ঈদুল আজহার আর মাত্র দুইদিন বাকি। গ্রামে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য শেষ মুহূর্তে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। তবে ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে দীর্ঘ যানজট, পরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় পথে পথে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রবেশমুখ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে। তিন মহাসড়কের গাড়ির চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। সড়কে এলোমেলো গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী উঠানো, সড়ক দখল করে দোকান বসানো ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।
সড়কে বাস রেখে যাত্রী উঠানোর কারণে সাভার ও আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড (ঢাকা-আশুলিয়া) ও ঢাকা-আরিচা মহাড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল গ্রামমুখী যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও দ্বিগুণ হয়। বিকেলের দিকে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল বিভিন্ন টার্মিনালে।
গার্মেন্টস ছুটিতে যাত্রী বেড়েছে লঞ্চে
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকালের দিকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও বিকেলের দিকে তা অনেক গুণ বেড়ে যায়। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীবোঝাই করে টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ডেকের যাত্রী পূর্ণ থাকলেও কেবিনে যাত্রী ছিল কিছুটা কম। চাঁদপুর ও ঢাকা-বরিশাল লোকাল রুটে লঞ্চে যাত্রী চাপ থাকলেও বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, আমতলী, বরগুনা ও হুলারহাটসহ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কম দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ-ট্রা) মো. শহীদুল্লাহ সংবাদকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরের দিকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে তা অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ৯০টি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীবোঝাই ছিল।’
এ বিষয়ে এমভি ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন আল রশিদ বলেন, ‘ঈদের ৩ থেকে ৪ দিন আগে থেকে টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এবার টার্মিনালে ভিন্ন চিত্র। টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। এতে লঞ্চের মালিকেরা চিন্তিত। সকালে যাত্রী কম ছিল। তবে দুপুরের পর গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় কিছুটা যাত্রী বেড়েছে।
নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কমেছে। কিন্তু ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য লঞ্চে পারাপারে আমাদের প্রস্তুতির কমতি নেই।’
সড়ক পথে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি
পদ্মা সেতুর চালুর ফলে নৌ-পথে যাত্রী চাপ কম থাকলেও সড়ক ছিল প্রচন্ড ভিড়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। তবে পরিবহন সংকট থাকায় অনেকেই পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপভ্যানে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। তবে ঢাকা বের হওয়ার পথে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি পাহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানা।
বরিশালের অনেক যাত্রী বাসের টিকেট না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফেরতে দেখা গেছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে বরিশাল যাবো। তাই বাসের টিকেটের জন্য সায়েদাবাদে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি টিকেট নেই। বাধ্য হয়ে আবার সদরঘাটে যাচ্ছি। লঞ্চে যেতে হবে।’
পবিরহন সংকটরে কারণে অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়িতে যেতে পারেনি। তাই গতকাল যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা যায় গ্রামমুখো মানুষের দীর্ঘ জটলা। বরিশাল, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাসের অপেক্ষা অনেক যাত্রী।
সাইদুল ইসলাম নামের শরীয়তপুরের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী মোড়ে দুপুর থেকে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। কিন্তু কোন বাস নেই। কাউন্টারে থেকে বলা হচ্ছে টিকেট বিক্রি শেষ। তাই এখন অপেক্ষা লোকাল বাসে বাড়িতে যাবো। ভাড়া একটু বেশি নিবে। তবুও যেতে হবে।’
সুমন নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে বাড়ি যাবো। সে জন্য যাত্রাবাড়ী মোড়ে বাসের অপেক্ষা করছি। বাস নেই। তাই ইলিশ পরিবহনে মাওয়া যাবো। সেখান থেকে অন্যবাসে বরিশাল যাবো।’
পথে পথে যানজট
ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে সড়ক দখল করে যাত্রী উঠানোর কারণে গতকাল বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঘরমুখো মানুষরা ভোগান্তিতে পড়ে বলে স্থানীয়রা জানান।
গতকাল নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের দুই লেনে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে জিরানি পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে বাইপাইল থেকে জামগড়া ও ধাউর থেকে আশুলিয়া বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
