জুনিয়র-সিনিয়র সংকটের শেষ কোথায়

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের মুক্ত বিচরণ কেন্দ্র। প্রতি বছর দেশের ভিন্ন অঞ্চল, ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন অবস্থান থেকে আসা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সবাই যে সমমনা হবে এমনটা নয়। তারা সবরকম শিক্ষা পরিবার বা পরিবেশ থেকে নিয়ে আসবে এটাও আশা করা নিতান্তই বোকামি। সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে, একটু আধটু খুনশুটি হবে, ভাইবোনের দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে উঠবে, সবাই মিলে দোষে-ভুলে একটা পরিবার হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কাটিয়ে দেবেÑএটাই থাকে অধিকাংশের প্রত্যাশা।

ছোট ভাইবোনদের আচরণে, চলাফেরাতে ভুল থাকবেই, বড় ভাইবোনদের আচরণেও ভুল হয়েই থাকে। কারণ, প্রতিটি মানুষই ভুল করে। তবে তাদের শাসন করা, ভুল ধরিয়ে দেওয়া কিংবা পরবর্তী সময়ে আপত্তিজনক কোনো আচরণ করতে না বলার সামান্য অধিকারটুকু না থাকাটা বর্তমানে অধিকাংশ সিনিয়রদের জন্য অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার সঙ্গে সবার সখ্যতা গড়ে ওঠে না। তাই বলে যার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তাকে সম্মান করে বাকিদের অসম্মান করা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের শিক্ষার্থীর কাজ না।

আর কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থীর ছত্রছায়ায় অনেক নবীন শিক্ষার্থী এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে তারা সম্মান তো দেয় ই না, পারলে যেচে এসে অপমান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর থেকে স্নাতক শেষবর্ষে অবস্থানরত শিক্ষার্থীকেও শুনতে হয় ‘সিনিয়রদের গোনার টাইম নেই’। নারী শিক্ষার্থী এ ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সম্মানহানির শিকার হয়ে থাকে। নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য সব সংগঠন, জেলার পরিচিতসহ অন্য যেকোনোভাবে পরিচিত শিক্ষার্থী ফেসবুক প্রোফাইলে যুক্ত হতে তাদের পরিচয় ব্যবহার করে। এবং কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তাদের অসম্মানজনক আচরণের।

এমন আচরণে কোনো নারী শিক্ষার্থী অসম্মানিত হলে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে সে নিরূপায়। কিছু বলতে গেলেই যে লিখিত অভিযোগ যাবে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়র লাঞ্ছিত। অথচ জুনিয়র কর্তৃক সিনিয়রের এ রকম লাঞ্ছনার কোনো বিচার নেই। বাধ্য হয়েই মান সম্মানের কথা ভেবে মুখ বন্ধ রাখতে হয় নারী শিক্ষার্থীকে। তাই সিনিয়র-জুনিয়র চেইন রক্ষার্থে, নিজ বিভাগের সম্পর্ক ঠিক রাখতে, নারী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

হুমায়রা আঞ্জুম

বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২ , ২২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

জুনিয়র-সিনিয়র সংকটের শেষ কোথায়

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের মুক্ত বিচরণ কেন্দ্র। প্রতি বছর দেশের ভিন্ন অঞ্চল, ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন অবস্থান থেকে আসা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সবাই যে সমমনা হবে এমনটা নয়। তারা সবরকম শিক্ষা পরিবার বা পরিবেশ থেকে নিয়ে আসবে এটাও আশা করা নিতান্তই বোকামি। সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে, একটু আধটু খুনশুটি হবে, ভাইবোনের দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে উঠবে, সবাই মিলে দোষে-ভুলে একটা পরিবার হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কাটিয়ে দেবেÑএটাই থাকে অধিকাংশের প্রত্যাশা।

ছোট ভাইবোনদের আচরণে, চলাফেরাতে ভুল থাকবেই, বড় ভাইবোনদের আচরণেও ভুল হয়েই থাকে। কারণ, প্রতিটি মানুষই ভুল করে। তবে তাদের শাসন করা, ভুল ধরিয়ে দেওয়া কিংবা পরবর্তী সময়ে আপত্তিজনক কোনো আচরণ করতে না বলার সামান্য অধিকারটুকু না থাকাটা বর্তমানে অধিকাংশ সিনিয়রদের জন্য অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার সঙ্গে সবার সখ্যতা গড়ে ওঠে না। তাই বলে যার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তাকে সম্মান করে বাকিদের অসম্মান করা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের শিক্ষার্থীর কাজ না।

আর কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থীর ছত্রছায়ায় অনেক নবীন শিক্ষার্থী এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে তারা সম্মান তো দেয় ই না, পারলে যেচে এসে অপমান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর থেকে স্নাতক শেষবর্ষে অবস্থানরত শিক্ষার্থীকেও শুনতে হয় ‘সিনিয়রদের গোনার টাইম নেই’। নারী শিক্ষার্থী এ ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সম্মানহানির শিকার হয়ে থাকে। নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য সব সংগঠন, জেলার পরিচিতসহ অন্য যেকোনোভাবে পরিচিত শিক্ষার্থী ফেসবুক প্রোফাইলে যুক্ত হতে তাদের পরিচয় ব্যবহার করে। এবং কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তাদের অসম্মানজনক আচরণের।

এমন আচরণে কোনো নারী শিক্ষার্থী অসম্মানিত হলে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে সে নিরূপায়। কিছু বলতে গেলেই যে লিখিত অভিযোগ যাবে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়র লাঞ্ছিত। অথচ জুনিয়র কর্তৃক সিনিয়রের এ রকম লাঞ্ছনার কোনো বিচার নেই। বাধ্য হয়েই মান সম্মানের কথা ভেবে মুখ বন্ধ রাখতে হয় নারী শিক্ষার্থীকে। তাই সিনিয়র-জুনিয়র চেইন রক্ষার্থে, নিজ বিভাগের সম্পর্ক ঠিক রাখতে, নারী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

হুমায়রা আঞ্জুম