময় আমি চেক জমা দিয়ে তার জামিনদাতা হই। আবুল হোসেন দু-তিন মাস অসুস্থ থাকার কারণে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিলেন। এই কারণে সে কিস্তি দিতে পারেনি। খিস্তি না দেওয়ায় সমিতির সভাপতি মোঃ আল আমিন হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে টাকা দিতে বলে এবং টাকা না দিলে মারধরের হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে গত ২৫ জুন সন্ধ্যা ৮টার দিকে ওই সমিতির পরিচালক পরিষদের সদস্য জাকির মোল্লা আমাকে সমিতির ভেতরে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করে। আমি কেন টাকা দেবো জানতে চাইলে অতর্কিতভাবে কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে থাকে। এ সময় আমি চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে।

আরেক জামিনদাতা মিলন মাঝি বলেন, সরকারি চেক জমা রেখে তার চাচাতো ভাই এই সমিতি থেকে ঋণগ্রহণ করে তাতে সে জামিনদাতা হন। ঋণগ্রহণের পর থেকেই নিয়মিত কিস্তি দিয়ে আসছিল। সুদের হার বেশি হওয়ায় মাঝখানে তার ভাই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গত রমজান মাসে আমাকে সমিতির ভিতরে ধরে নিয়ে যান। এ সময় বেল্লাল নামের সমিতির এক কর্মচারী কেন টাকা পরিশোধ করে নাই জানতে চেয়ে আমাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি ও কিলঘুসি দিতে শুরু করে। সমিতির সভাপতি প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় আমরা বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে সব টাকা পরিশোধ করে সেখান থেকে চলে আসি।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রাহককে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক গ্রাহকই অভিযোগ করে বলেন, টাকা পরিশোধ করে অনেক সময় তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। অধিক হারে সুদ গ্রহণ করার পরেও অনেক সময় কিস্তির টাকা পরিশোধ করলেও কাগজপত্রে সেটি জমা না করে তাদের হয়রানি করে দ্বিতীয় বার আবার টাকা নেওয়া হয়। অনেক সময় গ্রাহকের মোটরসাইকেল-অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রা আটকে রেখে জোরজবরদস্তি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।

অভিযোগের বিষয় মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পরিচালক পরিষদের সদস্য জাকির মোল্লা ও কর্মচারী বেল্লাল এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোঃ আল-আমিন হোসেন বলেন, জসিম আকনের কাঠের দোকানে জাকির মোল্লা কার্ড কিনে কিছু একটা বানাতে রেখে আসছিল।

সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে বাইরে বসে ঝগড়া হলে এখানে ডেকে এনে সেভেনআপ খাইয়ে সালিশ মীমাংসা করে মিটমাট করা হয়েছে।

আর জামিনদার মিলর মাঝির বিষয়ে তিনি বলেন, মিলন মাঝি চেক জমা দিয়ে তার স্ত্রীর নামে একটি ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋনের টাকা পরিশোধ নিয়ে তার সাথে একটু তর্কাতর্কি হয়েছিল। পরে তারা এক সপ্তাহ সময় নিয়ে টাকা-পয়সা পরিশোধ করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তানিয়া ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমি শুনিনি এবং কেউ অভিযোগও করেনি। যদি এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।