হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা গাজী আনিসের মৃত্যু হয়েছে। তবে তিনি মারা যাওয়ার আগে ফেইসবুকেও সবাইকে জানিয়েছেন ‘ভীষণ মানসিক নিপট খরায় (কষ্টে) আমি উল্লিখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেইসবুকেও সবাইকে জানালাম। আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি।’

হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করা এক কোটি ২৪ লাখ টাকা ফেরত পেতে মৃত্যুর আগে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও না পেয়ে নিজ ফেইসবুক আইডিতে এমন স্ট্যাটাস দেন গাজী আনিস (৫০)। আত্মহত্যার আগে গত ৩১ মে ওই স্ট্যাটাসে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ও কোম্পানির এমডি ফাতেমা আমিনের কাছে টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো একাধিক বার হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

এদিকে গাজী আনিসের এই মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। তারা বলছেন, হেনোলাক্স কোম্পানি এক কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন গাজী আনিস। এই হত্যার পেছনে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী জড়িত। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরেই গাজী আনিসের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন এবং তা স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। গতকাল রাতে উত্তরা থেকে নুরুল আমিনকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। তবে পুলিশ আসামিদের পল্টনের অফিসসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও রাত ৮টা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

এর আগে গতকাল সকাল ৬টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় গাজী আনিসের। বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আনিসের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় রাতেই তাকে আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সকালের দিকে তার মৃত্যু হয়।

গত সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গাজী আনিস। পরে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

মৃতের ভাই নজরুল ইসলাম জানান, আনিসের গাড়ি ও পানির পাম্পের ব্যবসা ছিল। সেসব ব্যবসা গুটিয়ে হেনোলাক্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ডা. নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ডা. ফাতেমা আমিনের কথা অনুযায়ী এক কোটি ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। লাভসহ পৌনে তিন কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা টাকাতো দিচ্ছিল না, উল্টো হয়রানি করছিল। নুরুল আমিন টাকা দিবে বলে জানিয়েছে। তাই গত ২৬ তারিখে আনিস ঢাকায় আসেন। কিন্তু নুরুল আমিন টাকা দেয়নি। তাই সবশেষ এই ঘটনা ঘটান আনিস।

নজরুল ইসলাম বলেন, টাকা পেতে আমার ভাই কুষ্টিয়া আমলি আদালতে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেন। যা বিচারাধীন রয়েছে। গত ৩১ মে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। কিন্তু কোন ফল না পেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাই গাজী আনিসের মৃত্যুর জন্য হেনোলাক্স কোম্পানির নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী দায়ী। অবিলম্বে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফাঁসি দাবি করছি।

প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের দিন হেনোলাক্স গ্রুপের কাছ থেকে টাকা পাওয়া নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাস্টাস দেন গাজী আনিস। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে আমার সখ্য এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, উপহার বিনিময়, ভালো রেস্তোরাঁয় খাওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। তাদের সঙ্গে একাধিকবার নিজ খরচে বিদেশে বেড়াতেও গিয়েছি। ২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একই সঙ্গে অবস্থানকালে নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিন হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানায়। এতে প্রথমে এক কোটি টাকা পরে আরও ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। প্রাথমিক চুক্তি করা হলেও তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি। বিনিয়োগপরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী গড়িমসি করতে থাকে। তারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করত সেটাও বন্ধ করে দেয় এবং টাকা চাওয়ায় কয়েকবার লোকজন দিয়ে হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইল করে। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমার ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার অধিক উল্লেখ করেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনাও করেছিলেন। কিন্তু কোনমতেই তিনি সুরাহা পাননি। তাই নিজেই নিজেকে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকদের বিচার চেয়ে গতকাল বেলা আড়াইটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গাজী আনিসের মামাতো ভাই তানভীর ইমামের নেতৃত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

তানভীর ইমাম বলেন, আমার ভাই কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। হেনোলাক্স কোম্পানিকে দেয়া টাকা পেতে আমার ভাই মামলা করেও টাকা ফেরত পাননি। এতে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। টাকা পেতে বহু জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু কোন সুরাহা পাননি। তাই হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

এদিকে, আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আনিসের মৃত্যুর খবরে গতকাল সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, তার যে সমস্যা তা স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান কারোর সঙ্গে শেয়ার করেননি। জানলে আমরা অবশ্যই একটা ব্যবস্থা নিতাম। এই মৃত্যুর পিছনে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় মৃতের ভাই বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক ও তার স্ত্রীকে আসামি করি মামলা করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

তবে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেনোলাক্সের পল্টন অফিসসহ বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু আসামিদের পাওয়া যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে গতকাল বিকেলে গাজী আনিসের মরহেদ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী নিজ বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। গাজী আনিস স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে যশোরে থাকতেন জানিয়ে তার ভাতিজা শাহবুব আলম বলেন, বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেঝ মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। গাজী আনিস নিজ গায়ে আগুন দেয়ার খবর পাওয়ার পরপরই তারা বাবার জন্য কেঁদেই যাচ্ছেন। তাদের ঢাকায় আনা হয়নি। মৃত্যুর সংবাদও শোনানো হয়নি। তবে তারা খবর দেখে জেনেছেন। এরপর থেকেই বাবার শোকে কেঁদেই যাচ্ছেন।

আরও খবর
করোনা : শনাক্ত বেড়েছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ‘বিএ.৫’ উপধরনে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বাড়লো
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মোটরসাইকেল নিবন্ধন বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
অনার্স পাস ছাত্রী হামিদা হলেন খামারি
সাঁথিয়া পৌর মেয়রের ব্যক্তিগত অফিস ‘টর্চার সেল’!
বাসায় ফিরেছেন দুই ছাত্রী, মামলায় পলাতক সেই শিক্ষক
ট্রাক ড্রাইভার এক হাতে সিগারেট আর কানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছিল
পিকের সঙ্গে প্রভাবশালীর যোগ : খুব শীঘ্রই চার্জশিট, বললেন কলকাতার আইনজীবী
স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার আসলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না : ফখরুল
যেভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করল সিলেট

বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২ , ২২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

গায়ে আগুন দেয়া আনিসের মৃত্যু

হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা গাজী আনিসের মৃত্যু হয়েছে। তবে তিনি মারা যাওয়ার আগে ফেইসবুকেও সবাইকে জানিয়েছেন ‘ভীষণ মানসিক নিপট খরায় (কষ্টে) আমি উল্লিখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেইসবুকেও সবাইকে জানালাম। আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি।’

হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করা এক কোটি ২৪ লাখ টাকা ফেরত পেতে মৃত্যুর আগে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও না পেয়ে নিজ ফেইসবুক আইডিতে এমন স্ট্যাটাস দেন গাজী আনিস (৫০)। আত্মহত্যার আগে গত ৩১ মে ওই স্ট্যাটাসে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ও কোম্পানির এমডি ফাতেমা আমিনের কাছে টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো একাধিক বার হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

এদিকে গাজী আনিসের এই মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। তারা বলছেন, হেনোলাক্স কোম্পানি এক কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন গাজী আনিস। এই হত্যার পেছনে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী জড়িত। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরেই গাজী আনিসের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন এবং তা স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। গতকাল রাতে উত্তরা থেকে নুরুল আমিনকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। তবে পুলিশ আসামিদের পল্টনের অফিসসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও রাত ৮টা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

এর আগে গতকাল সকাল ৬টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় গাজী আনিসের। বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আনিসের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় রাতেই তাকে আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সকালের দিকে তার মৃত্যু হয়।

গত সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গাজী আনিস। পরে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

মৃতের ভাই নজরুল ইসলাম জানান, আনিসের গাড়ি ও পানির পাম্পের ব্যবসা ছিল। সেসব ব্যবসা গুটিয়ে হেনোলাক্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ডা. নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ডা. ফাতেমা আমিনের কথা অনুযায়ী এক কোটি ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। লাভসহ পৌনে তিন কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা টাকাতো দিচ্ছিল না, উল্টো হয়রানি করছিল। নুরুল আমিন টাকা দিবে বলে জানিয়েছে। তাই গত ২৬ তারিখে আনিস ঢাকায় আসেন। কিন্তু নুরুল আমিন টাকা দেয়নি। তাই সবশেষ এই ঘটনা ঘটান আনিস।

নজরুল ইসলাম বলেন, টাকা পেতে আমার ভাই কুষ্টিয়া আমলি আদালতে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেন। যা বিচারাধীন রয়েছে। গত ৩১ মে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। কিন্তু কোন ফল না পেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাই গাজী আনিসের মৃত্যুর জন্য হেনোলাক্স কোম্পানির নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী দায়ী। অবিলম্বে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফাঁসি দাবি করছি।

প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের দিন হেনোলাক্স গ্রুপের কাছ থেকে টাকা পাওয়া নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাস্টাস দেন গাজী আনিস। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে আমার সখ্য এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, উপহার বিনিময়, ভালো রেস্তোরাঁয় খাওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। তাদের সঙ্গে একাধিকবার নিজ খরচে বিদেশে বেড়াতেও গিয়েছি। ২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একই সঙ্গে অবস্থানকালে নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিন হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানায়। এতে প্রথমে এক কোটি টাকা পরে আরও ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। প্রাথমিক চুক্তি করা হলেও তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি। বিনিয়োগপরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী গড়িমসি করতে থাকে। তারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করত সেটাও বন্ধ করে দেয় এবং টাকা চাওয়ায় কয়েকবার লোকজন দিয়ে হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইল করে। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমার ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার অধিক উল্লেখ করেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনাও করেছিলেন। কিন্তু কোনমতেই তিনি সুরাহা পাননি। তাই নিজেই নিজেকে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকদের বিচার চেয়ে গতকাল বেলা আড়াইটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গাজী আনিসের মামাতো ভাই তানভীর ইমামের নেতৃত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

তানভীর ইমাম বলেন, আমার ভাই কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। হেনোলাক্স কোম্পানিকে দেয়া টাকা পেতে আমার ভাই মামলা করেও টাকা ফেরত পাননি। এতে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। টাকা পেতে বহু জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু কোন সুরাহা পাননি। তাই হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

এদিকে, আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আনিসের মৃত্যুর খবরে গতকাল সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, তার যে সমস্যা তা স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান কারোর সঙ্গে শেয়ার করেননি। জানলে আমরা অবশ্যই একটা ব্যবস্থা নিতাম। এই মৃত্যুর পিছনে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় মৃতের ভাই বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক ও তার স্ত্রীকে আসামি করি মামলা করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

তবে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেনোলাক্সের পল্টন অফিসসহ বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু আসামিদের পাওয়া যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে গতকাল বিকেলে গাজী আনিসের মরহেদ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী নিজ বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। গাজী আনিস স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে যশোরে থাকতেন জানিয়ে তার ভাতিজা শাহবুব আলম বলেন, বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেঝ মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। গাজী আনিস নিজ গায়ে আগুন দেয়ার খবর পাওয়ার পরপরই তারা বাবার জন্য কেঁদেই যাচ্ছেন। তাদের ঢাকায় আনা হয়নি। মৃত্যুর সংবাদও শোনানো হয়নি। তবে তারা খবর দেখে জেনেছেন। এরপর থেকেই বাবার শোকে কেঁদেই যাচ্ছেন।