লোডশেডিং প্রসঙ্গে

রাজধানীর বাইরে বেশ কিছুদিন ধরেই লোডশেডিং হচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকে রাজধানীতেও শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বাধ্য হয়েই সরকার লোডশেডিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী দুঃখও প্রকাশ করেছেন।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েই চলেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা থেকে সরকার বিরত রয়েছে। এ কারণে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহে টান পড়েছে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।

গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র্রেই লাগে না। শিল্পকলকারখানা ও গার্হস্থ্য কাজেও এর চাহিদা রয়েছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদিত হয় তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো যায় না। যে কারণে বছর চারেক আগে এলএনজি আমদানি শুরু হয়।

গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি হচ্ছে তেল আর কয়লা। সমস্যা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম চড়া। কয়লাও সহজলভ্য নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়ছে। যুদ্ধ থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় অনেক দেশই নিরুপায় হয়ে কৃচ্ছ্রতার পথ ধরেছে। বাংলাদেশের সামনেও কৃচ্ছ্রতার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কৃচ্ছ্রতা মন্দ নয়। তবে বিদ্যুতের স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো না গেলে দেশের উৎপাদনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গরমের কারণে জনজীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন বেড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম না কমলে বা সহনীয় পর্যায়ে না থাকলে সরকার কতদিন এলএনজি কেনা থেকে বিরত থাকবে।

দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়। কিন্তু তা দিয়ে সামগ্রিক চাহিদা পূরণ হয় না। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিদিন ২২০ থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়। আর তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সরকার অবশ্য গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে বিশেষ করে সমুদ্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রশ্নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যম আর উদ্যোগ দুটোরই অভাব রয়েছে। জ্বালানিতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো না গেলে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না। শুধু বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলেই চলবে না। সেগুলো সচল রাখা জরুরি। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সরকারকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী হতে হবে।

বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২ , ২২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

লোডশেডিং প্রসঙ্গে

রাজধানীর বাইরে বেশ কিছুদিন ধরেই লোডশেডিং হচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকে রাজধানীতেও শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বাধ্য হয়েই সরকার লোডশেডিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী দুঃখও প্রকাশ করেছেন।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েই চলেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা থেকে সরকার বিরত রয়েছে। এ কারণে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহে টান পড়েছে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।

গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র্রেই লাগে না। শিল্পকলকারখানা ও গার্হস্থ্য কাজেও এর চাহিদা রয়েছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদিত হয় তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো যায় না। যে কারণে বছর চারেক আগে এলএনজি আমদানি শুরু হয়।

গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি হচ্ছে তেল আর কয়লা। সমস্যা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম চড়া। কয়লাও সহজলভ্য নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়ছে। যুদ্ধ থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় অনেক দেশই নিরুপায় হয়ে কৃচ্ছ্রতার পথ ধরেছে। বাংলাদেশের সামনেও কৃচ্ছ্রতার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কৃচ্ছ্রতা মন্দ নয়। তবে বিদ্যুতের স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো না গেলে দেশের উৎপাদনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গরমের কারণে জনজীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন বেড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম না কমলে বা সহনীয় পর্যায়ে না থাকলে সরকার কতদিন এলএনজি কেনা থেকে বিরত থাকবে।

দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়। কিন্তু তা দিয়ে সামগ্রিক চাহিদা পূরণ হয় না। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিদিন ২২০ থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়। আর তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সরকার অবশ্য গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে বিশেষ করে সমুদ্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রশ্নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যম আর উদ্যোগ দুটোরই অভাব রয়েছে। জ্বালানিতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো না গেলে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না। শুধু বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলেই চলবে না। সেগুলো সচল রাখা জরুরি। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সরকারকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী হতে হবে।