কেনা-বেচা এখনো জমে উঠেনি
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এখনো বেচা-কেনা পুরোপুরি শুরু না হলেও হাটে আসা বড় গরু নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উৎসাহের কমতি নেই। অনেক ক্রেতাই আসছেন কোরবানির পশু দেখতে। তবে তাদের ভাবনা ঈদের দ্ইু-একদিন আগে কোরবানির পশু কিনবেন। গতকাল গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের নানা প্রান্ত বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বিক্রেতারা কেউ কেউ পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত আবার অনেকেই যাত্রার ধকল কাটাতে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিচ্ছেন। আবার অনেনেক দল বেঁধে এসে পশু দেখছেন, ছবি তুলছেন। ক্রেতারা বলছেন, আকাশচুম্বী দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। হাটে বড় ও আকর্ষণীয় পশু ঢুকলেই ইউটিউবাররা বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ভিডিও করার জন্য, যা বিক্রেতাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
হাটে গিয়ে দেখা মিলল সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শাহারুখ খান ও শকিব খান নামের গরুর। বিশাল আকৃতির এই গরু নিয়ে হাটে আসা বাবুল ব্যাপারির প্রত্যাশা অনেক। ৩ থেকে ৬ মাস ধরে এলাকার বিভিন্ন হাট থেকে ১৭টি গরু কিনে তা লালন-পালন করে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে নিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জের বাবলু ব্যাপারি। ১৭টির মধ্যে ফ্রিজিয়ান জাতের একটির নাম শাকিব খান, আরেকটির নাম শাহারুখ খান। শাহারুখ খানের দাম ১৩ লাখ, আর শাকিব খানের দাম সারে ১৩ লাখ টাকা হাঁকছেন তিনি। শাহারুক খানের ওজন প্রায় ১৯ মণ, আর শাকিব খানের ওজন ২০ মণ।
নরসিংদী থেকে আসা খামারি রাসেল খামারে পালন করা ব্ল্যাক ডায়মন্ড জাতের ৫ বছর বয়সী গরু নিয়ে গতকাল গাবতলী হাটে এসেছেন। তিনি ১২০০ কেজি ওজনের গরুটির দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা।
মেহেরপুর জেলার খামারি মোস্তাফিজার বলেন, ‘১৫ মণ ওজনের ১টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। দাম চেয়েছি ৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত একজন ক্রেতা এসেছেন, তিনি ৩ লাখ টাকা দাম করেছেন, ৫ লাখ টাকা হলে বিক্রি করব।’
বিক্রেতারা কেমন দাম হাঁকছেন জানতে চাইলে মিরপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘দাম বেশি চাচ্ছেন না, সব জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে দাম ঠিকই আছে।’
গাবতলী হাটের পশু ব্যবসায়ী অপুর কর্মচারী হাবিবের কাছে মহিষ ও দুম্বার বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে কয়েকমাস আগে ৪টি দুম্বা এনে পালন করে গতকাল হাটে এনেছেন, তার মধ্যে দুটি দুম্বা বিক্রি হয়েছে। ৩ মণ ওজনের একেকটি বিক্রি করেছি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। আর ইন্ডিয়া থেকে আনা বিহারি জাতের প্রায় ৮৫০ কেজি, ৯৫০ কেজি ও ১০৫০ ৩টি মহিষ ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছি।’
দিনাজপুর জেলার ঘোরাঘাট থেকে ছাগল ব্যবসায়ী আফতাব মিয়া, মশিউর রহমান ও সুজা মিয়া মিলে ৩১টি ছাগল নিয়ে গাবতলীর হাটে গতকাল এসেছেন। বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তাদেরই একজন বলেন, জোহরের আজান দিল, এখন পর্যন্ত ১টা খাসিও বিক্রি হয় নাই।’