মাসুদ নামের সাভারের এক যাত্রী জানান, ‘গতকাল দুপুর ১টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক কবিরপুর থেকে বাইপাইলের আসতে সময় গেল ৩ ঘণ্টা। প্রতিদিন যেখানে বাইপাইল আসতে লাগে ৭ থেকে ১০ মিনিট। সেখানে আমাদের আজকে লাগলো ৩ ঘণ্টারও বেশি।’
ঢাকা উত্তর ট্রাফিক ইনর্চাজ (প্রশাসন) আবদুস সালম বলেন, ‘রাস্তায় প্রচুুর পরিমাণে গাড়ির চাপ রয়েছে। অধিকাংশ পোশাক কারখানায় ছুটি হয়েছে। তাই সবাই বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় এসেছে। এছাড়া যাত্রীবাহী বাসগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানোর কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে।’
ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে যাতায়াত
পরিবহন সংকটের কারণে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অনেকেই। বাস না পাওয়ায় ঢাকার সাভারের নবীনগর, বাইপাইল ও জিরানীবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে অধিকাংশ মানুষ ট্রাকে করে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।
মিলন নামের মানিকগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, ‘গাড়ির ভাড়া অনেক বেশি, আর টিকেটও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বাড়ি ফেরার ভরসা হলো ট্রাক। এই ট্রাক না থাকলে হয়ত বছর শেষে বাচ্চাদের মুখ দেখা হতো না, হতো না পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ। ট্রাকে ভাড়াও কম আর সহজলভ্যও। সহজেই পাওয়া যাচ্ছে ট্রাক।’
নবীনগর থেকে পিকআপে করে আরিচা ফেরিঘাট পর্যন্ত যাবেন আলী আযম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘ঈদে ভোগান্তি হবে ভেবে পরিবারকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। চাকরি করার কারণে টিকেট করতে পারি নাই। আজ এসে দেখি গাড়ি সব রিজার্ভ। বাইরের যাত্রীদের ওঠার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে পিকআপে উঠেছি। আর ভোগান্তি না হলে ঈদ মনে হয় না। একটু ভোগান্তি হলেও তো মা-বাবা ভাই-বোন সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’
পারভেজ নামের এক ট্রাকচালক বলেন, ‘ট্রাকে যাত্রী না তুলতে চাইলেও তারা জোর করে উঠছেন। অবশেষে যাত্রী নিতে বাধ্য হচ্ছি। যাত্রীরা তো গাড়ি না পেলে ট্রাকে উঠবেই। এটা তো অপরাধের কিছু দেখছি না। ভাড়াও নিচ্ছি কম। বগুড়ার ভাড়া বাইপাইল থেকে নিচ্ছি ৫০০ টাকা। আর বগুড়ায় গাড়িতে গেলে যাত্রীদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। অনেক যাত্রীই ফিরে এসে আমাদের ট্রাকে উঠেছেন। তারাই গাড়ির ভাড়ার কথা আমাদের জানালেন।’
সাপ্তাহিক ও ঈদুল আজহার ছুটি আজ থেকে শুরু, গতকালই অফিস আধাবেলা শেষ করেই রাজধানীবাসী ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়েন -সংবাদ
আরও খবরশুক্রবার, ০৮ জুলাই ২০২২ , ২৪ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলহজ ১৪৪৩
ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ
সাপ্তাহিক ও ঈদুল আজহার ছুটি আজ থেকে শুরু, গতকালই অফিস আধাবেলা শেষ করেই রাজধানীবাসী ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়েন -সংবাদ
ঈদুল আজহার আর মাত্র দুইদিন বাকি। গ্রামে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য শেষ মুহূর্তে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। তবে ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে দীর্ঘ যানজট, পরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় পথে পথে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রবেশমুখ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে। তিন মহাসড়কের গাড়ির চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। সড়কে এলোমেলো গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী উঠানো, সড়ক দখল করে দোকান বসানো ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।
সড়কে বাস রেখে যাত্রী উঠানোর কারণে সাভার ও আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড (ঢাকা-আশুলিয়া) ও ঢাকা-আরিচা মহাড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল গ্রামমুখী যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও দ্বিগুণ হয়। বিকেলের দিকে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল বিভিন্ন টার্মিনালে।
গার্মেন্টস ছুটিতে যাত্রী বেড়েছে লঞ্চে
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকালের দিকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও বিকেলের দিকে তা অনেক গুণ বেড়ে যায়। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীবোঝাই করে টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ডেকের যাত্রী পূর্ণ থাকলেও কেবিনে যাত্রী ছিল কিছুটা কম। চাঁদপুর ও ঢাকা-বরিশাল লোকাল রুটে লঞ্চে যাত্রী চাপ থাকলেও বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, আমতলী, বরগুনা ও হুলারহাটসহ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কম দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ-ট্রা) মো. শহীদুল্লাহ সংবাদকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরের দিকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে তা অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ৯০টি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীবোঝাই ছিল।’
এ বিষয়ে এমভি ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন আল রশিদ বলেন, ‘ঈদের ৩ থেকে ৪ দিন আগে থেকে টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এবার টার্মিনালে ভিন্ন চিত্র। টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। এতে লঞ্চের মালিকেরা চিন্তিত। সকালে যাত্রী কম ছিল। তবে দুপুরের পর গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় কিছুটা যাত্রী বেড়েছে।
নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কমেছে। কিন্তু ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য লঞ্চে পারাপারে আমাদের প্রস্তুতির কমতি নেই।’
সড়ক পথে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি
পদ্মা সেতুর চালুর ফলে নৌ-পথে যাত্রী চাপ কম থাকলেও সড়ক ছিল প্রচন্ড ভিড়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। তবে পরিবহন সংকট থাকায় অনেকেই পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপভ্যানে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। তবে ঢাকা বের হওয়ার পথে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি পাহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানা।
বরিশালের অনেক যাত্রী বাসের টিকেট না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফেরতে দেখা গেছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে বরিশাল যাবো। তাই বাসের টিকেটের জন্য সায়েদাবাদে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি টিকেট নেই। বাধ্য হয়ে আবার সদরঘাটে যাচ্ছি। লঞ্চে যেতে হবে।’
পবিরহন সংকটরে কারণে অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়িতে যেতে পারেনি। তাই গতকাল যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা যায় গ্রামমুখো মানুষের দীর্ঘ জটলা। বরিশাল, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাসের অপেক্ষা অনেক যাত্রী।
সাইদুল ইসলাম নামের শরীয়তপুরের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী মোড়ে দুপুর থেকে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। কিন্তু কোন বাস নেই। কাউন্টারে থেকে বলা হচ্ছে টিকেট বিক্রি শেষ। তাই এখন অপেক্ষা লোকাল বাসে বাড়িতে যাবো। ভাড়া একটু বেশি নিবে। তবুও যেতে হবে।’
সুমন নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে বাড়ি যাবো। সে জন্য যাত্রাবাড়ী মোড়ে বাসের অপেক্ষা করছি। বাস নেই। তাই ইলিশ পরিবহনে মাওয়া যাবো। সেখান থেকে অন্যবাসে বরিশাল যাবো।’
পথে পথে যানজট
ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে সড়ক দখল করে যাত্রী উঠানোর কারণে গতকাল বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঘরমুখো মানুষরা ভোগান্তিতে পড়ে বলে স্থানীয়রা জানান।
গতকাল নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের দুই লেনে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে জিরানি পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে বাইপাইল থেকে জামগড়া ও ধাউর থেকে আশুলিয়া বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
মাসুদ নামের সাভারের এক যাত্রী জানান, ‘গতকাল দুপুর ১টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক কবিরপুর থেকে বাইপাইলের আসতে সময় গেল ৩ ঘণ্টা। প্রতিদিন যেখানে বাইপাইল আসতে লাগে ৭ থেকে ১০ মিনিট। সেখানে আমাদের আজকে লাগলো ৩ ঘণ্টারও বেশি।’
ঢাকা উত্তর ট্রাফিক ইনর্চাজ (প্রশাসন) আবদুস সালম বলেন, ‘রাস্তায় প্রচুুর পরিমাণে গাড়ির চাপ রয়েছে। অধিকাংশ পোশাক কারখানায় ছুটি হয়েছে। তাই সবাই বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় এসেছে। এছাড়া যাত্রীবাহী বাসগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানোর কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে।’
ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে যাতায়াত
পরিবহন সংকটের কারণে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অনেকেই। বাস না পাওয়ায় ঢাকার সাভারের নবীনগর, বাইপাইল ও জিরানীবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে অধিকাংশ মানুষ ট্রাকে করে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।
মিলন নামের মানিকগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, ‘গাড়ির ভাড়া অনেক বেশি, আর টিকেটও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বাড়ি ফেরার ভরসা হলো ট্রাক। এই ট্রাক না থাকলে হয়ত বছর শেষে বাচ্চাদের মুখ দেখা হতো না, হতো না পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ। ট্রাকে ভাড়াও কম আর সহজলভ্যও। সহজেই পাওয়া যাচ্ছে ট্রাক।’
নবীনগর থেকে পিকআপে করে আরিচা ফেরিঘাট পর্যন্ত যাবেন আলী আযম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘ঈদে ভোগান্তি হবে ভেবে পরিবারকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। চাকরি করার কারণে টিকেট করতে পারি নাই। আজ এসে দেখি গাড়ি সব রিজার্ভ। বাইরের যাত্রীদের ওঠার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে পিকআপে উঠেছি। আর ভোগান্তি না হলে ঈদ মনে হয় না। একটু ভোগান্তি হলেও তো মা-বাবা ভাই-বোন সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’
পারভেজ নামের এক ট্রাকচালক বলেন, ‘ট্রাকে যাত্রী না তুলতে চাইলেও তারা জোর করে উঠছেন। অবশেষে যাত্রী নিতে বাধ্য হচ্ছি। যাত্রীরা তো গাড়ি না পেলে ট্রাকে উঠবেই। এটা তো অপরাধের কিছু দেখছি না। ভাড়াও নিচ্ছি কম। বগুড়ার ভাড়া বাইপাইল থেকে নিচ্ছি ৫০০ টাকা। আর বগুড়ায় গাড়িতে গেলে যাত্রীদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। অনেক যাত্রীই ফিরে এসে আমাদের ট্রাকে উঠেছেন। তারাই গাড়ির ভাড়ার কথা আমাদের জানালেন।’