শিক্ষক টিংকুসহ কলেজ পরিচালনা পরিষদকে শোকজ, আসামি রনির ছাত্রত্ব বাতিল

নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেনস্তার ঘটনায় ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকুসহ পরিচালনা পরিষদকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রহমত উল্লাহ রনির ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।

বুধবার (৬ জুন) রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘটনার দিন নেতিবাচক ভূমিকা রাখায় মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকু এবং নির্লিপ্ততার জন্য কলেজ পরিচালনা পরিষদকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- সে মর্মে দ্রুত সময়ের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নড়াইলে অধ্যক্ষ হেনস্তার ঘটনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৮ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জমান। গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জনসংযোগ দপ্তর) পরিচালক আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকু বলেন, শোকজের বিষয়টি শুনেছি। চিঠি পেলে জবাব দেব।

কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, শোকজের কোন কাগজপত্র পাইনি। পেলে জবাব দেয়া হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মাহমুদুর রহমান বলেন শাওন, মনিরুল, রিমন ও রনির তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামি নূরনবীর বিরুদ্ধে তিন দিনের রিমান্ড গত বুধবার শুরু হয়েছে। শুক্রবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত চলবে। ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এদিকে, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিতসহ সহিংসতার ঘটনায় ১৭০ জনের নামে গত ২৭ জুন মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলায় সদর থানার ওসি শওকত কবির ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিনকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেইসবুক আইডিতে ভারতের বির্তকিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লিখেন-‘প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম।’ এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসে রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মোছেনি রাহুল।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।

শুক্রবার, ০৮ জুলাই ২০২২ , ২৪ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলহজ ১৪৪৩

নড়াইলে অধ্যক্ষ হেনস্তা

শিক্ষক টিংকুসহ কলেজ পরিচালনা পরিষদকে শোকজ, আসামি রনির ছাত্রত্ব বাতিল

প্রতিনিধি, নড়াইল

নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেনস্তার ঘটনায় ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকুসহ পরিচালনা পরিষদকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রহমত উল্লাহ রনির ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।

বুধবার (৬ জুন) রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘটনার দিন নেতিবাচক ভূমিকা রাখায় মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকু এবং নির্লিপ্ততার জন্য কলেজ পরিচালনা পরিষদকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- সে মর্মে দ্রুত সময়ের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নড়াইলে অধ্যক্ষ হেনস্তার ঘটনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৮ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জমান। গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জনসংযোগ দপ্তর) পরিচালক আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকু বলেন, শোকজের বিষয়টি শুনেছি। চিঠি পেলে জবাব দেব।

কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, শোকজের কোন কাগজপত্র পাইনি। পেলে জবাব দেয়া হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মাহমুদুর রহমান বলেন শাওন, মনিরুল, রিমন ও রনির তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামি নূরনবীর বিরুদ্ধে তিন দিনের রিমান্ড গত বুধবার শুরু হয়েছে। শুক্রবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত চলবে। ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এদিকে, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিতসহ সহিংসতার ঘটনায় ১৭০ জনের নামে গত ২৭ জুন মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলায় সদর থানার ওসি শওকত কবির ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিনকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেইসবুক আইডিতে ভারতের বির্তকিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লিখেন-‘প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম।’ এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসে রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মোছেনি রাহুল।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।