ছাগল বিক্রেতা আফতাব মিয়ার সঙ্গে কথা বলার মাঝখানে একজন পাইকার এসে ১ জোড়া ছাগলের দড়ি হাতে নিয়ে বললেন দাম কত? খাসি ২টির মোট ওজন প্রায় ৫০ কেজি হবে আর মাংস ৩৫ কেজি পাওয়া যাবে বলে বিক্রেতা আফতাব মিয়া ছাগল দুটির দাম চাইলেন ৩০ হাজার টাকা। তবে তিনি ২৫ হাজার টাকার কমে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
ক্রেতা পাইকার ২০ হাজার টাকা থেকে দাম শুরু করলেও সর্বশেষ ২২ হাজার ৫০০ টাকা হাতে জোর করে গুজে দেয়ার চেষ্টা করেও না পেরে চলে গেলেন। বিক্রেতা আফতাব এ প্রতিবেদককে বলেন, দেখেন ভাই এলাকাতে চোখ বন্ধ করে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে।
রাজবাড়ী পাংসা থেকে খামারি বাবু মিয়া তার খামার থেকে পাকিস্তানি জাতের ৪টি বড় সাইজের ছাগল গাবতলী হাটে এসেছেন। হাটে জায়গা না পেয়ে ছাগল ৪টি নিয়ে হাটের অলিতে গলিতে ঘুরছেন।
হাটে জায়গা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ হাটে প্রথম এসেছি, হাটের লোকজন বললো জায়গা নেই তাই হাতে করে নিয়ে ঘুরছি। এতবড় ৪টা ছাগল দুই হাতে ধরে রাখা অনেক কষ্ট।’
ছাগল ৪টির দাম জানতে চাইলে বলেন, বড়টির দাম এক লাখ ১৫ হাজার, অন্য তিনটি যথাক্রমে ৯০ হাজার, ৬০ হাজার ও ৪২ হাজার। হাটে ছাগলের জায়গা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাবতলী হাট ইজারাদারের ম্যানেজার আবুল হোসেন বলেন, ‘জায়গা পায়নি কথাটি ঠিক না, ঘুরে ঘুরে বিক্রি করলে তারা কম সময়ে সেল দিতে পারবেন। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে হাট ম্যনেজার বলেন, হাটের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বিকেল থেকে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
হাটে বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, এখনো তেমন বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি, আশা করি এবার ভালো হবে।
বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২ , ২২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩
কেনা-বেচা এখনো জমে উঠেনি
আমিরুল মোমিনিন সাগর
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এখনো বেচা-কেনা পুরোপুরি শুরু না হলেও হাটে আসা বড় গরু নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উৎসাহের কমতি নেই। অনেক ক্রেতাই আসছেন কোরবানির পশু দেখতে। তবে তাদের ভাবনা ঈদের দ্ইু-একদিন আগে কোরবানির পশু কিনবেন। গতকাল গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের নানা প্রান্ত বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বিক্রেতারা কেউ কেউ পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত আবার অনেকেই যাত্রার ধকল কাটাতে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিচ্ছেন। আবার অনেনেক দল বেঁধে এসে পশু দেখছেন, ছবি তুলছেন। ক্রেতারা বলছেন, আকাশচুম্বী দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। হাটে বড় ও আকর্ষণীয় পশু ঢুকলেই ইউটিউবাররা বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ভিডিও করার জন্য, যা বিক্রেতাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
হাটে গিয়ে দেখা মিলল সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শাহারুখ খান ও শকিব খান নামের গরুর। বিশাল আকৃতির এই গরু নিয়ে হাটে আসা বাবুল ব্যাপারির প্রত্যাশা অনেক। ৩ থেকে ৬ মাস ধরে এলাকার বিভিন্ন হাট থেকে ১৭টি গরু কিনে তা লালন-পালন করে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে নিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জের বাবলু ব্যাপারি। ১৭টির মধ্যে ফ্রিজিয়ান জাতের একটির নাম শাকিব খান, আরেকটির নাম শাহারুখ খান। শাহারুখ খানের দাম ১৩ লাখ, আর শাকিব খানের দাম সারে ১৩ লাখ টাকা হাঁকছেন তিনি। শাহারুক খানের ওজন প্রায় ১৯ মণ, আর শাকিব খানের ওজন ২০ মণ।
