পিকে হালদারসহ ভারতে আটক ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং আইনজীবী। কলকাতায় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন তদন্তে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।
পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে আজ কলকাতা মহানগর সিবিআই দায়রা আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের আরও ১৫ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছ। অর্থাৎ আগামী ২০ জুলাই অভিযুক্তদের আবার আদালতে হাজির করা হবে। আদালত চত্বরে সংবাদ প্রতিনিধিকে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ইডির এক কর্মকর্তা জানান আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেন তারা।
ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তীও সংবাদকে জানান, এই মামলার তদন্তের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
এই প্রভাবশালী কারা, কোন দেশের নাগরিক সে ব্যাপারে অরজিৎ চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভারতীয় প্রভাবশালীদের নাম নিয়েই আমরা বেশি চিন্তিত। তবে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের নাম উঠে আসলেও সেসব তথ্য এই মুহূর্তে প্রকাশ না করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কোর্টে এই মামলার চার্জশিট জমা পড়বে। তখন অনেক কিছুই প্রকাশ্যে চলে আসবে।’ পিকে হালদারসহ সমস্ত বিবাদীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বা তাদের তদন্তকারী এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও ইডি বা আমাদের কাউকে জানানো হয়নি।’
বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিব শঙ্কর হালদারসহ মোট ছয় অভিযুক্তকে দুইবার রিমান্ডে পাঠানো হয়। এরপর তাদের চার দফা আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রতিবারই তাদের জেল হেফাজাতে রাখার নির্দেশ দেয়।
মামলায় পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্রর স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে জেরা করেছে ইডির কর্মকর্তারা। গত বুধবারই ইডির পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কার্যালয়ে আসেন পূর্ণিমা মৈত্র। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা টানা জেরা করা হয় বাংলাদেশের দুদকের এজহারভুক্ত আসামি পূর্ণিমা মৈত্রকে।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচারের সঙ্গে পূর্ণিমার আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কিনা, থাকলেও তা কোন পর্যায়ের, পূর্ণিমার নাগরিকত্ব মূলত এসবই খতিয়ে দেখতে চায় ইডির কর্মকর্তারা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পূর্ণিমার ব্যাংকের পাস বই, ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কিত নথি। বারাসাতে থাকা তাদের একটি ফ্ল্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ একাধিক নথিপত্রও খতিয়ে দেখছে ইডি। আগামী ৬ জুলাই ফের ইডির দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে পূর্ণিমাকে।
অর্থ-পাচার সংক্রান্ত মামলায় ইডির কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছেন পিকে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে অতসী মৃধা এবং তার স্বামী সঞ্জীব হাওলাদার। গত সপ্তাহেই তাদেরকেও পৃথকভাবে জেরা করে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারের সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে। পিকে হালদারসহ গ্রেপ্তার ছয়জনের বিরুদ্ধেই ‘প্রিভেনশন অফ মানিলন্ডারিং অ্যাক্ট’ এবং ‘দ্যা প্রিভেনশন অব কোরাপশন অ্যাক্ট’ এ মামলা করা হয়েছে।
১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে গতকাল অভিযুক্তদের কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিশেষ সিবিআই কোর্ট-৩ এ তোলা হলে বিচারক জীবন কুমার সাধু নির্দেশ দেন প্রয়োজনে কারাগারে গিয়েও ইডির কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের জেরা করতে পারবে।
পিকের ভাই প্রাণেশ হালদারের জামিনের যে আবেদন আদালতে করা হয়েছিল, গতকাল তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। আর বাকি পাঁচ অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
পিকে হালদারসহ ৫ পুরুষ অভিযুক্তকে রাখা হয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আর আমানা সুলতানা রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে। অভিযুক্তদের জেরা করে ইতোমধ্যেই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রচুর সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক শহরে।
বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২ , ২২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩
দীপক মুখার্জী, কলকাতা
পিকে হালদারসহ ভারতে আটক ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং আইনজীবী। কলকাতায় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন তদন্তে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।
পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে আজ কলকাতা মহানগর সিবিআই দায়রা আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের আরও ১৫ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছ। অর্থাৎ আগামী ২০ জুলাই অভিযুক্তদের আবার আদালতে হাজির করা হবে। আদালত চত্বরে সংবাদ প্রতিনিধিকে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ইডির এক কর্মকর্তা জানান আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেন তারা।
ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তীও সংবাদকে জানান, এই মামলার তদন্তের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
এই প্রভাবশালী কারা, কোন দেশের নাগরিক সে ব্যাপারে অরজিৎ চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভারতীয় প্রভাবশালীদের নাম নিয়েই আমরা বেশি চিন্তিত। তবে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের নাম উঠে আসলেও সেসব তথ্য এই মুহূর্তে প্রকাশ না করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কোর্টে এই মামলার চার্জশিট জমা পড়বে। তখন অনেক কিছুই প্রকাশ্যে চলে আসবে।’ পিকে হালদারসহ সমস্ত বিবাদীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বা তাদের তদন্তকারী এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও ইডি বা আমাদের কাউকে জানানো হয়নি।’
বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিব শঙ্কর হালদারসহ মোট ছয় অভিযুক্তকে দুইবার রিমান্ডে পাঠানো হয়। এরপর তাদের চার দফা আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রতিবারই তাদের জেল হেফাজাতে রাখার নির্দেশ দেয়।
মামলায় পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্রর স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে জেরা করেছে ইডির কর্মকর্তারা। গত বুধবারই ইডির পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কার্যালয়ে আসেন পূর্ণিমা মৈত্র। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা টানা জেরা করা হয় বাংলাদেশের দুদকের এজহারভুক্ত আসামি পূর্ণিমা মৈত্রকে।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচারের সঙ্গে পূর্ণিমার আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কিনা, থাকলেও তা কোন পর্যায়ের, পূর্ণিমার নাগরিকত্ব মূলত এসবই খতিয়ে দেখতে চায় ইডির কর্মকর্তারা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পূর্ণিমার ব্যাংকের পাস বই, ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কিত নথি। বারাসাতে থাকা তাদের একটি ফ্ল্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ একাধিক নথিপত্রও খতিয়ে দেখছে ইডি। আগামী ৬ জুলাই ফের ইডির দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে পূর্ণিমাকে।
অর্থ-পাচার সংক্রান্ত মামলায় ইডির কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছেন পিকে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে অতসী মৃধা এবং তার স্বামী সঞ্জীব হাওলাদার। গত সপ্তাহেই তাদেরকেও পৃথকভাবে জেরা করে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারের সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে। পিকে হালদারসহ গ্রেপ্তার ছয়জনের বিরুদ্ধেই ‘প্রিভেনশন অফ মানিলন্ডারিং অ্যাক্ট’ এবং ‘দ্যা প্রিভেনশন অব কোরাপশন অ্যাক্ট’ এ মামলা করা হয়েছে।
১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে গতকাল অভিযুক্তদের কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিশেষ সিবিআই কোর্ট-৩ এ তোলা হলে বিচারক জীবন কুমার সাধু নির্দেশ দেন প্রয়োজনে কারাগারে গিয়েও ইডির কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের জেরা করতে পারবে।
পিকের ভাই প্রাণেশ হালদারের জামিনের যে আবেদন আদালতে করা হয়েছিল, গতকাল তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। আর বাকি পাঁচ অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
পিকে হালদারসহ ৫ পুরুষ অভিযুক্তকে রাখা হয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আর আমানা সুলতানা রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে। অভিযুক্তদের জেরা করে ইতোমধ্যেই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রচুর সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক শহরে।