নরসিংদী থেকে আসা খামারি রাসেল খামারে পালন করা ব্ল্যাক ডায়মন্ড জাতের ৫ বছর বয়সী গরু নিয়ে গতকাল গাবতলী হাটে এসেছেন। তিনি ১২০০ কেজি ওজনের গরুটির দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা।
মেহেরপুর জেলার খামারি মোস্তাফিজার বলেন, ‘১৫ মণ ওজনের ১টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। দাম চেয়েছি ৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত একজন ক্রেতা এসেছেন, তিনি ৩ লাখ টাকা দাম করেছেন, ৫ লাখ টাকা হলে বিক্রি করব।’
বিক্রেতারা কেমন দাম হাঁকছেন জানতে চাইলে মিরপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘দাম বেশি চাচ্ছেন না, সব জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে দাম ঠিকই আছে।’
গাবতলী হাটের পশু ব্যবসায়ী অপুর কর্মচারী হাবিবের কাছে মহিষ ও দুম্বার বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে কয়েকমাস আগে ৪টি দুম্বা এনে পালন করে গতকাল হাটে এনেছেন, তার মধ্যে দুটি দুম্বা বিক্রি হয়েছে। ৩ মণ ওজনের একেকটি বিক্রি করেছি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। আর ইন্ডিয়া থেকে আনা বিহারি জাতের প্রায় ৮৫০ কেজি, ৯৫০ কেজি ও ১০৫০ ৩টি মহিষ ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছি।’
দিনাজপুর জেলার ঘোরাঘাট থেকে ছাগল ব্যবসায়ী আফতাব মিয়া, মশিউর রহমান ও সুজা মিয়া মিলে ৩১টি ছাগল নিয়ে গাবতলীর হাটে গতকাল এসেছেন। বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তাদেরই একজন বলেন, জোহরের আজান দিল, এখন পর্যন্ত ১টা খাসিও বিক্রি হয় নাই।’
ছাগল বিক্রেতা আফতাব মিয়ার সঙ্গে কথা বলার মাঝখানে একজন পাইকার এসে ১ জোড়া ছাগলের দড়ি হাতে নিয়ে বললেন দাম কত? খাসি ২টির মোট ওজন প্রায় ৫০ কেজি হবে আর মাংস ৩৫ কেজি পাওয়া যাবে বলে বিক্রেতা আফতাব মিয়া ছাগল দুটির দাম চাইলেন ৩০ হাজার টাকা। তবে তিনি ২৫ হাজার টাকার কমে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
ক্রেতা পাইকার ২০ হাজার টাকা থেকে দাম শুরু করলেও সর্বশেষ ২২ হাজার ৫০০ টাকা হাতে জোর করে গুজে দেয়ার চেষ্টা করেও না পেরে চলে গেলেন। বিক্রেতা আফতাব এ প্রতিবেদককে বলেন, দেখেন ভাই এলাকাতে চোখ বন্ধ করে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে।
রাজবাড়ী পাংসা থেকে খামারি বাবু মিয়া তার খামার থেকে পাকিস্তানি জাতের ৪টি বড় সাইজের ছাগল গাবতলী হাটে এসেছেন। হাটে জায়গা না পেয়ে ছাগল ৪টি নিয়ে হাটের অলিতে গলিতে ঘুরছেন।
হাটে জায়গা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ হাটে প্রথম এসেছি, হাটের লোকজন বললো জায়গা নেই তাই হাতে করে নিয়ে ঘুরছি। এতবড় ৪টা ছাগল দুই হাতে ধরে রাখা অনেক কষ্ট।’
ছাগল ৪টির দাম জানতে চাইলে বলেন, বড়টির দাম এক লাখ ১৫ হাজার, অন্য তিনটি যথাক্রমে ৯০ হাজার, ৬০ হাজার ও ৪২ হাজার। হাটে ছাগলের জায়গা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাবতলী হাট ইজারাদারের ম্যানেজার আবুল হোসেন বলেন, ‘জায়গা পায়নি কথাটি ঠিক না, ঘুরে ঘুরে বিক্রি করলে তারা কম সময়ে সেল দিতে পারবেন। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে হাট ম্যনেজার বলেন, হাটের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বিকেল থেকে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
হাটে বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, এখনো তেমন বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি, আশা করি এবার ভালো হবে।